জীবানু অস্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের জাতি নিধনের ষড়যন্ত্র (৪)
, ০৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১২, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জীবানু অস্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের জাতি নিধনের আলোচনা করতে গিয়ে ইবোলা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা না করলে আমার বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
অনেকগুলো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ইবোলা ভাইরাস তৈরি করা হয়। তবে প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো, গণহত্যার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি করে রেড ক্রসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেররিজমের অন্যতম একটি হাতিয়ার। এগুলো ছড়ানোর পরপরই এজেন্টরা হাজির হয়ে যায় শাসক শ্রেণীর কাছে। পরিণতির ভয়াবহতা তুলে ধরে অনুগত করে রাখে শাসক শ্রেণীকে। কিন্তু জনগণের সকলেতো আর বোকা নয়। বিদেশীদের মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার বিষয়টি জানাজানি হবার পর তীব্র গণঅসন্তোষ দেখা দেয় আফ্রিকাতে। সবচেয়ে বেশী ইবোলা ভাইরাস আক্রমণের ঘটনা পাওয়া যায় পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ সেরেলিওনে। গরীব বলে মনে হয় বুর্জুয়ারা শ্রেণীরা তাদের মানুষ না মনে করে গিনিপিগ ভাবে। নাউযুবিল্লাহ! এটিও স্মলপক্স এবং হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন দেয়ার নাম করে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ২০০০ সালে উগান্ডাতে ২২৪ জন মানুষ মারা যায়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স থেকেও অনেক রোগীকে পালাতে দেখা যায়। সাদা চামড়ার স্বাস্থ্যকর্মী দেখলে তারা তাদেরকে ভাইরাসের চেয়ে বেশী ক্ষতিকর মনে করতো। ২০১৪ সালে লাইবেরিয়া, গিনি ও সেরেলিওনে ২৭ হাজারের বেশী মানুষ ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং তার মধ্য থেকে ১১ হাজারের বেশী মানুষ মারা যায়। (হয়তো বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশী)
১৯৮১ সালে ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবাতে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টেস্ট করেছিলো। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে প্রস্তুত একক স্ট্রেইনের (ঝরহমষব ঝঃৎধরহ) ভাইরাস। এই জ্বরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এমন কি প্যারালাইসিসও হতে পারে। জয়েন্টে ব্যাথা হয় যা সারতে অনেকের ২ বছরেরও বেশী সময় লেগে যেতে পারে। এই ভাইরাস নিয়ে পত্রিকায় যখন আমাদের চিকিৎসকগণ লেকচার দেয় “চিন্তিত হবার মত কিছু নয়” তা শুনে আমার বেশ হাসিই পায়। এদের অনেকেরই নেপথ্য কারণগুলো জানা নেই। আর সে কারণে কেবল বিষয়টি উপলব্ধির জন্য আমি অন্যান্য ভাইরাসগুলোর আলোচনা এযাবত টেনে এনেছি। একটি ভাইরাস ছড়ানোর মধ্যে আজকাল কেবল ক্লাইমেট চেঞ্জের বিষয় জড়িত থাকে না। জড়িত থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, গবেষণার উদ্দেশ্য, মুনাফার উদ্দেশ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্য এমনকি জাতি নিধনের উদ্দেশ্য।
কিছুদিন পর চিকুনগুনিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে আবির্ভাব হবে কথিত বন্ধু দেশ ভারত (হয়তো নেপথ্যে অন্যদেশ)। সেই ভ্যাকসিনে আরও ছড়িয়ে দেয়া হবে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (যেমনি ছড়ানো হয়েছিলো, এইডস, যিকা, ইবোলা ইত্যাদি)। গবেষণায় নেমে যাবে ওঈউউজইসহ অনেক সংস্থা। দেখা হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ নামের গিনিপিগের শরীরের ইমিউন সিস্টেমে (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) কি প্রভাব পড়ে। তারপর হয়তো একদিন সত্যই তৈরি হবে আসল ভ্যাকসিন যা নিয়ে কাড়ি কাড়ি মুনাফা লুফে নেবে দয়ার নামে হাত বাড়িয়ে দেয়া পাশ্চাত্যের ওষুধ কোম্পানীগুলো। অনেক রোগ আছে যা এডিস মশা ছড়ায় যেমন ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু, রস রিভার ফিভার, ব্রেকবোন ফিভার, নয়ং-নয়ং ফিভার, যিকা ফিভার, চিকুনগুনিয়া ফিভার ইত্যাদি। কিন্তু হায়রে মানব সভ্যতা আজ পরিকল্পিতভাবে মশাও ছড়ানো হয় কেবল জনসংখ্যা হ্রাসের অলিক স্বপ্ন নিয়ে। নাউযুবিল্লাহ!
সাম্রাজ্যবাদীদের দেশ দখল, সম্পদ লুন্ঠন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শাসক নিয়ন্ত্রণের কাজতো কেবল আফ্রিকা আর এশিয়ার দরিদ্রতম দেশ জুড়ে নয়। মধ্যপ্রাচ্যেও রয়েছে তাদের কল্পনাতীত নিয়ন্ত্রণ। আর তাই সব সময়ের জন্য অনুগত রাখার কৌশলও তাদের জানা আছে। মার্স ভাইরাস (গঊজঝ) প্রথম ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সউদী আরবে পাওয়া যায়, আর জর্ডানে পাওয়া যায় একই বছরের এপ্রিলে। গঊজঝ এর পুরো অর্থ হচ্ছে " Middle East Respiratory Syndrome ". এটি নাকি বাদুড় আর উট থেকে সংক্রমিত হয়েছে, অবাক বিষয় হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের বানানো গল্পগুলো প্রায় একইরকম যেমন বানর থেকে, ভেড়া থেকে, শূকর থেকে, বাদুড় থেকে, উঠ থেকে ছড়ায় ইত্যাদি।
একজন মিশরীয় ভাইরোলজিস্ট আলী মুহম্মদ জাকী তিনি ১৯৯৩ সালে সউদী আরবে প্রতিষ্ঠিত "Virology diagnostic laboratory" তে কাজ করতেন। একটি তথ্যে পাওয়া যায় " He first identified the virus and the politics of science that bound him leave his work in Saudi and return to Egypt. বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, তিনি প্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত করতে পারেন এবং সাথে সাথে বিজ্ঞান নিয়ে রাজনীতির চেহারাটাও তিনি দেখেন ফলে তিনি সউদী আরবে কাজ ছাড়তে বাধ্য হন এবং মিশরে ফিরে যান।
২০১৪ সালে এই মার্স ভাইরাসের অজুহাত দিয়ে সউদী সরকার হাজীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ৬০ বছরের বেশী বয়সের মানুষের হজ্জে আসতে বারণ করে দেশে দেশে চিঠি পাঠায় এবং বাংলাদেশও সেই চিঠি পায়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশী। তাহলে দেখা যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীরা বিভিন্ন মুসলিম দেশকে টেররিজমের অজুহাতে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নিজেরাই বায়োটেরোরিজমের সাহায্য নিচ্ছে।
কাফিরদের ভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বললে অনেকের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হয়, রেফারেন্স খোঁজে। অথচ বিশ্বে প্রতিদিন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে যার অন্তর্নিহিত কারণ মানুষ জানে না তার সত্য প্রকাশিত হয় অনেক পরে।
আমেরিকার ইরাক আক্রমণের কারণ কি ছিল কুয়েত দখল? নাকি ওয়েপনস অফ মাস ডেস্ট্রাকশন? কোনটাই না। আফগানিস্তানে আক্রমণের কারণ কি ছিল তারা আল কায়েদার সন্ত্রাসী? না তাও না।
ওয়াল্ডট্রেড সেন্টার কারা ধ্বংস করেছে সে সত্য এখন সবার জানা। বহির্বিশ্বের কথা বাদই দেই, আসুন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথা। আমাদের দেশের কোন জেলে তাদের নৌ-সীমায় চলে গেলে তারা ফিরে এলেও অপ্রকৃতস্ত’ থাকে। কথা বলতে পারে না। স্মৃতি বিভ্রম ঘটে। জানা গেছে মুশরিক ভারত এক ধরণের ইনজেকশন পুশ করে দেয়।
বায়োটেররিজমের জনক মার্কিন সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্র তারাই এ নিয়ে কাজ করছে আর তাদের সহযোগী হচ্ছে দখলদার পরগাছা ইসরায়েল। অনেক যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে ইসরায়েল, এখনো ফিলিস্তিনে করছে। রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি না হলে প্রয়োগ হয় কিভাবে?
ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস ক্লোনিং এ অনেক নতুন ভাইরাসের জন্মের বিষয়টি প্রায় সকলের জানা কিন্তু মিডিয়ার উপস্থাপনার কারণে ভিন্ন রকম শোনা যায়।
যাই হোক- কাফিররা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের স্বপ্নেই হোক, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কারণেই হোক বা দেশ দখলের কারণেই হোক বা মুসলমানদের সংখ্যা কমিয়ে দেবার কারণেই হোক তারা নানান পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। বিশ্বের মুসলমান উনাদের কষ্ট দিচ্ছে। ফলে এখন এদের সাথে লড়ার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বদ-দোয়া করা। যেন এদের সকল শয়তানী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, ওরা নিঃশেষ হয়ে যায়। মুসলমানদের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে বদ-দোয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী অস্ত্র। (সমাপ্ত)
-আল হিলাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)