কথিত আহলে হাদীছ বা লা-মাযহাবীদের উৎপত্তি এবং কুফরী আক্বীদাসমূহ (১)
, ২৯ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১৫ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীছ ওরফে ওহাবী গ্রুপঃ এদের উৎপত্তি ইতিহাস:
ইংরেজদের ষড়যন্ত্র: ইতিহাস সাক্ষ্য ইংরেজরা আসার আগে এই উপমহাদেশে মাযহাবের বিরোধিতা ছিলো না। ধর্মীয় কোন্দল ছিলো না। হযরত টিপু সুলতান রহমতুল্লাহি আলাইহি, মোঘল সাম্রাজ্যের সকল মোঘল বাদশাহ, শাহজাহান, ঘুরি, জাহাঙ্গীর, বাদশা যফরসহ সকলেই হানাফী মাযহাবী ছিল। এ উপমহাদেশে যত মুসলিম হাকিম বংশীয়, যত গোলাম বংশীয় আর যত ঘুরি বংশীয়, আর যত খিলজী বংশীয়, সাদাত বংশীয়, তুঘলোক বংশীয়, আর সুরী অথবা মোগল বংশীয় বাদশাহ ছিল, সবাই ছিলেন সুন্নী হানাফী। ..... (তরজুমানে ওহাবিয়া-২৫)
যখন ইংরেজরা আসলো। ওরা দেখলো এদেশের মুসলমানরা তাদের ধর্মের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ। তাদের মাঝে কোন আভ্যন্তরীণ বিভেদ নাই। একতার এক অবিচ্ছেদ্য বাঁধনে তারা জড়িয়ে আছে। তাই ইংরেজরা তাদের বহুল প্রচলিত “ডিভাইট এন্ড রোলস” তথা “পরস্পরে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের উপর শাসন করা হবে” এই নীতি বাস্তবায়িত করতে উঠে পরে লেগে গেলো। মুসলমানদের মাঝে ধর্মীয় বিভেদ-কোন্দল সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে দিলো। টাকা দিয়ে, অর্থ সম্পদ দিয়ে, বিত্ত-বৈভব দিয়ে কিছু দুনিয়ালোভী আলেমদের নির্বাচিত করে।
একদিকে হুসাইন আহমাদ মাদানীর ফতওয়া যে, “ইংরেজদের দলে ঢোকা হারাম”। আর আশরাফ আলী থানবীর ফতওয়া, “ইংরেজদের পণ্য ব্যবহার হারাম”। অপরদিকে ইংরেজরা একদল ঈমান বিক্রেতাদের ক্রয় করে নিলো। ইংরেজদের পক্ষে একজন কিতাব লিখলো- “আল ইকতিসাদ ফি মাসায়িলিল জিহাদ”। যাতে সে লিখে যে, ইংরেজদের শাসন ইসলামী রাষ্ট্র। আর ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম। এই বই লিখার পর তাকে ‘শামসুল উলামা উপাধী’ দেয়া হয়, তাকে মেডেল দেয়া হয়। অনেক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
ওহাবী সম্বোধন: যখন এদেশের মানুষ দেখলো যে, ওরা ইংরেজদের দালালী করেছে। তখন তাদেরকে “ওহাবী” বলে গালি দেয়া শুরু হয়। ওহাবী সেই যুগে তাদের বলা হত- যারা দেশের গাদ্দার। দেশদ্রোহী। ওরা যেখানেই যেত সাধারণ মানুষ তাদের দেখে বলত- এইতো ওহাবী চলে এসেছে।
আহলে হাদীছ নামকরণ: এভাবে যখন তাদেরকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখতে লাগলো, তখন নিজেদের সম্মানিত করার জন্য ওরা কুখ্যাত রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে গিয়ে আবেদন করলো যে, আমরাতো আপনাদের কথা অনুযায়ী কিতাব লিখে আপনাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম বলেছি, এখন আমাদের সবাই ধিক্কার দিচ্ছে। গালি দিচ্ছে “ওহাবী” বলে। আমাদের জন্য সম্মানজনক কোন পদবীর ব্যবস্থা করুন। তখন তাদের নাম দেয় রাণী ভিক্টোরিয়া “মুহাম্মদী”এবং পরবর্তীতে “আহলে হাদীছ”। (এশায়াতুস সুন্নাহ ২৪-২৬ পৃষ্ঠা, ২য় সংখ্যা, ১১ খ-)
পাঠকের সুবিধার্থে ওহাবী থেকে আহলে হাদীছ পদবী পাওয়ার একটি দরখাস্তের অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
“বখেদমতে জনাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী,
আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক “এশায়াতুস সুন্নাহ” পত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহ্হাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমক হারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার সমীচীন হবে না, যাদেরকে “আহলে হাদীছ” বলা হয় এবং যারা সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমক হালালী, আনুগত্যতা ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি প্রত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।
অতএব, এ দলের প্রতি ওহ্হাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভার্মেন্টের বরাবর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহ্হাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীছ” সম্বোধন করা হোক।
- আপনার একান্ত অনুগত খাদেম
- আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন (সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ)
দরখাস্ত মুতাবেক ইংরেজ সরকার তাদের জন্যে “ওহ্হাবী” শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীছ” নাম বরাদ্দ করেছে। এবং সরকারী কাগজ-চিঠিপত্র ও সকল পর্যায়ে তদের “আহলে হাদীছ” সম্বোধনের নোটিশ জারি করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দরখাস্তকারীকেও লিখিতভাবে মঞ্জুরী নোটিশে অবহিত করা হয়- ক) সর্বপ্রথম পাঞ্জাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী মি: ডাব্লিউ, এম, এন (ড.গ.ঘ) বাহাদুর চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করেন। খ) অতঃপর ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ ইং সি,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৪০৭ এর মাধ্যমে গ) এবং ২০শে জুলাই ১৮৮৮ ইং ইউ,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৩৮৬ এর মাধমে ঘ) এবং ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ ইং বোম্বাই গভার্মেন্ট চিঠি নং-৭৩২ এর মাধ্যমে ঙ) এবং ১৫ই আগষ্ট ১৮৮৮ মাদ্রাজ গভার্মেন্ট চিঠি নং-১২৭ এর মাধ্যমে চ) এবং ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ ইং বাঙ্গাল গভার্মেন্ট চিঠি নং-১৫৫ এর মাধ্যমে দরখাস্তকারী মৌলভী আবু সাইদ মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভীকে অবহিত করা হয়। (এশায়াতুস সুন্নাহ ৩২-৩৯ পৃষ্ঠা, ২য় সংখ্যা, ১১ খ-) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৩)
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা ও ফযীলত মুবারক প্রসঙ্গে (৩৭)
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কর্তব্য কাজে দৃঢ়তা এনে দেয় সন্তুষ্টি ও নিয়ামত
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৪)
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)