ছহিবু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ
মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র হজ্জ এবং পবিত্র উমরাহ উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, হুকুম-আহকাম সম্পর্কে
, ১৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্ব প্রকাশিতের পর
فَقَامَ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَقَالَ
একজন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আক্বরা’ ইবনে হাবিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন-
أَفِـيْ كُلِّ عَامٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟
ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! প্রতি বৎসরে কি হজ্জ করা ফরয? তিনি একে একে তিনবার বললেন।
فَسَكَتَ حَتّٰى قَالَـهَا ثَلَاثًا
তিনি তিনবার বললেন। প্রতিবারে চুপ থাকলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। যখন তিনি থামলেন তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
قَالَ لَوْ قُلْتُهَا نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَوْ وَجَبَتْ لَـمْ تَعْمَلُوْا بِـهَا وَلَـمْ تَسْتَطِيْعُوْا وَالْـحَجُّ مَرَّةٌ، فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعٌ.
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তাহলে প্রতি বৎসর হজ্জ ফরয হয়ে যেত। সেটা উম্মতের জন্য কখনও পালন করা সম্ভব হতো না। তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো। পবিত্র হজ্জ হচ্ছে জীবনে একবার। ইচ্ছা করলে যে কেউ নফলও করতে পারে।
হজ্জ জীবনে একবার করা ফরয। অতিরিক্তও করতে পারে। এখন জানার বিষয় পবিত্র হজ্জ ফরয হয়েছে কবে? ৯ম হিজরীতে পবিত্র হজ্জ ফরয হয়েছে। তবে ৮ম হিজরীতেও হযরত আত্বীফ ইবনে আসিফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ যখন বিজয় করলেন, আসার সময় উনাকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার দায়িত্বে দিয়ে এসেছিলেন, অনুমতি মুবারক দিয়েছিলেন। ৯ম হিজরীতে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে আমীরুল হজ্জ করে পাঠিয়েছিলেন। এবং পরবর্তীতে কিছু নতুন হুকুম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দিয়েও পাঠিয়েছিলেন। এবং ১০ম হিজরীতে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই পবিত্র হজ্জ মুবারক করেন। সেটা সম্মানিত বিদায় হজ্জ নামে মাশহূর। সুবহানাল্লাহ! এখন তিনি পবিত্র হজ্জ মুবারক করেছেন একবার। পবিত্র উমরাহ মুবারক করেছেন চারবার। যেটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِعْتَمَرَ اَرْبَعَ عُمَرٍ كُلُّهُنَّ فِيْ ذِي الْقَعْدَةِ إِلَّا الَّتِـيْ مَعَ حَجَّتِهٖ عُمْرَةً مِّنَ الْـحُدَيْبِيَةِ أَوْ زَمَنِ الْـحُدَيْبِيَةِ فِيْ ذِي الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةً مِّنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ فِيْ ذِي الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةً مِّنْ جِعْرَانَةَ حَيْثُ قَسَمَ غَنَائِمَ حُنَيْنٍ فِيْ ذِي الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةً مَّعَ حَجَّتِهٖ.
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উমরাহ করেছেন চারবার। প্রথম করেছেন হুদাইবিয়া সন্ধি সেই বৎসর। এরপর করেছেন উমরাতুল কা¡যা ৭ম হিজরীতে। তৃতীয়বার করেছেন পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় করা হলো সেই বৎসর। এই তিনবারই করেছেন যিলক্বদ শরীফ মাসে। এবং চতুর্থবার যেটা করেছেন সেটা হচ্ছে বিদায় হজ্জ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে। মোট চারবার তিনি উমরাহ মুবারক করেছেন। একবার পবিত্র হজ্জ করেছেন।
জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। আর আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবিক উমরাহ করা হচ্ছে সুন্নত। আর বিশেষ করে পবিত্র হজ্জের যে খুছূছিয়াত ও বৈশিষ্ট রয়েছে। সে সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَىُّ الأَعْمَالِ اَفْضَلُ قَالَ اِيْـمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ جِهَادٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ ثُـمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَجٌّ مَّبْرُوْرٌ.
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো-
اَىُّ الْأَعْمَالِ اَفْضَلُ
কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
اِيْـمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
উত্তম আমল হচ্ছে যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনা এবং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনা। সুবহানাল্লাহ!
قِيْلَ ثُـمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم
এরপর তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন এরপর কোনটা ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
جِهَادٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
এরপর হচ্ছে যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রেজামন্দী হাছিলের জন্য এবং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দী হাছিলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করা। সুবহানাল্লাহ!
قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
এরপর তিনি পুনরায় আবার জিজ্ঞাসিত হলেন এরপর কোনটা ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কোন আমলটি উত্তম ও আফযল। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
حَجٌّ مَّبْرُوْرٌ
মাকবুল হজ্জ। সুবহানাল্লাহ! মকবুল হজ্জ। এখন পবিত্র হজ্জ উনার খুছূছিয়ত ও বৈশিষ্ট। পবিত্র হজ্জ জীবনে একবার করা ফরয। একাধিকবার কারো সামার্থ থাকলে সে করতে পারে। তা শর্ত সাপেক্ষে পুরা হয়ে থাকে।
যেমন একটা ওয়াক্বিয়া বলা হয়। এক বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে একটা সংবাদ দেয়া হলো যে, দূরবর্তী কোন স্থানে এক নেককার পরহেযগার লোককে কিছু ডাকাত শ্রেণীর সন্ত্রাসী শ্রেণীর লোকেরা মেরে সারা রাত্র ব্যাপী আগুন দিয়ে জ্বালিয়েছে। কিন্তু যখন সকালে আগুনটা নিভে গেল তখন দেখা গেল সেই ব্যক্তি উনার শরীরের একটা পশমও আগুনে পুড়েনি, সারা রাত্র উনাকে জ্বালানোর পরেও। সুবহানাল্লাহ! তখন সংবাদ দেয়া হলো, নিশ্চয়ই লোকটা তিনবার হজ্জ করেছে। তিনি বললেন, তিনবার হজ্জ করেছেন। যারা প্রশ্নকারী তারা খোজ নিয়ে দেখলো, সত্যিই লোকটা তিনবার হজ্জ করেছেন। তখন প্রশ্নকারী বলল, এই বুযূর্গ ব্যক্তি যে তিনবার হজ্জ করেছেন, কি করে আপনি বুঝতে পারলেন? তিনি বললেন, দেখ, কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। যে একবার হজ্জ করলো সে ফরয আদায় করলো। যে দু’বার হজ্জ করলো সে খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে করজ দিলো। আর যে তিনবার হজ্জ করলো সে নিজের জিসিমটাকে পরকাল ও ইহকালের আগুনের জন্য হারাম করে নিলো। সুবহানাল্লাহ! সে তিনবার হজ্জ করার কারণে সারা রাত্র তাকে জ্বালানোর পরেও তার একটা পশমও পুড়েনি। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই খালিছ নিয়তে কেউ যদি পবিত্র হজ্জ করে, কারো যদি হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে তার জন্য এই ফযীলত মুবারক নছীব হবে।
(অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)