নিশ্চয়ই পবিত্র হাজরে আসওয়াদ এবং মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ হচ্ছেন বেহেশতের দু’টি মরকত মণি
, ৩০ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কা’বা শরীফের একটি বরকতময় নিদর্শন হলো- পবিত্র মাক্বামে ইবরাহীম। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এটাকে প্রকৃষ্ট নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি পাথরের নাম মাক্বামে ইবরাহীম। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এই পাথরের উপরে দাঁড়িয়েই কা’বা শরীফ উনার সম্মানিত ঘর মুবারক নির্মাণ করেছিলেন। নির্মাণের সময় প্রয়োজনমত পাথরটি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিসহ উপরে অথবা নীচে উঠা-নামা করতো। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পদচিহ্ন সেই পাথরে এখনো বিদ্যমান আছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীরে হযরত আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, পাথরটি প্রথমদিকে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনার সাথে সংলগ্ন ছিল। পরবর্তীকালে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফত মুবারককালে “মাক্বামে ইবরাহীম”-কে একটু পূর্বদিকে সরিয়ে রাখেন, যাতে করে তাওয়াফকারীগণের কোন অসুবিধা না হয়। যমযম কূপের নিকট একটি কক্ষে সংরক্ষণের সুবিধার্থে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে মাক্বামে ইবরাহীম উনাকে একটি কাঁচ পাত্রের মধ্যে করে রাখা হয়েছে। তিরমিযী শরীফ কিতাবের মধ্যে মাক্বামে ইবরাহীম উনার ফযীলত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই হাজরে আসওয়াদ এবং মাক্বামে ইবরাহীম বেহেশতের দু’টি মরকত মণি। মহান আল্লাহ পাক তিনি এই নিদর্শনসমূহের উজ্জ্বল্য কমিয়ে দিয়েছেন। কেননা যদি এই দু’টি বরকতময় বস্তুর উজ্জ্বলতাকে কমিয়ে না দিতেন, তবে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী যাবতীয় পদার্থকে আলোকিত করে দিত।
এছাড়া আরো একটি বরকতময় নিদর্শন হলো- পবিত্র হাজরে আসওয়াদ শরীফ। যা “হাজরে আসওয়াদ” বা “কালো পাথর” নামে আমাদের নিকট পরিচিত। তাওয়াফ করার সময় হাজীগণ বরকতের কারণে এটাকে চুম্বন করে থাকেন।
পবিত্র হাজরে আসওয়াদ নিয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ ঘেটে দেখলে এর সত্যতা উপলব্ধি করা যায়।
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আবেস বিন রাবেয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করতে দেখেছি। তিনি বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই আমি জানি তুমি একখানা পাথরমাত্র, কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা তোমার নেই। যদি আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম, তবে কখনোই আমি তোমায় চুম্বন করতাম না। ” এ কথা বলে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চুম্বন করতে থাকেন। তখন হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন! ‘হাজরে আসওয়াদ’ উপকার বা অপকার উভয়ই করতে পারে। ”
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তা কিরূপে?” হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক আলমে আরওয়াহ্তে যখন সমস্ত বনী আদমের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন, তখন উনার একটি পূর্ণ তালিকা তৈরী করা হয়েছিল। সেই পূর্ণ তালিকাটি পবিত্র হাজরে আসওয়াদ গ্রাস করেছিল। ওটা এখন ঈমানদারদের অঙ্গীকার পূরণ করার পক্ষে এবং কাফেরদের অঙ্গীকার পূরণ না করার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। ” (এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন)
তিরমিযী শরীফে আরো একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার উপরোক্ত বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। তা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি হাজরে আসওয়াদকে দু’টি চক্ষু দান করবেন, তার দ্বারা সে দেখতে পাবে এবং একটি জিহবা দান করবেন, যার দ্বারা সে কথা বলবে। যারা আন্তরিকতার সাথে তাকে চুম্বন করেছে, তাদের সম্বন্ধে সে সাক্ষ্য দিবে। ”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়ই হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতেন। তাই কেউ যদি সুন্নত মুবারকের খেয়ালে এটা চুম্বন করে, তাহলে সে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে অশেষ রহমত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করবে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি সুন্নত মুবারক আদায় করার ফযীলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)