১০০ টি চমৎকার ঘটনা
বিশ বছরের ইবাদত বরবাদ
ঘটনা-৬৬
, ১৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “তখন আমি রওয়ানা হলাম লোকটার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। পাহাড়টির পিছন দিক থেকে এসে যখন তার মুখোমুখি হলাম; সে আমাকে দেখে বললো, ‘হে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কি এসেছেন আমাকে সংবাদ দেয়ার জন্য যে, আমার হজ্জ কবুল হয়নি? আজকে বিশ বছর যাবৎ আমার কোনো ইবাদত-বন্দেগী, আমল-আখলাক কবুল হচ্ছে না। এই বিশ বছরের প্রত্যেক বছরই হজ্জের পর আপনার মত একজন বুযুর্গ এসে আমাকে সংবাদ দিয়ে যান যে, আমার হজ্জ, আমার ইবাদত-বন্দেগী কোনটাই কবুল হচ্ছে না।’ আমি এটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম যে, কি ব্যাপার? যাকে আমি চিনি না, জানি না, যার সাথে আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি; সেই লোকটা কি করে আমাকে চিনলো? আবার বিশ বছর যাবৎ তার কোনো ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় না। তারপরও সে কেন ইবাদত-বন্দেগী করে? আর সে কি করেই বা জানে যে, তার ইবাদত-বন্দেগী কবুল হচ্ছে না? এত সব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে আমি আস্তে করে তার পাশে গিয়ে বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা ভাই! তুমি কি করে আমাকে চিনলে? আর তোমার বিশ বছর যাবৎ কোনো ইবাদত-বন্দেগী কবুল হচ্ছে না, তাই বা তুমি কি করে জানো? আর যদি জেনেই থাকো, তাহলে তুমি কেন ইবাদত-বন্দেগী করো?’
তখন সেই ব্যক্তি বললো, ‘এটা আমি কাউকে বলতাম না এবং বলিনি কখনও। কিন্তু যেহেতু আপনি সুলতানুল আরেফীন, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী, সেজন্য আপনার সম্মানার্থে আমি আপনার কাছে বলবো। বিষয়টা হচ্ছে, আজকে থেকে বিশ বছর আগে আমার মা ছিলেন, আমার আহলিয়া ছিল, সংসার ছিল, ঘর-বাড়ি সবকিছুই ছিল। একদিন আমার আহলিয়ার সাথে আমার মায়ের কিছু বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। কথা কাটাকাটি হতে হতে চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। তখন আমি আমার আহলিয়ার পক্ষ হয়ে আমার মাকে একটা ধাক্কা দেই। তিনি দুর্বল ছিলেন সেজন্য সেই ধাক্কায় পড়ে যান। পড়ে গিয়ে বদদোয়া করেন যে, ‘তুমি আমাকে আঘাত করেছো, কষ্ট দিয়েছো, আল্লাহ পাক যেন তোমাকে জাহান্নামে নেন।’ আমি তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। পরবর্তীতে বুঝেছিলাম এবং ক্ষমাও চেয়েছিলাম। আমার মা আমাকে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে বাবা, তুমি যেখানেই থাকো না কেন, তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবে।’ কিন্তু তিনি আমাকে এ কথাটা বলেননি যে, ‘তুমি জান্নাতী, তোমাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো।’ মূলত, আমার মায়ের উভয় দোয়াই কবুল হয়েছে। যেহেতু তিনি আমাকে বলেছেন জাহান্নামী, সেহেতু আমার বিশ বছর যাবৎ কোনো ইবাদত-বন্দেগী কবুল হচ্ছে না। আর তিনি যেহেতু বলেছেন, আমি যেখানেই থাকিনা কেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবো; সেই সূত্রেই আমি সবসময় সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আলাপ করে থাকি। কে আসবে, কে আসবে না, কে কি বলবে আমি সবই জানি। আমি প্রত্যেক ইবাদতের পরে জিজ্ঞাসা করি, আমার কোনো আমল কবুল হয়েছে কিনা। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক জবাব দেন, কবুল হয়নি। আর প্রত্যেক হজ্জের পর, আপনার মতো একজন ওলীআল্লাহ আমার কাছে আসেন। যিনি আসেন, আমি তার বিষয়ে সমস্ত কিছু আগেই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে সরাসরি জেনে নেই। যেমন আপনার সম্পর্কে আমি জেনে নিয়েছিলাম। আমি আপনার আসার আগেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি, ‘আয় আল্লাহ পাক! এবার আমার সাক্ষাতে কে আসবেন সংবাদ দেয়ার জন্য?’ মহান আল্লাহ পাক জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমার ওলী, সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আসবেন। তুমি অপেক্ষা করো।’ যার জন্য আপনাকে দেখার সাথে সাথে আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই ঘটনা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। তারপরে লোকটিকে বললাম, ‘হে ব্যক্তি! আমি কি তোমার জন্য দোয়া করবো, যেন মহান আল্লাহ পাক তোমাকে ক্ষমা করে দেন?’ সে বললো, ‘হুযূর! এই বিশ বছর ধরে প্রত্যেক হজ্জের পরে যত আল্লাহওয়ালা এসেছেন, সবাই আমার জন্য দোয়া করেছেন। কারো দোয়া এ পর্যন্ত কবুল হয়নি। আমার জন্য জাহান্নাম অবধারিত।’ তখন আমি বললাম, ‘তুমি যদি বলো তাহলে আমিও একটু দোয়া করি।’ সে বললো, ‘আপনার এখতিয়ার।’ আমি দোয়া করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক জানালেন, ‘হে আমার খাছ ওলী, সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি! আমি আপনার দোয়া কবুল করবো। তবে শর্ত থাকবে। শর্ত হচ্ছে, যেহেতু তার মা তাকে বলেছে জাহান্নামী। তাই আমি প্রথমে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। দ্বিতীয়ত, যেহেতু আপনি দোয়া করেছেন, আর আপনার দোয়া আমি কবুল করেছি। তাই এই দোয়ার বদৌলতে, তার মাকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে আমি তাকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিব।’ সুবহানাল্লাহ!
বর্তমান সমাজেও দেখা যায়, ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে অনেক পরিবারে সন্তানের দ্বারা পিতা-মাতা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। যা মোটেই কাম্য নয়। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি পিতা-মাতা উনাদের সাথে উত্তম আচরণ করতে আদেশ মুবারক করেছেন। এমনকি উনাদের প্রতি ‘উফ’ শব্দটিও ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে রাসূলে কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দৈনন্দিন জীবনে আমার সর্বোত্তম সম্মান পাওয়ার সর্বাধিক অধিকারী কে? তিনি বললেন, “তোমার মাতা” সেই ছাহাবী আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- “তোমার মাতা”। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবারও উত্তরে বললেন- “তোমার মাতা”। ছাহাবী আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? এবার নূরে মজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেনঃ “তোমার পিতা”। (ছহীহুল বুখারী ও ছহীহ মুসলিম)
এখানে মাতার হক্বকে পিতার হক্বের তিনগুণ বলা হয়েছে। অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত”। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রত্যেক সন্তানের পিতা-মাতা উনাদের হক্ব আদায়ে কতটুকু যতœবান হওয়া উচিত।
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)