কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা:
কারবালায় ঐতিহাসিক পবিত্র ১০ই মুহররমুল হারাম শরীফে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত
(মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণাগার থেকে প্রকাশিত “কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস” নামক কিতাব থেকে সংকলিত)
, ০৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হিজরী ৬১ সন, পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ দশ তারিখ রাত্রি বেলা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত সফর সঙ্গী উনাদের সবাইকে একত্রিত করলেন এবং বললেন, আমার প্রিয় সাথীরা! আমি আপনাদের সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে সন্তুষ্ট। আমি আপনাদেরকে অনুমতি মুবারক দিচ্ছি যে, আজ রাতে আপনারা যে যেদিকে পারেন চলে যান। এসব ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বাহিনীর লোকেরা আমার পবিত্র রক্ত পিপাসু। এরা একমাত্র আমার পবিত্র রক্তেই পরিতৃপ্ত হবে। আপনারা চলে যান, আপনাদের জান বেঁচে যাবে। কিন্তু উনার সাথীদের মধ্যে একজনও যেতে রাজি হলেন না। উনারা বললেন, এ নাজুক সময়ে আপনাকে শত্রুদের হাতে সোপর্দ করে আমরা কিভাবে চলে যেতে পারি?
এ রকম পরিস্থিতিতে যদি আপনাকে ফেলে আমরা চলে যাই, কাল ক্বিয়ামতের মাঠে আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিভাবে মুখ দেখাবো? না! কিছুতেই আমরা আপনাকে ফেলে চলে যেতে পারি না। আমরা আপনার সাথেই থাকবো এবং আমরা আমাদের জানকে আপনার খিদমত মুবারকে পতঙ্গের মতো উৎসর্গ করবো ইনশাআল্লাহ।
যখন কেউই যেতে রাজি হলেন না, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে শুনুন! যদি আপনারা আমার সাথে থাকার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন, তাহলে আপনারা ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাসে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো অটল হয়ে যান। এমন দৃঢ় ও অটল হয়ে যান, যেন যুলুম-অত্যাচারের বিভীষিকা আপনাদের পদস্খলন ঘটাতে না পারে। বাতিলের সাথে মোকাবিলা করার সময়টা হলো আমাদের পরীক্ষার সময়। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার বান্দাদের থেকে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এখন আমাদের সামনে মুছীবতের পাহাড় উপস্থিত। সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা আমাদেরকে ধৈর্য সহকারে অতিক্রম করতে হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রাস্তায় অটল থাকতে হবে এবং এভাবে অটল থেকে শাহাদাতের শরবত পান করতে হবে এবং উম্মাহ’র ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদাহরণ রেখে যেতে হবে। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ নছীহত মুবারক উনার সাথীদের মধ্যে যথেষ্ট ধৈর্য ক্ষমতা সৃষ্টি করে দিলো। উনার সকল সঙ্গী-সাথীগণ উনার জন্য জান কুরবান করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং সকলেই শাহাদাত গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে গেলেন এবং ধৈর্য ও ত্যাগ স্বীকারের জন্য পাহাড়ের মতো দৃঢ় হয়ে গেলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম গ্রহণ করুন। সকাল বেলা মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম যা হওয়ার তাই হবে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী-সাথী সবাই নিজ নিজ তাঁবুতে চলে গেলেন এবং তিনি নিজের তাঁবুতে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শুরু করলেন।
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে করতে তন্দ্রাভাব আসায় তিনি কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে পড়লেন। তখন স্বপ্নে দেখলেন, উনার মহাসম্মানিত নানাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং উনাকে কোল মুবারকে নিয়ে নিলেন এবং উনার বুকে হাত মুবারক রেখে ইরশাদ মুবারক করলেন-
اَللّٰهُمَّ اَتِ الْـحُسَيْنَ صَبْرَا وَّاَجْرَا
“আল্লাহুম্মা আতিল হুসাইনা ছবরাওঁ ওয়া আজরা”
অর্থাৎ “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধৈর্য ও পুণ্য হাদিয়া করুন” এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আরো বললেন, “আপনাদের উপর যা হচ্ছে, তা থেকে আমি মোটেও বেখবর নই। আমি সবকিছু দেখছি। আপনার বিরুদ্ধে যারা তলোয়ার, তীর, বল্লম ইত্যাদি নিয়ে এসেছে, তারা সকলেই আমার শাফায়াত মুবারক থেকে বঞ্চিত। ”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ কথা বলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তরকে ধৈর্য এবং স্থিরতার খনি বানিয়ে দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘুম থেকে উঠে উনার সঙ্গী-সাথী এবং পরিবার পরিজনকে স্বপ্নের কথা শুনালেন।
পবিত্র ফজর উনার নামাযের পর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে প্রার্থনা করছিলেন- “ইয়া মহান আল্লাহ পাক! আপনার রাস্তায় আমাকে অটল রাখুন, আমাকে ধৈর্য এবং সহনশীলতা দান করুন। হে মাওলা! যুলুম-অত্যাচারের ঝড়-তুফান আমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, আপনি আমাকে অটল থাকার তাওফীক দান করুন, যেন যুলুম-অত্যাচার আমাকে পদচ্যুত করতে না পারে। ” এভাবে তিনি যখন মুনাজাত মুবারক করছিলেন, উনার সঙ্গী-সাথী উনারা তখন আমীন-আমীন বলছিলেন।
মোঁকথা, একদিকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পিপাসাকাতর নেক বান্দাগণ ধৈর্য এবং সহনশীলতার জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে প্রার্থনা করছেন, অন্যদিকে ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধের মহড়া চলছে। ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির সৈন্যরা লম্ফ-ঝম্ফ দিতে লাগলো।
তাদের মধ্যে আবার অতি উৎসাহী কতক জাহান্নামী কুলাঙ্গার ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাঁবুর আশেপাশে চক্কর দিতে লাগলো এবং গর্ব ও অহঙ্কারভরে হুঙ্কার দিয়ে বললো, এমন কোন বীর বাহাদুর আছেন? থাকলে আমাদের সঙ্গে মোকাবিলায় আসুন। ইত্যবসরে যালিমদের মধ্যে কেউ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাঁবুর দিকে তীর নিক্ষেপ করলো এবং মোকাবিলার জন্য হুঙ্কার দিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)