সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৫)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইরাকের অন্তর্গত সাবযাওর একটি সুন্দর মনোরম, নয়নাভিরাম স্থান। তৎকালে ইয়াদগারে মোহাম্মদ নামক একজন বদদ্বীন ও কর্কশ স্বভাবের শিয়া সম্প্রদায়ের লোক সাবযাওয়ারের শাসনকর্তা ছিল।
সে সুন্নীদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর হস্ত ছিল। তার এলাকায় কোন শিশুর নাম আবু বকর, ওমর ফারুক, উছমান গণী, আয়িশা ইত্যাদি নাম রাখা আইনত দ-নীয় অপরাধ ছিল। নাঊযুবিল্লাহ! কেউ যদি উক্ত নাম মুবারক রাখতো কিংবা ঐ নাম মুবারকে ডাকতো তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হতো। নাঊযুবিল্লাহ! বাদ্য-বাজনা ও নৃত্যগীত ব্যতীত তার আর কোনো কাজ ছিল না। সে আমোদ ফূর্তি করার জন্য শহরের বাইরে একটি সুরম্য উদ্যান রচনা করে রেখেছিল। সেখানে সে কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতো। এতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি হাউয ছিল।
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত বাগানে গেলেন। সে হাউযের নিকটবর্তী একটি গাছের ছায়ায় বসলেন। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তিনি উক্ত হাউযে গোসল করে নামায পড়লেন। তারপর পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে মশগুল হলেন।
কিছুক্ষণ পরই খবর ছড়িয়ে পড়লো যে, ইয়াদগারে মোহাম্মদ বাগানে ভ্রমণের জন্য আসছে।
উক্ত বাগানের তত্ত্বাবধায়করা একজন নূরানী চেহারাবিশিষ্ট সুফী, দ্বীনদার-পরহেজগার ব্যক্তিকে বাগানে দেখতে পেলো। পক্ষান্তরে শাসনকর্তার অমানষিক ক্রোধ-অত্যাচারের কথা স্মরণ করে বুযূর্গ ব্যক্তির পরিণামও চিন্তা করে ভীত-সন্ত্রস্ত হলো। তারা মহান ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত আদবের সাথে খাদিম সাইয়্যিদ খাজা ফখরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাধ্যমে বিষয়টি উনাকে অবহিত করলো। তিনি মৃদু হেসে বললেন, তোমাদের ইচ্ছা হলে তোমরা চলে যাও এবং ঐ গাছটির নিচে অবস্থান করো। আমি এখান থেকে উঠবো না। আদেশ মতো সেই গাছের নীচে গিয়ে উনারা বসে পড়লো। এদিকে শাহী মহলের খাদিমরা বাগানে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গম্ভীর ও নূরানী চেহারা মুবারক দেখে ভয় পেলো; উনাকে এখান থেকে সরে যাওয়ার কথা বলার সাহসও পেলো না। অগত্যা তারা সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত মুছল্লার পার্শ্বে ইয়াদগারে মোহাম্মদের জন্য স্টেজ বা মঞ্চ তৈরী করলো।
ইয়াদগারে মোহাম্মদ বাগানে পৌঁছে তার মঞ্চের পাশাপাশি সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উপবিষ্ট দেখে অতিশয় রাগান্বিত হলো। নিজের খাদিমকে বললো, এই দরবেশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এখানে কেন? উনাকে এখান থেকে বের করে দিলে না কেন? একথা শোনামাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাথা মুবারক উঠালেন। জালালী ও অসন্তুষ্টির এমন দৃষ্টি তার প্রতি নিক্ষেপ করলেন, যার ফলে তার হাত-পা তথা সর্বশরীরে কম্পন আরম্ভ হলো; যার ফলে সে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যমীনে পড়ে গেলো। ইয়াদগারে মোহাম্মদের খাদিম ও সঙ্গী, বন্ধু-বান্ধবরা এ অবস্থা দেখে দৌঁড়ে গিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারকে লুটিয়ে পড়লো। আযিযী ইনকিসারী বা কাকুতি-মিনতি সহকারে আরয করলো, হুযূর! তার বেয়াদবী ক্ষমা করুন। সে জানতো না যে, আপনি রূহানী শক্তিসম্পন্ন একজন কামিল ওলী। এদের কান্নাকাটি ও কাকুতি-মিনতির কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দয়া হলো। তিনি স্বীয় খাদিমকে বললেন, “এ হাউয থেকে কিছু পানি নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে এ লোকটির মুখে ছিটিয়ে দাও।”
খাদিম সাইয়্যিদুনা খাজা ফখরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার নির্দেশ মুবারক পালন করা মাত্র ইযাদগারে মোহাম্মদ চেতনাপ্রাপ্ত হলো। এখন তার মধ্যে অহঙ্কার ও অবাধ্যতার চিহ্ন মাত্র ছিল না। সে উঠেই সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারকে লুটিয়ে পড়লো এবং খালিছ দিলে আরয করলো, হুযূর! আজ থেকে আমি আমার পূর্বকৃত সমুদয় অপকর্মের জন্য খালিছ দিলে তওবা করছি। দয়া করে আমার অপরাধ ক্ষমা করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দয়ার সাথে তাকে স্বীয় ক্বদম মুবারক থেকে উঠিয়ে বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খান্দানের সাথে মুহব্বতের দাবি করে উনাদের পায়রবী না করা সম্পূর্ণ নিরর্থক। এ প্রসঙ্গে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশধর ইমাম আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ফযীলত এমন সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহীরূপে বর্ণনা করলেন যে, ইয়াদগারে মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলো। পরে সকলে উনার নিকট খালিছ তওবা করলো। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)