নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীমকারীগণ দুনিয়া ও আখিরাত শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন
, ০৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বেশ কিছুদিন পর একজন ব্যক্তি আসলেন কুস্তি প্রতিযোগিতা করার জন্য। যখন সেই ব্যক্তি আসলেন সেই ব্যক্তির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না তিনি কখনো কুস্তি করেছেন। কুস্তিগীরেরা সাধারণভাবে যে প্রকার ছিরত ও ছূরত হয়ে থাকে তেমন কোন লক্ষণ উনার মধ্যে নেই। সেই ব্যক্তি এসে বাদশাহর দরবারে যোগাযোগ করলেন যে, তিনি বাদশাহর পালোওয়ানের সাথে কুস্তি করতে চান।
কুস্তির দায়িত্বে ছিলো তারা উনাকে দেখে বললো, আপনার ছিরত-ছূরত দেখে মনে হয়না যে, আপনি কুস্তিগীর। আর বাদশাহর কুস্তিগীর অনেক উঁচু লম্বা শক্তিশালী, কোন কুস্তিগীরই তার সাথে পারেনি। আপনি কি চিন্তা ফিকির করে কুস্তি করতে এসেছেন?
সে ব্যক্তি বললেন, যেহেতু বাদশাহ ঘোষণা দিয়েছেন বাদশাহর কুস্তিগীরকে পরাস্ত করতে পারলে তাকে এক লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা দেয়া হবে তাই আমি এসেছি। এখন পরাস্ত হওয়া আর কামিয়াবী হাছীল করা পরের কথা।
তারপর তারিখ ঘোষণা করা হলো, স্থানও নির্র্দিষ্ট করা হলো। অনেক দিন পরে নতুন করে কুস্তি হবে সেজন্য হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ লোকজন জমা হয়ে গেলো। কুস্তির ময়দানে নতুন যে ব্যক্তি এসেছেন তিনি নামলেন অন্যদিকে বাদশাহর পালোওয়ানও নামলো।
কুস্তি শুরু হওয়ার পূর্বে সেই বিদেশী যিনি এসেছেন কুস্তি করার জন্য, তিনি এসে বাদশার কুস্তিগীরের কানে কানে কিছু কথা বললেন। বাদশাহর পালোওয়ান সে ব্যক্তির কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলো। সকলে আশ্চর্য হলো যে, এ ব্যক্তি কি বললেন? বাদশাহর পালোওয়ান যে প্রদর্শনী করতো এখন চুপ হয়ে গেলো ব্যাপারটা কি? চুপ থেকে তারপর বললো, ঠিক আছে কুস্তি শুরু হোক।
যখন কুস্তি শুরু হলো তখন, বিদেশী ব্যক্তি চোখের পলকে বাদশাহর পালোওয়ানকে মাটিতে শোয়ায়ে সিনার উপর উঠে বসলেন। সুবহানাল্লাহ! সকলেই তায়াজ্জুব হয়ে গেলো যে, ব্যাপারটা কি? একবার, দুইবার, তিনবার যখন হয়ে গেলো, তখন ঘোষণা করা হলো বাদশাহর পালোওয়ান পরাজিত হয়েছে আর বিদেশী ব্যক্তি কামিয়াবী হাছিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
বাদশা তায়াজ্জুব হয়ে গেলো ব্যাপারটা কি? আজকে বাদশাহর পালোওয়ানের কি হলো, আর এই ব্যক্তি আগেই বা কি বললেন?
কুস্তি শেষ হয়ে গেলো, সেই বিদেশী ব্যক্তিকে একলক্ষ দিনার দিয়ে দেয়া হলো। সুবহানাল্লাহ!
এদিকে পালোওয়ান বাদশাহকে বললো, সে আর কোন দিন কুস্তি করবে না। যখন পালোওয়ান এ কথা বললো তখন বাদশাহর জানার বিষয় হলো কি ব্যাপার সে পরাস্ত হলো কি কারণে?
তখন সেই পালোওয়ানের বক্তব্য হলো, কুস্তি শুরু হওয়ার পূর্বে তিনি আমার কানে কানে বলেছেন, তিনি অমুক স্থান থেকে এসেছেন। তিনি একজন আওলাদে রসূল। অর্থাৎ তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন সম্মানিত আওলাদ। সুবহানাল্লাহ! এখন তিনি যে এলাকায় থাকেন তিনি হচ্ছেন সেই এলাকার প্রধান, উনার আরো বংশধর রয়েছেন। তিনি বললেন, উনাদের ব্যবসা বাণিজ্য ছিলো, অবস্থা ভালোই ছিলো। কিন্তু নানান কারণে উনারা আর্থিক অনটনে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছেন। এমতাবস্থায় সেই ব্যক্তি তিনি শুনতে পেলেন যে, বাদশাহর পালোওয়ানের সাথে কুস্তিতে কেউ জয় লাভ করতে পারলে তাকে একলক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা দেয়া হবে। তিনি চিন্তা করলেন যে, স্বর্ণ মুদ্রা যদি পাওয়া যায় তাহলে সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে উনারা সম্মান ইজ্জতের সাথে অবস্থান করতে পারবেন। সুবহানাল্লাহ! সেই চিন্তা করে তিনি এসেছেন কুস্তি করতে। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেছেন, হে বাদশাহর পালোওয়ান! তুমিতো আসলেই অনেক বড় পালোওয়ান। তোমার সাথে কেউ কুস্তি করে পারবে না এটাও সঠিক। আমি কোন কুস্তিগীর নই, তবে আমি একজন আওলাদে রসূল। তুমি বড় পালোওয়ান ও শক্তিশালী যুবক। কিন্তু একদিন তোমার এই শক্তি সামর্থ থাকবে না, তুমি বৃদ্ধ হবে তখন তোমার নামধামও থাকবে না। একটি বিষয় থাকবে অনন্তকাল ধরে, তা হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার আওলাদকে তা’যীম-তাকরীম করার প্রতিদান। সুবহানাল্লাহ! এখন তুমি কমপক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার আওলাদকে তা’যীম-তাকরীম করে কুস্তিতে আজ আমার কাছে পরাস্ত হয়ে যাও। তাহলে আমি একলক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা লাভ করবো। আমাদের এলাকায় আমরা যারা আওলাদে রসূল রয়েছি, আমাদের সকলের ইজ্জত সম্মান রক্ষা হবে এবং আমরা সকলেই তোমার জন্য দোয়া করবো। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা তোমাকে ইহকাল পরকালে কামিয়াবী দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!
তখন পালোওয়ানের বক্তব্য হচ্ছে আমি এটা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এখন আমি কি করবো? এখন আমার এতো নাম ধাম, প্রভাব প্রতিপত্তি, বাদশাহর সম্মান সারা পৃথিবীতে আমাকে এক নামে চিনে যে আমি সবচেয়ে বড় পালোওয়ান। কিন্তু আসলে তো আমার এই শক্তি সামর্থ এবং আমার এই বয়স তো একসময় থাকবে না। এখন যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার আওলাদ হিসেবে যিনি পরিচয় দিচ্ছেন উনাকে যদি সম্মান করে আমি পরাস্ত হয়ে যাই, তাহলে আমার নাম ধাম অবশ্যই নষ্ট হবে, বাদশাহও এ ধরনের কাজে দুঃখিত হবে। কিন্তু আমার যে হাক্বীক্বী কামিয়াবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দী সন্তুষ্টি মুবারক, সে নিয়ামত মুবারক আমি লাভ করতে পারবো। সুবহানাল্লাহ! এ চিন্তা করে আমি স্বেচ্ছায় পরাস্ত হয়েছি। সুবহানাল্লাহ! যার জন্য আমার বক্তব্য, আমি জীবনে আর কখনও কুস্তি করবো না।
এখন বাদশাহর বক্তব্য হলো, কুস্তি করা বা না করা এটা পালোওয়ানের ইখতিয়ার। তবে আপনি যে পরাস্ত হলেন, উনি যে আসলেই আওলাদে রসূল তার প্রমাণ কি? তখন বাদশাহর পালোওয়ান বললেন, আমি তো সেটা বিশ্বাস করেছি। প্রমাণ চাওয়ার তো কোন সুযোগ নেই। বাদশাহর পালোওয়ান সেই রাত্র সেখানে থাকলো। সেই রাত্রেই সে পালোওয়ান স্বপ্ন দেখতে লাগলো যে, ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরিফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি এসে পালোওয়ানকে বলতেছেন হে পালোওয়ান! সে পালোওয়ানের নাম ছিলো জুনাইদ। তুমি আজকে যে কাজটা করেছো, তুমি তোমার দুনিয়াবী সমস্ত সম্মান ইজ্জত, তোমার বাদশাহর সম্মান ইজ্জত সব বিসর্জন দিয়েছো একমাত্র আমার সম্মানার্থে। সুবহানাল্লাহ! সেই ব্যক্তি আসলেই আমার আওলাদ এবং তিনি ঋণগ্রস্ত। তিনি এবং উনার অধীনস্তগণ অত্যন্ত পেরেশানিতে ছিলেন। এখন তুমি যে পরাস্ত হয়ে একলক্ষ স্বর্ণ মুদ্রার ব্যবস্থা করে দিলে, সেজন্য আমি কিন্তু তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছি। সুবহানাল্লাহ! তুমি তো পালোয়ানদের প্রধান ছিলে। আমি আজ থেকে তোমার লক্বব দিলাম ‘সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা’। সুবহানাল্লাহ! আমি তোমাকে সমস্ত দরবেশ আউলিয়া কিরাম উনাদের প্রধান করে দিলাম। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পালোওয়ানকে রেযামন্দী সন্তুষ্টির বিষয়টি জানিয়ে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।’ সুবহানাল্লাহ!
পালোওয়ান ঘুম থেকে উঠে ইস্তিগফার তাওবা করে প্রতিজ্ঞা করলো জীবনে আর কখনও কুস্তি করবে না। বাদশাহকে বিষয়টা জানানো হলো যে, যিনি আওলাদে রসূল দাবী করেছেন, উনার দাবী সত্য। পালোওয়ান যে পরাস্ত হয়ে তার ইজ্জত সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে, উনার আওলাদ উনাদের সম্মান করার জন্যে। সুবহানাল্লাহ! তিনি যে মুবারক রেযামন্দি চেয়েছেন, তা তিনি লাভ করেছেন। সত্যিই পালোওয়ান পরবর্তী সময় রিয়াজত মাশাক্কাত করে খালিছ অলীআল্লাহ হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)