সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মা’রিফাত-মুহব্বত তালাশের পথে একটি ঘটনা
, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয। মা’রিফাত-মুহব্বত প্রাপ্তির পথে একজন অভিজ্ঞ লোকের অতীব প্রয়োজন। এ পথের অভিজ্ঞ লোকের তত্ত্বাবধান ব্যতীত কখনই কামিয়াবীর আশা করা যায় না। বরং অনেকাংশে উল্টো ফল হয়। গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে ইহকাল-পরকাল উভয়কালই বরবাদ হয়ে যেতে পারে।
সুলত্বানুল আউলিয়া কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অনেক পূর্বেই বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে তিনি কামিল শায়েখ উনার তালাশে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা সহ্য করেছিলেন।
এ পথের একটি ঘটনা যা সবার জন্যই ইবরত নছীহতপূর্ণ। যা উনার সম্মানিত শায়েখ সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ছোহবত লাভের পূর্বের বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। সুলত্বানুল আউলিয়া, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি একবার বাগদাদ শরীফ হতে বের হয়ে সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলাম। কিছুদিন বহু কষ্টে পথ চলার পর একদা সিরিয়ার নিকটবর্তী কোন এক শহরে পৌঁছলাম। সেখানে হযরত আহাদ মুহম্মদ আল ওয়াহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি নামক একজন কামিল ওলী ছিলেন। যিনি একটি গুহায় অবস্থান করতেছিলেন। আমি উনার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম, তিনি নিজ আসনে বসে আছেন। উনার হুজরা শরীফের দরজার নিকট দুটি হিংস্র বাঘ দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আমাকে দেখে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকলেন। আমি বাঘ দুটিকে দেখে উনার ডাকে সাড়া দিব কি-না তা ভাবনা-চিন্তা করছিলাম।
পরক্ষণে আমি চিন্তা করলাম, বাঘ দুটি তো সেই বুযূর্গ ব্যক্তি উনার খাদিম। তাহলে সেক্ষেত্রে কোন চিন্তা থাকার কথা থাকতে পারে না। আমি সাহস সঞ্চয় করে উনার নিকটবর্তী হলাম। দেখলাম বাঘ দুটি আমাকে কিছুই বললো না। বরং সস্থানে দাঁড়িয়ে রইলো। বুযূর্গ ব্যক্তি আমাকে দেখে বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত তালাশ করছেন। তিনি আমাকে অনেক নছীহত মুবারক করলেন। বললেন, মনে রাখবেন, আপনি যদি কারো ক্ষতি না করেন তাহলে কেউ আপনার ক্ষতি করবে না। আপনি দুটি উপদেশ মনে রাখবেন। তাহলে এই পথে কামিয়াবী লাভ করা সহজ হবে। একটি হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইরশাদ মুবারক-
مَنْ هَابَ اللهَ هَابَهُ كُلُّ شَىْءٍ
অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে সমস্ত মাখলূক্বাত তাকে ভয় করে।”
কাজেই আপনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবেন। কখনো নির্ভয় হবেন না।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার ইরশাদ মুবারক-
أَنُلْزِمُكُمُوهَا وَأَنْتُمْ لَهَا كَارِهُونَ
অর্থ: “তোমরা চাইবে না, অপছন্দ করবে আর তোমাদের জোর করে (নিয়ামত) চাপিয়ে দেয়া হবে? (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ কাউকে জোর করে কোন নিয়ামত দেয়া হবে না। নিয়ামত পেতে হলে চাইতে হবে। প্রাণপণ চেষ্টা-কোশেশ করতে হবে। জান মাল দ্বারা চেষ্টা-কোশেশ করবেন। কঠিনভাবে রিয়াযত-মাশাক্কাত করবেন।
সুলত্বানুল আউলিয়া, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, পরবর্তী জীবনে আমার উক্ত নছীহত মুবারকদ্বয় খুবই উপকারে এসেছে। আমি বুযুর্গ ব্যক্তির নছীহত মুবারক দুটি সবসময় স্মরণ রেখেছিলাম।
পরে উক্ত বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন? আমি বললাম, বাগদাদ শরীফ থেকে। তিনি বললেন, হে মুঈনুদ্দীন! নিজকে সৃষ্টির সেরায় নিয়োজিত রাখুন। যেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় বান্দাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তারপর কিছুক্ষণ নিরব থেকে পুনরায় বললেন, আমি লোকালয় ও জন কোলাহল হতে দূরে থেকে শুধুমাত্র একটি জিনিসের ভয়ে দীর্ঘ ত্রিশ বছর এই নির্জন স্থানে কান্নাকাটি করে অতিবাহিত করছি।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উহা কি? তিনি বললেন, পবিত্র নামায। আমি পবিত্র নামায আদায় করার পর চিন্তা করি, আমার এ পবিত্র নামায কবুল হয়েছে কি না? যদি পবিত্র নামায উনার করণীয় কাজগুলো তথা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাবগুলোর মধ্যে বিন্দুমাত্র ত্রুটি বা ভুল হয়ে যায় তবে আমার সকল চেষ্টা-কোশেশ ও একাগ্রতা নিষ্ফল হয়ে গেল। হে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে বিচরণকারী! যদি আপনি পবিত্র নামাযের মত নামায আদায় করতে সক্ষম হন তাহলে যেন এক মহান কর্তব্যকাজ সম্পন্ন করলেন। অন্যথায় নিজের অমূল্য জীবন ও সময় অযথা নষ্ট করলেন। অতীব গুরুত্ব সহকারে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পবিত্র নামায আদায় করবেন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)