ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিকিৎসক স্বরূপ (৫)
, ২৪ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১০ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টিরও অনেক পূর্বে পবিত্র কুরআন শরীফ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা আরবী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ইলম প্রকাশের বিষয়টি আরবী ভাষার মাধ্যমে শুরু করেছেন।
অর্থাৎ আরবী হরফ হচ্ছে সমস্ত ভাষার মূল। তৃতীয়ত, আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক রাখার পূর্বে পবিত্র জান্নাতে অবস্থান মুবারক করেছেন। পবিত্র জান্নাতবাসীর ভাষা যেহেতু আরবী, সেহেতু সেখানে উনার ভাষা মুবারক আরবীই ছিলো। কাজেই আরবী ভাষাই সমস্ত ভাষার মূল। অন্যান্য ভাষাসমূহ আরবী ভাষা হতে উৎপন্ন হয়েছে।
মূলকথা হলো, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ভাষার বিশুদ্ধতা বজায় রাখা ও বিকৃতি হতে ভাষাকে রক্ষা করা এবং ভাষার অনুশীলন ও প্রচলন সহজলভ্য করতে ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণের প্রয়োজনীয়তা বা আবশ্যকীয়তা সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছেন। তিনিই সর্বপ্রথম ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ বর্ণনা করেছেন এবং লিপিবদ্ধ করেছেন। অর্থাৎ ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ শাস্ত্র উনারই মুবারক নীতিমালা। উনারই বর্ণিত নীতিমালা অনুসরন করে ভাষাসমূহের ব্যাকরণ রচিত হয়েছে।
এরপরে সময় গণনার ক্ষেত্রে সন উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। বর্তমান সময়ে প্রত্যেক ধর্ম অবলম্বনকারীদের নিজস্ব সৌর বা চান্দ্র সন রয়েছে। মুসলমানদের জন্য সৌর সন আগে ছিলো না। সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমানদের জন্য সৌর সন প্রণয়ন করেছেন এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচলন করছেন। আর মুসলমানদের জন্য যে চন্দ্র সন রয়েছে, তা হিজরী সন নামে পরিচিত। হিজরী সনের প্রচলন যদিও সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি করেছেন, কিন্তু হিজরী সন প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা, ধারণা এবং রুপরেখা ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অবদান। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـى عَنْهُ لَـمَّا عُزِمَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلى التَّارِيْخِ جَمَعَ الصَّحَابَةَ فَاسْتَشَارَهُمْ فَقَالَ حَضْرَتْ سَعْدُ بُنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَرَخِّ لِوَفَاةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ حَضْرَتْ طَلْحَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـى عَنْهُ أَرَخِّ لِمَبْعَثِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ حَضْرَتْ عَلِي بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَرَخِّ لِهِجْرَتِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنَّهَا فَرَّقَتْ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ وَقَالَ آخَرُوْنَ لِمَوْلِدِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ قَوْمٌ لِنَبُوَّتِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ هذَا فِيْ سَنَةِ سَبْع عَشَرَة مِنَ الْهِجْرَةِ وَقِيْلَ فِيْ سَنَةِ سِتِّ عَشَرَة وَاتَّفَقُوْا عَلى قَوْلِ حَضْرَتْ علي عَلَيْهِ السَّلَامُ ثُمَّ اِخْتَلُفُوْا فِي الشُّهُوْرِ فَقَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ الرَّحْمنِ بْنَ عَوْفٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـى عَنْهُ أَرَخِّ لِرَجَبَ فِإِنَّه أَوَّلُ الْأَشْهُرِ الْحَرَمِ وَقَالَ حَضْرَتْ طَلْحَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـى عَنْهُ مِنْ رَمَضَانَ لِأَنَّه شَهْرُ الْأُمَّةِ وَقَالَ حَضْرَتْ علي عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنَ الْمُحَرَّمِ لِأَنَّه أَوَّلُ السَّنَةِ.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন তারিখের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলেন, তখন তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে একত্রিত করলেন এবং উনাদের সাথে পরামর্শ করলেন।
তখন হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আপনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক হতে তারিখ গণনা শুরু করুন। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আপনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রিসালত মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের সময়কাল হতে তারিখ গণনা শুরু করুন।
আর ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হিজরত মুবারক হতে তারিখ গণনা শুরু করুন।
কেননা, হিজরত মুবারক হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করেছেন। কেউ কেউ বলেন, আপনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক হতে তারিখ গণনা শুরু করুন।
আবার কেউ কেউ বলেন, আপনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নুবুওওয়ত মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের সময়কাল হতে তারিখ গণনা শুরু করুন। আর এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে ১৭ হিজরীতে। কারো কারো মতে, তা ১৬ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছে।
তারিখ গণনার বিষয়ে উনারা ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মতের উপর ঐক্যমত পোষণ করেন। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হিজরত মুবারক হতে তারিখ গণনা শুরু করা হয়। অতঃপর বৎসরের শুরুর মাস নিয়ে ইখতিলাফ দেখা দিলো।
তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আপনারা রজবুল হারাম মাস হতে মাস গণনা শুরু করুন। কেননা, তা হারামসমূহের প্রথম মাস। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আপনারা রমাদ্বান শরীফ মাস হতে মাস গণনা শুরু করুন। কেননা, তা উম্মতের মাস।
আর ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনারা মুহররম শরীফ মাস হতে মাস গণনা শুরু করুন। (মাস গণনার বিষয়ে উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মতের উপর ঐক্যমত পোষণ করেন। অর্থাৎ, পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ হতে হিজরী সনের মাস গণনা শুরু করা হয়। ) (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী-২৬/১৭৩)
মূলকথা হলো, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই ইসলামী সন তথা হিজরী সন প্রতিষ্ঠিত হয়। উনার মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী হিজরী সনের প্রচলন ঘটে। (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ ইমামুদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩২)
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদেরকে ঈমান থেকে সরিয়ে দিতে কাফিরগুলো সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৬)
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী ও মূর্তিপূজারী মুশরিকরা
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি কিরুপ আক্বীদাহ পোষণ করতে হবে
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩১)
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শান মুবারক বিরোধী লেখালেখি-ব্যঙ্গচিত্র বিচ্ছিন্ন অপকর্ম নয়, বরং তা পাশ্চাত্যের মূলধারার সাহিত্য-চিত্রকলারই অংশ
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)