সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরিধান করা নাজায়িয:
আকবর যে “দ্বীনে ইলাহী” প্রতিষ্ঠা করেছিল হিন্দুরাও তার সদস্য ছিল। হিন্দুরা তাদের চিরাচরিত প্রথানুযায়ী খোলা শরীরে শাসকের দরবারে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু শাসক আকবর এবং তার সভাসদের কারো কারো নিকট তা মর্যাদাহানিকর মনে হতো। তাই শাসক আকবর হিন্দুদের খোলা শরীরে এবং খালি মাথায় শাহী দরবারে আসতে নিষেধ করলো। তখন হিন্দুরা শলা-পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলো তারা পোশাক পরেই শাহী দরবারে যাবে। তবে মুসলমানদের পোশাক পরে নয়। সেটা হবে মুসলমানদের খিলাফ; স্বতন্ত্র এক পোশাক।
স্মর্তব্য যে, মুশরিক তথা হিন্দুরা যে মুসলমানদের চিরশত্রু তা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اليَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا.
অর্থ: “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে। “ (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)
মুসলমানদের সাথে ইহুদী-মুশরিকদের শত্রুতা চিরদিনের। তারা কখনো মুসলমানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে না বরং সবসময় বিরোধীতায় লিপ্ত। শত্রুতাবশতঃ প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের বিপরীত কাজ করে থাকে। তাই মুসলমানদের চিরশত্রু সেই হিন্দু সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো তারা মুসলমানদের মত লম্বা ও ঢিলা ঢালা জামা পরিধান করবে না। আর ইহুদী-নাছারাদের মত শার্ট, প্যান্ট, টাইও পরবে না। তারা কোনা ফাঁড়া খাটো পাঞ্জাবী পরিধান করবে। তাতে ধুতির লেজ পাঞ্জাবীর পকেটে রাখতে সহজ হবে। আর টুপি হবে দোপাট্টা বা কিস্তি। যেমন সিদ্ধান্ত তেমনি কাজ। তখন থেকে হিন্দুরা কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী এবং দোপাট্টা বা কিস্তি টুপি পরে আকবরের শাহী দরবারে যাতায়াত করতে থাকে। অদ্যাবধি হিন্দুরা সেই কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী এবং ধুতিকে অত্যন্ত সম্মানজনক ও সম্ভ্রান্ত পোশাক মনে করে বিধায় কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরে ধুতির লেজ কোনার ফাঁক দিয়ে পকেটে রেখে দিতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
কাজেই কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী যত লম্বাই হোক না কেন তা পরিধান করলে সুন্নত আদায় তো হবেই না বরং জায়িযই হবে না। আর তাকে সুন্নত বললে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ হওয়ার কারণে কুফরী হবে।
ক্বমীছের গেরেবান আটকানো গুটলী কাপড়ের তৈরী হওয়াই খাছ সুন্নত। যাকে আরবীতে বলা হয় زِرٌّ যিররুন। এর বহুবচন اَزْرَارٌ আযরারুন ও زُرُوْرٌ যুরূরুন। যার অর্থ হলো, গুটলী, কাপড়ের তৈরী গুটলী ইত্যাদি।
“আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, শামায়িলুত তিরমিযী শরীফ” উনার ‘লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে-
حَدَّثَنَا حَضْرَةْ اَلنُّفَيْلِىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَاَحْـمَدُ بْنُ يُوْنُسَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَا حَدَّثَنَا حَضْرَةْ زُهَيْرٌ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا حَضْرَةْ عُرْوَةُ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ حَضْرَةْ اِبْنُ نُفَيْلِ ابْنُ قُشَيْرٍ اَبُوْ مَهْلِ الْـجُعْفِىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا حَضْرَةْ مُعَاوِيَةُ بْنُ قُرَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَنَا اَبِىْ قَالَ اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ رَهْطٍ مِّنْ مُّزَيْنَةَ فَبَايَعْنَاهُ وَاِنَّ قَمِيْصَه لَمُطْلَقُ الْاِزْرَارِ قَالَ فَبَايَعْنَاهُ ثُـمَّ اَدْخَلْتُ يَدِىْ فِىْ جَيْبِ قَمِيْصِهِ فَمَسَيْتُ الْـخَاتَـمَ.
অর্থ: “হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত নুফাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আহমদ বিন ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা। উনারা দু’জন বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত উরওয়াহ বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। হযরত ইবনু নুফাইল ইবনে কুশাইর আবূ মাহাল জু’ফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা (হযরত কুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)। তিনি বলেছেন, আমি একদা মুযাইনা গোত্রের একদল লোকের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আসলাম এবং উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাত মুবারক-এ অর্থাৎ হাত মুবারক-এ বাইয়াত হলাম। সে সময় উনার ক্বমীছ মুবারক-এর কাপড়ের গুটলী খোলা ছিলো। রাবী বলেন, আমরা উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত গ্রহণের পর, আমি আমার হাতখানা উনার ক্বমীছ বা জামা মুবারক-এর গেরেবানের ভিতর ঢুকালাম এবং মোহরে নুবুওওয়াত স্পর্শ করলাম। ”
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “আউনুল মা’বূদ শরহে আবূ দাউদ” কিতাবে উল্লেখ আছে, “যা ক্বমীছে বা কোর্তায় লাগানো হয় তাকেই যিররুন বা কাপড়ের গুটলী বলে। যেমন, কামূসে বলা হয়েছে, ‘ছিরাহ’ কিতাবে রয়েছে, زِرٌّ যিররুনকে যেরসহ পড়তে হবে। যার অর্থ হলো, যা দ্বারা গেরেবানকে আটকানো হয়। হিন্দি ভাষায় যাকে ঘুনডী তথা কাপড়ের গুটলী বলা হয়।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৪)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)