অমুসলিম মহিলাদের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা:
‘আমি যেন বিশ বছরের এক সুদীর্ঘ অন্ধকার রাত কাটিয়েছি’ -জার্মান নওমুসলিম তানিয়া পোলিং
, ০৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
জার্মান মেয়ে তানিয়া পোলিং। পাশ্চাত্যের আর দশটা মেয়ের মতোই ছিল তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন। তার কাছে জীবনের অর্থ ছিল, খাও দাও ফুর্তি কর। কিন্তু হামবুর্গের একটি বিপণী কেন্দ্রে বোরকা পরিহিতা একজন মুসলিম নারী তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। এ নারীকে লক্ষ্য করে সে এবং তার কয়েকজন বান্ধবী বোরকা নিয়ে উপহাস করে বলেছিলো, ‘অসুস্থ রোগীর মতো এ কী পোশাক তুমি পরেছ?’ কিন্তু ঐ মহিলা এর উত্তরে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এ পোশাকই মানসিক সুস্থতা ও ভারসাম্যের নিদর্শন এবং বোরকাই নারীকে দেয় স্বাধীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তা’। এরপর তারা নিজ নিজ পথে ফিরে গেল। কিন্তু সামান্য এই বাক্যই তানিয়া পোলিংয়ের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।
তানিয়া পোলিং বলেন, সেই মহিলার বক্তব্য নিয়ে বহুদিন ধরে ভাবনায় মগ্ন থাকলাম। অবশেষে আমি বিভিন্ন দেশের মুসলিম ভাই-বোনদের সাথে কথা বলে উপলব্ধি করলাম যে, বোরকা নারীর জন্য কোন সীমাবদ্ধতাই তৈরী করে না, বরং তাদেরকে সমাজে বেশি বেশি কাজ করার সুযোগ ও সুস্থ উপস্থিতির নিরাপত্তা দেয়।’
আমি বুঝতে পারলাম, কেবল বস্তুগত সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে দেয় না কাঙ্খিত সুখ ও প্রশান্তি। আধ্যাত্মিকতামুক্ত ও ধর্মহীন পরিবেশে ব্যাপক সম্পদ ভোগ করেও মানুষ যে সুখী হয় না তার প্রমাণ হল পাশ্চাত্যের জনগণের প্রশান্তিহীনতা। পশ্চিমা মতাদর্শের মূল কথাই হল, পার্থিব জীবন, ভোগের জীবন। মৃত্যুর পরে কিছুই নেই। এ বিষয়টি পশ্চিমাদেরকে উদ্দেশ্যহীনতার যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বলা হয়েছে, মৃত্যুই মানুষের জীবনের শেষ কথা নয়। পরকালে রয়েছে সৎ কাজের জন্য অশেষ পুরস্কার। আর এই চিন্তা নিয়ে দ্বীনদার মানুষেরা বেশি বেশি ভাল কাজ করেন। ফলে মৃত্যু নিয়ে তারা শঙ্কিত থাকেন না।
তানিয়া পোলিং বলেন, ‘আমি যেন বিশ বছরের এক সুদীর্ঘ অন্ধকার রাত কাটিয়েছি এবং এরপর আমার জীবনে এসেছে সূর্যোদয়। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূর্য আমাকে পরিণত করেছে বসন্তের এক প্রাণোচ্ছ্বল নব কিশলয়ে, যে কিশলয় জেগে উঠেছে বিশ বছরের দীর্ঘ শীত-নিদ্রার পর।’
তানিয়া বলেন, ‘আমি এই বাস্তবতা বুঝতে পেরেছি যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে তাদের মহৎ প্রকৃতি ও আত্মার কারণে, শরীরের কারণে নয়। তিনি বলেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অন্যান্য দিক যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিক সম্পর্ক এগুলিও আমার কাছে চরম বিস্ময়কর ও আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতির কোন ভৌগোলিক সীমারেখা বা জাতিগত সীমানা আমি খুঁজে পাইনি। মুসলমানরা সবাই একই লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এভাবে যতই মুসলমানদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বাড়ছিল ততই উনাদের প্রতি আমার সম্মান ও ভালোবাসা বাড়তে থাকে। অবশেষে আমি এটা অনুভব করলাম যে, আমি তো নিজেই মুসলমান হয়ে গেছি।’
তিনি পশ্চিমা সমাজ সম্পর্কে বলেছেন, পশ্চিমাদের মধ্যে মানবীয় ও স্নেহময় সম্পর্ক খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে বাহ্যিকভাবে পরিবার ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও সবাই যেন একাকিত্ব অনুভব করছে ও একাকী জীবন যাপন করছে। মুসলমান হওয়ার পর আমি নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বাবা-মায়ের সঙ্গে জীবন যাপন করাকেই এখনও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি মুসলমান থাকার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আমার বাবা-মাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। এমনকি তারা আমার সম্মানিত দ্বীন ইসলামী আচার-আচরণকে আমার অতীতের আচরণের চেয়ে বেশি পছন্দনীয় বলে মনে করেন। আমি অবসর সময়ে অন্য যে কোন কাজের চেয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং জার্মান ভাষায় অনূদিত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিষয়ে দ্বীনি বই-পুস্তক বেশি অধ্যয়ন করি।
তানিয়া পোলিং মনে করেন, তিনি যা যা হারিয়েছেন তার বিনিময়ে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। সবকিছু থাকলেও মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কারণে বাস্তবে কোন কিছুই না থাকার বেদনা বা অস্তিত্বহীনতার বেদনা অনুভব করতেন। কিন্তু এখন মহান আল্লাহ পাক উনাকে পেয়ে এর মাঝেই যেন সবকিছু খুঁজে পাচ্ছেন। তিনি এখন পেয়েছেন আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা ও আত্মার মুক্তি, আত্মিক প্রশান্তি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতো নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ফলে পেয়েছেন পবিত্র কুরআন শরীফ যা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া বিধান এবং ইহা তার জন্য সবচেয়ে বড় পুঁজি।
-উম্মু রাহাত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)