ছহিবু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ
মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে— পবিত্র হজ্জ এবং পবিত্র উমরাহ উনাদের ফাযায়িল—ফযীলত, হুকুম—আহকাম সম্পর্কে
, ১৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৯ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একাধিক বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, হযরত আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত দাহ্ইয়াতুল কলবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যখন হুদাইবিয়ার সন্ধি হয়ে গেলো তখন কুরাইশ গোত্র হতে অনেকে এসে ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেছেন। হযরত আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত দাহ্ইয়াতুল কলবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা আলাদাভাবে তাওবাহ করার জন্য আসলেন। এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে তাওবাহ করান, তাওবাহ করে ঈমান দিয়ে মুসলমান করে নিন। উনারা হাত বাড়িয়ে আবার পিছিয়ে নিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কি হলো? আপনারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে পিছিয়ে নিলেন কেন? উনারা আলাদাভাবে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা অতীত জীবনে অনেক গুনাহখতা করেছি। এখন আমরা তাওবা করলে, ঈমান আনলে কি আমাদের গুনাহখতাগুলো ক্ষমা হবে? যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা বলেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে তিনটি কথা দিয়ে পাঠালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উনাদেরকে বলে দিন—
اِنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَه وَأِنَّ الْـهِجْرَةَ تَـهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأِنَّ الْـحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَه
একটা হচ্ছে: নিশ্চয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম যখন কেউ গ্রহণ করে, কবুল করে, মুসলমান হয় তখন তার পিছনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! দ্বিতীয়ত: মানুষ যখন হিজরত করে তখন তার জীবনের পিছনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! তৃতীয়ত: বলা হয়েছে, যখন কেউ হজ্জ করে, অর্থাৎ হজ্জে মাবরূর করবে তখন তার জীবনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! তবে শর্ত হচ্ছে হজ্জে মাবরূর করা।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে—
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِـيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يـَحُجُّ اَغْنِيَاءُ النَّاسِ لِلنَّزَاهَةِ وَاَوْسَطُهُمْ لِلتِّجَارَةِ وَفُقَرَاؤُهُمْ لِلْمَسْأَلَةِ وَقُرَّاؤُهُمْ لِلرِّيَاءِ وَالسُّمْعَةِ
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন—
يَأْتِـيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ
মানুষের উপর অতিশীঘ্রই এমন একটা সময় আসবে অর্থাৎ আমার উম্মতের উপর এমন একটা সময় আসবে
يـَحُجُّ اَغْنِيَاءُ النَّاسِ لِلنَّزَاهَةِ
যারা ধনী, পয়সাওয়ালা, ধনী সম্প্রদায় যারা রয়েছে এরা হজ্জ করবে আনন্দ ভ্রমণ হিসেবে। নাউযুবিল্লাহ!
وَاَوْسَطُهُمْ لِلتِّجَارَةِ
মধ্যম শ্রেণীর যারা রয়েছে তারা হজ্জ করবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে। নাউযুবিল্লাহ!
وَفُقَرَاؤُهُمْ لِلْمَسْأَلَةِ
আর যারা অভাবী, গরীব এরা হজ্জ করবে ভিক্ষা খয়রাত করার জন্য। নাউযুবিল্লাহ!
وَقُرَّاؤُهُمْ لِلرِّيَاءِ وَالسُّمْعَةِ
আর অনেক আলিম ছূফী দরবেশ নামধারী ব্যক্তিরা হজ্জ করবে মানুষকে বলার জন্য, রিয়া করার জন্য। নাউযুবিল্লাহ! যে, আমি এতবার হজ্জ করেছি, পাঁচ বার, দশ বার, বিশ বার, চল্লিশ বার, একশ’ বার হজ্জ করেছি। নাউযুবিল্লাহ! মানুষকে এটা বলার জন্য, রিয়ার জন্য। কিন্তু সেই হজ্জগুলো একটাও কবুল হবে না। হজ্জে মাবরূর করতে হবে তখন হজ্জ কবুল হবে এবং তার যত ফযীলত সেটা সে লাভ করবে। আমভাবে মানুষের পক্ষে এ বিষয়গুলো ফিকির করা অত্যন্ত কঠিন। তবে সাধারণভাবে যেটা কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, কোন লোকের যদি সত্যিই পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে হজ্জ করে আসার পরে দেখা যাবে তার আমলগুলো আস্তে আস্তে বিশুদ্ধ হবে। অর্থাৎ সে আস্তে আস্তে যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে রুজু হয়ে যাবে। তার আমলগুলো আস্তে আস্তে শুদ্ধ হয়ে যাবে। সে সমস্ত কুফরী, শিরিকী, হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! আর যদি দেখা যায় সে হজ্জ করে এসে তার আমলে কোন পরিবর্তন নেই বরং তার আমল নষ্ট হচ্ছে মনে হয়। সে হারাম নাজায়িয, অশ্লীল—অশালীন কাজে আরো জড়িত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! তাহলে বুঝতে হবে, তার হজ্জে মাবরূর নছীব হয়নি। নাউযুবিল্লাহ! বিষয়টা ফিকির করতে হবে। পবিত্র হজ্জে মাবরূর হচ্ছে যা মানুষের নাজাতের কারণ। আর যদি সে হজ্জের কার্যক্রম যথাযথ করতে না পারে তাহলে সেটা কঠিন বিষয়। এজন্য সাধারণভাবে যেটা বলা হয়েছে, একজন হাজী ছাহেবের যে গুরুত্ব, পবিত্র হজ্জ করার যে গুরুত্ব সেটা।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে—
عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَشْفَعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلاَثَةٌ اَلْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْعُلَمَاءُ، ثُمَّ الشُّهَدَاءُ.
সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোক সুপারিশ করবেন, হযরত নবী—রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা, হযরত আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এবং যারা শহীদ উনারা।
যারা হাজী উনারাও কিন্তু সুপারিশ করবেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একজন হাজী ছাহেবের যদি পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তিনি চারশত লোকের জন্য সুপরিশ করতে পারবেন। সুবহানাল্লাহ! এতখানি ফযীলত তাকে দেয়া হয়েছে। আর যদি বিপরীত হয় তাহলে সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
কাজেই প্রতিটি আমলই যদি তা বিশুদ্ধ হয় তাহলে সে তার জন্য সুপারিশ করবে এবং তার নাজাতের কারণ। রহমত, বরকত ও সাকীনা লাভের কারণ। আর যদি আমলটা তার উল্টা হয়ে থাকে, যেভাবে করার কথা ছিলো সেভাবে সে না করে তাহলে কি হবে? সে আমলটাই কিন্তু নামায হোক, রোযা হোক, হজ্জ হোক, যাকাত হোক সে আমলগুলি তাদেরকে যারা সম্মানিত শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে যেভাবে করার সেভাবে না করলে তখন সেই আমল তাদেরকে লা’নত দিতে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! ঠিক হজ্জও কিন্তু এ রকমের। পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হলে সে নেককার, আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হয়ে যায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন সেটা যদি না হয় তাহলে দেখা যায়, সে আস্তে আস্তে আরো বদকার হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! কারণ পবিত্র হজ্জ তাকে লা’নত দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এটাও বর্ণিত রয়েছে। পবিত্র হাজরে আসওয়াদ, সেখানে চুম্বন করলে গুনাহখতাগুলো চুষে নেয়। সুবহানাল্লাহ! যদি তার পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন যদি পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব না হয় তাহলে কিন্তু পবিত্র হজরে আসওয়াদ তার গুনাহ চুষে নেয় না বরং তার প্রতি লা’নত দেয়। নাউযুবিল্লাহ! যার ফলশ্রম্নতিতে পর্যায়ক্রমে তার আমলগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! এখন একটা লোকের যদি পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে তার আমলগুলো শুদ্ধ হবে। সমস্ত হারাম থেকে, কুফরী থেকে, শিরিকী থেকে সে বেঁচে থাকবে এবং থাকার কোশেশ করবে।
আর যদি হজ্জে মাবরূর নছীব না হয় তাহলে দেখা যাবে, সে আস্তে আস্তে আরো সম্মানিত শরীয়তবিরোধী কাজ, হারাম, অশ্লীল— অশালীন কাজে মশগুল হয়ে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই বিষয়টা ফিকির করতে হবে। পবিত্র হজ্জের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র হজ্জের জন্য চাঁদের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)