ইন্দোনেশীয় অঞ্চলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম : আগমন ও বিকাশ (২)
, ২৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পাঁচ মিশালী
হাজরামাউত এবং আম্মান অঞ্চলের আরব ব্যবসায়ীগণ এ অঞ্চলে আগমনের পর ভারতবর্ষের দক্ষিণ উপকূল এবং মালাবার অঞ্চলের সম্ভ্রান্ত মহিলাগণের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এ অঞ্চলে সম্মানিত দ্বীন ইসলামকে মজবুত এবং প্রোথিত করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য জাভা রাজ্যের শাসকের সঙ্গে মুসলিম রাজকুমারী আত্তাশামবিনার বিবাহ ছিল এক্ষেত্রে একটি বিরাট মাইলফলক। এই মুসলিম রাজকুমারী শর্ত দিয়েছিলো তাকে বিবাহ করতে হলে আগে শাসককে ঈমান এনে মুসলমান হতে হবে। তার কথা অনুযায়ী শাসক ঈমান আনে। এই শাসকের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় একটি নতুন ইসলামী দিগন্তেÍর। এ সময় মধ্য জাভা থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং আশপাশের অঞ্চলে গড়ে উঠতে শুরু করে ছোট ছোট ইসলামী রাজ্য। অতঃপর ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ উপনিবেশের কয়েক মাস পূর্বে এই রাজ্যগুলো একীভূত হয়ে যায়।
এছাড়া মুসলিম ব্যবসায়ী এবং মুহাজিরগণ ভেবেচিন্তে দেখলেন যে, এ অঞ্চলের লোকদেরকে দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দানের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে তাদের স্থানীয় ভাষা ও রীতিনীতির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা। অবশেষে তারা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মনে সম্মানিত দ্বীন ইসলামের সুমহান আদর্শ গেঁথে দিতে সক্ষম হন। এমন সখ্যতা স্থানীয় ব্যক্তিদের পরস্পরের মধ্যেও খুব একটা দেখা যেত না। মুহাজির মুসলিমগণ স্থানীয়দের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যাওয়ার পিছনের উদ্দেশ্য ছিল সুউচ্চ ও সুপ্রসন্ন। যা ইন্দোনেশিয়ায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সুমহান নূর মুবারক সুপ্রসারিত করেছিল ব্যাপকভাবে।
এভাবেই মুসলিমদের সম্মিলিত এবং সুবিন্যস্ত প্রচেষ্টার ফলে সম্মানিত ইসলামের পতাকা গেঁথে যায় সুমাত্রা দ্বীপের আতশিহ রাজ্যে। এই এলাকার দু’জন শাসক ইসলামী আক্বীদার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শাইখ আল-আরিফ। তিনি রাজ্যের অভ্যন্তরে এবং পরবর্তী সময়ে উনার শাগরেদ বুরহানুদ্দীন দ্বীপটির উপকূলীয় অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন।
ইবনে বতুতার সাক্ষ্য:
ঐতিহাসিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায় যে, জাভা দ্বীপের মারাসিলু অঞ্চলের শাসক ‘সামাদরাহ’ খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে একদল মুসলিম গবেষক ও আলেমের হাতে সর্বশেষ সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেন। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন শাইখ ইসমাইল নামক একজন মনীষী। এই শাসকই পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন অঞ্চলে দ্বীন ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন। ইসলাম গ্রহণের পর এই শাসক ‘আল মালিকুস সালিহ’ নামধারণ করেন। উনার দু’জন সন্তান ছিলেন। জ্যৈষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল আল-মালিকুজ জাহির।
৭৪৩ হিজরী মুতাবিক ১৩৪৫ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এ অঞ্চলে সফর করেন এবং আল-মালিকুজ জাহিরকে জাভার বাদশাহ হিসেবে অধিষ্ঠিত দেখতে পান। ইবনে বতুতা তার সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি ছিলেন সম্মানিত এবং সম্ভ্রান্ত বাদশাহ। শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। ফক্বীহগণের কাছে তিনি ছিলেন আস্থার এক নাম। ফক্বীহগণ তার কাছে এসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। এই বাদশাহ অনেক জিহাদ এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। পায়ে হেঁটেই তিনি জুমার নামাযে এসে হাজির হতেন।
ইবনে বতুতার এই সাক্ষ্য থেকে বুঝা যায় যে, এ অঞ্চলের অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম প্রজন্ম মুসলিম প্রচারকদের হাতে স্বেচ্ছায় ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করে। এই প্রচারকদের অনেকে ছিলেন ব্যবসায়ী, অনেকে ছিলেন আলিম। কেউ ছিলেন আরব, কেউ ছিলেন ভারত অথবা পাকিস্তান অঞ্চলের। পরবর্তী সময়ে তাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম এসে ইন্দোনেশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী মালয়েশিয়া অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় এবং এ লক্ষ্যে জিহাদেও অংশগ্রহণ করে। এমনিভাবে ভারতবর্ষের দক্ষিণের মালাবার অঞ্চলের মুসলিমদেরও ছিল ইসলাম প্রচারে প্রশংসনীয় অবদান। তারাও ছিল শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। মালয় দ্বীপপুঞ্জ এবং বর্তমান ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে তাদেরও ছিল অগ্রগণ্য অবদান।
ইবনে বতুতার এই সাক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে আমরা সুমাত্রার রাজা আল-মালিকুস সালিহ এবং জাহিরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী মুসলিম মোগল সাম্রাজ্য এবং আরবের ইয়ামান ও আম্মান অঞ্চলের সঙ্গে বিদ্যমান সুসম্পর্কের প্রমাণও দেখতে পাই।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শীতে শরীর ও ফুসফুস সুস্থ রাখবে যেসব সুপারফুড
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চাঁদ নিয়ে রহস্যের জট খুললো, জানা গেল ২৮৩ কোটি বছর আগের ঘটনার ব্যাখ্যা
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বদলে যাচ্ছে রসায়নের শত বছরের পুরনো সূত্র
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাতাস থেকে সরাসরি পুষ্টি পেতে পারে মানবদেহ : গবেষণা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের যে গ্রামের জনসংখ্যা চারজন!
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ডাবের পানি খেলে শরীরে কি হয়? ডাবের পানির উপকারিতা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ধানের গোলা এখন কেবলই স্মৃতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওজন আর রক্তচাপ কমায় বিটের রস! বাড়ায় স্মৃতিশক্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)