‘ভোলা গ্রাম’ যেভাবে গুলশান হলো
, ০৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পাঁচ মিশালী
১৯৭২ সালে থানা প্রতিষ্ঠিত হয়
২০০৪ সালে শুরু হয় বাণিজ্যিক স্থাপনা
এটি একসময় “ভোলা গ্রাম” নামে পরিচিত ছিল। সবুজে ঘেরা যে গ্রামে ছিল বিস্তৃত ফসলের জমি, ছিল ফসলের ঘন আবাদ। উপকূলীয় জেলা ভোলা থেকে আসা কৃষকদের বাস ছিল এখানে। তারা খাল-বিলে মাছ ধরতো। শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন ছিল তাদের। এলাকাটি তখন “ভোলা সামাইর” নামেও পরিচিত ছিল।
১৯৬১ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের (ডিআইটি) তৎকালীন প্রধান জিএ মাদানি গুলশান মডেল টাউন বাস্তবায়নের জন্য এই এলাকাটিকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি ছিল অভিজাত একটি আবাসিক এলাকা নির্মাণের প্রকল্প, যা পাকিস্তানের করাচি শহরের একই ধরনের আবাসিক এলাকার নামের অনুকরণ।
উন্নয়ন কাজ চলাকালে এটি গুলশান ইউনিয়নে পরিণত হয় এবং পরে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৭২ সালে গুলশান থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৮ কর্পোরেশনের মর্যাদা লাভ করে ঢাকা পৌরসভা। তবে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে সামরিক আইন জারি করে এটি বাতিল করা হয়। একই বছর গুলশান পৌরসভা ঢাকা পৌরসভার সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৯০ সালে ঢাকা পৌর কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তন করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন করা হয় এবং ১০টি জোনে বিভক্ত করা হয়।
সময়ের পরিক্রমায় নানা সুযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে গুলশান। সড়ক-বাতি, কড়া পাহারার চেকপোস্ট, সুউচ্চ আবাসিক ভবন, কাঁচাবাজার, অভিজাত শপিংমল, সুপারস্টোর, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ব্যাংক, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব, পার্লার জিমনেসিয়ামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলশান এলাকায় দ্রুত বেড়েছে। গুলশানের পূর্ব পাশে বারিধারা পর্যন্ত দূতাবাস ও কূটনৈতিক বাসভবন বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া গুলশান ঘেরা এলাকাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২০০৪ সালে গুলশানের কিছু অংশে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে সরকার। এরপরই গুলশান এলাকায় বাড়তে শুরু করে বাণিজ্যিক ভবন এবং দোকানের সংখ্যা। ১০ বছরের মধ্যে উন্নয়নের শীর্ষ স্রোতে পৌঁছায় গুলশান। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে আকাশচুম্বী হতে শুরু করে জমি ও ফ্ল্যাটের দাম।
ভোলা গ্রামের যে দুটি নিদর্শন এখনও এই এলাকায় বিদ্যমান, তার মধ্যে একটি হলো- গুলশান জামে মসজিদ, যা পূর্বে ভোলা জামে মসজিদ নামে পরিচিত ছিল। এটি আনুমানিক ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গুলশান এভিনিউতে মসজিদ কমপ্লেক্সের বাইরে টাঙানো সাইনবোর্ডে পুরানো নামটি রয়েছে।
পুরোনো সেই দিনের কথা:
ঐতিহাসিক মুনতাসির মামুন লিখেছেন, মডেল টাউন যখন গড়ে ওঠে তখন সেখানে খোলা মাঠ ও অনেক কাঁঠাল গাছ ছিল। এর আগে, এটি খালবেষ্টিত নিচু এলাকা ছিল। পরবর্তীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার জন্য ওই জমিগুলো উঁচু করা হয়।
মুনতাসির মামুন তার “স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী” বইয়ে মোজাম্মেল হক বীরপ্রতীককে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি তার শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, “(প্রায় ৫০ বছর আগে) গুলশান ভোলার-টেঙ্গর নামে পরিচিত ছিল। এটির নাম ছিল ভোলা, টেঙ্গর বলতে বনে ভরা উচ্চভূমিকে বোঝায়। গুলশান ছিল তাদের আবাসস্থল।”
তিনি বলেন, “বর্ষাকালে আমাদের এলাকার (ভাটারা) লোকজন তিন মাসের জন্য ওই এলাকায় কৃষিকাজ করতে যেত। সাধারণত নদীর ধারের চর এলাকার মানুষ ওই উচু এলাকায় ধান মজুত করত। এছাড়া আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হলে মানুষজন সেখানে তাদের গবাদিপশু ও জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিত।”
ভোলা গ্রামের স্মৃতি বহন করে চলা আরেকটি স্থাপনা ভোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেটি পরে দক্ষিণ বাড্ডায় স্থানান্তরিত হয়। লেখক মিজানুর রহমানের “ঢাকা পুরাণ” বইয়ের তথ্য অনুসারে এটি ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
তিনি লিখেছেন, “১৯৬৪ সালের দিকে গুলশানের ঘন জঙ্গলে ছোট বাঘ বা মেছোবাঘ দেখা যেত। ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে গুলশানে ছিল পাখির কিচিরমিচির, এবং রাতে পুরো এলাকায় নেমে আসতো ঘন অন্ধকার। বর্তমান নিকেতনের আবাসিক এলাকাটি ছিল দ্বীপ। ঢাকার আশেপাশের মানুষ এখানে গরু চরাতে আসত। গুলশানের শুরুতে প্রায় ১,৩০০টি প্লট ছিল। পুরানো বাসিন্দাদের প্রায় ১০% ছিল বাঙালি।”
গুলশান-২ এর ৮০ নম্বর রোডের অন্তত দশটি বাড়ি এখনও দোতলা পুরনো বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এসব বাড়ির সামনে খোলা লন বা বাগান রয়েছে। বাড়ির ভেতরে রয়েছে বড় বড় গাছ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগের’ সন্ধান!
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির গর্ভে বিজ্ঞানীদের নজর
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে সমস্ত মারাত্মক ক্ষতি করে?
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের বসবাস বা দ্বীন ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করে রেখেছে যে সমস্ত বিধর্মী রাষ্ট্র
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২০২২ সালে সৌরজগতের বাইরে মিলেছে ২০০ গ্রহের সন্ধান
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওনে যেভাবে দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আবাসন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপিয়ানরা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাওসে মুসলমানদের জীবনধারা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাতারের মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় শত শত চিহ্ন
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (২)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (১)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)