মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দ্বারাও জগত পরিচালনা করেন
, ২৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্ব প্রকাশিতের পর...
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ الطَّبَرَانِىُّ فِى الْكَبِيْرِ عَنْ حَضْرَتْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِت رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ: اَلْأَبْدَال فِي أُمَّتِي ثَلَاثُوْنَ : بِهِمْ تَقُوْمُ الْأَرْضُ وَبِهِمْ تُمْطَرُوْنَ وَبِهِمْ تُنْصَرُوْنَ.
অর্থ: “হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আল মু’জামুল কবীর” কিতাবে উল্লেখ করেন। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন আবদাল সর্বদাই থাকবেন। উনাদের মাধ্যমেই যমীন কায়িম থাকবে, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে এবং উনাদের মাধ্যমে মানুষ সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। ”
বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ নামক কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا يَزَالُ اَرْبَعُوْنَ رَجُلًا يَحْفَظُ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ
অর্থ: “পৃথিবীতে এরূপ চল্লিশজন ব্যক্তি (ওলী) সর্বদাই থাকবেন। যাঁদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনকে হিফাযত করবেন। ”
উক্ত ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত প্রকার ওলীগণ উনাদের কথা উল্লেখ করার পর বলেন-
فِيْهِمْ يُـحْيِى وَيُـمِيْتُ وَيُـمْطِرُ وَيُنْبِتُ وَيَدْفَعُ الْبَلَاءَ
অর্থ: “উনাদের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকবে, মারা যাবে, বৃষ্টি পাবে, ফসল পাবে এবং বালা-মুছীবত দূর হবে। ” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে, হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ثَلَاثٌ مِّنَ الْاَبْدَالِ الَّذِيْنَ بِـهِمْ قَوَّامُ الدُّنْيَا
অর্থ: “আবদালগণ উনাদের মধ্যে এমন তিনজন রয়েছেন যাঁদের মাধ্যমে দুনিয়া কায়িম থাকবে। ” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)
হযরত ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
لَنْ تَـخْلُوَ الْاَرْضُ مِنْ اَرْبَعِيْنَ بِـهِمْ يُغَاثُ النَّاسُ وَبِـهِمْ يُنْصَرُوْنَ وَبِـهِمْ يُرْزَقُوْنَ
অর্থ: এরূপ চল্লিশজন লোক থেকে যমীন কখনো খালি থাকবে না, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে, সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (হিলইয়াতুল আউলিয়া)
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ আছে যে-
وَسَبْعَةٌ فِى سَائِرِ الْاَمْصَارِ بِهِمْ تُسْقَوْنَ الْغَيْثَ وَبِـهِمْ تُنْصَرُوْنَ عَلَى الْعَدُوِّ وَبِـهِمْ يُقِيْمُ اللهُ اَمْرَ الدُّنْيَا.
অর্থ: “সমস্ত শহরেই সাতজন এরূপ ওলী থাকেন উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি লাভ করে, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্ত হয় এবং উনাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক তিনি জগতের কার্যসমূহ সম্পাদন করেন। অর্থাৎ জগত পরিচালনা করেন। ” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)
স্মরণীয় যে, জগতখ্যাত আলিমে দ্বীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদুয্ যামান, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাব “আল হাবী লিল ফতওয়া”তে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উল্লেখ করতঃ এটাই প্রমাণ করেছেন যে, জগতে অসংখ্য গাউছ, কুতুব, আবদাল, আওতাদ, নক্বীব, নুজাবা, আখইয়ার তথা আউলিয়ায়ে কিরাম আছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। উনাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক তিনি জগত পরিচালনা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
কেননা উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহে এ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে-
(১) بِـهِمْ يُغَاثُ النَّاسُ- উনাদের মাধ্যমে মানুষ সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।
(২) تُنْصَرُوْنَ عَلَى الْعَدُوِّ- শত্রুর উপর বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।
(৩) يَدْفَعُ الْبَلَاءَ وَالْعَذَابَ- উনাদের ওসীলায় বালা-মুছীবত, আযাব-গযব দূর হবে।
(৪) يُحْيِى وَيُمِيْتُ - বেঁচে থাকবে এবং মৃত্যু হবে।
(৫) يُنْبِتُ وَيُرْزَقُوْنَ- ফসল পাবে এবং রিযিক পাবে। (৬) يُحْفَظُ الْاَرْضُ - যমীন হিফাযত থাকবে।
(৭) تَقُوْمُ الْاَرْضُ - যমীন কায়িম থাকবে। (৮) قَوَّامُ الدُّنْيَا - দুনিয়া কায়িম থাকবে।
(৯) يُقِيْمُ اَمْرَ الدُّنْيَا- জগতের কার্যাবলী সম্পাদিত হবে।
উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হাতে জগত পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ওলীগণ উনাদের মাধ্যমে জগত পরিচালনা করে থাকেন। ওলীগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবেই জগতের কার্যসমূহ সম্পাদন করে থাকেন। (সমাপ্ত)
-আল্লামা সাইয়্যিদ আবূ খুবাইব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)