সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৮)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ০২ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শিশুকালেই তা’লীম তরবিয়ত দানকারীর মাক্বামে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অতি অল্প বয়স মুবারকে তিনি সমবয়সীদেরকে তা’লীম তরবিয়ত দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গভীর তায়াল্লুক, নিছবত প্রাপ্ত উনারই বহিঃপ্রকাশ। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهٗ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتّٰى النَّمْلَةَ فِى جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوْتَ لَيُصَلُّوْنَ عَلٰى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক এবং উনার সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আসমানবাসী, যমীনবাসী এমনকি গর্তের পিপিলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত সবাই মুয়াল্লিম (তা’লীম-তরবিয়তদাতা) উনাদের উপর ছলাত পাঠ করেন। (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক বিষয়ে অভিজ্ঞ লোক রয়েছে। যিনি যে বিষয়ে মাহির বা সুদক্ষ, অভিজ্ঞ হবেন তা শিশুকাল থেকে প্রকাশ পেয়ে থাকে। গভীরভাবে লক্ষ করলে শিশুর বাবা-মা এমনকি অপরাপর ব্যক্তিগণও তা আঁচ করতে পারেন। বাবা-মা তা আঁচ করত: সন্তানকে সে অনুযায়ী তা’লীম-তরবিয়ত দিলে শিশুর জন্য সহজ হয়। আর অভিজ্ঞতার বিষয়টি অল্প সময়ে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভবিষ্যত জীবনে যে হিদায়েতের কান্ডারী হবেন, তা’লীম তরবিয়তের মাধ্যমে উনার জীবন মুবারক অতিবাহিত হবে তা শিশুকালেই বিকাশ ঘটেছিল।
উনার বাড়ীর পাশে আঙ্গুর বাগান সংলগ্ন একটা মাঠ ও একটা টিলা বা পাহাড় ছিল। তিনি দুপুরের পর সেই মাঠটাকে সামনে রেখে একটা পাথরের উপর বসে যিকিরে মশগুল থাকতেন। এ সময় উনার সমবয়সী ছেলেরা ঐ মাঠে খেলাধুলায় মেতে উঠতো। তারা উনাকে বার বার তাদের সাথে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার জন্য পীড়া-পীড়ি করতো। তিনি তাদেরকে ভদ্র ও অতি কোমল স্বরে বলতেন, “আসলে তোমাদের এসব আমার ভাল লাগে না।” তিনি তাদেরকে আরো বলতেন, আচ্ছা বলতো, তোমরা এ খেলাধুলা থেকে কি লাভ করে থাকো?
তারা বলতো, খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়াম হয়। যার ফলে শরীর, মন ভাল থাকে। তিনি তাদেরকে বললেন, আচ্ছা আমি যদি তোমাদেরকে এমন একটা শিক্ষা দান করি যার মাধ্যমে তোমাদের দেহ, মন উভয়ই সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে পারবে। তারা বললো, এমনকি থাকতে পারে যার মাধ্যমে আপনার কথার সত্যতা যাচাই হবে? তিনি বললেন, তাহলে আসো। একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক। তারা রাজী হলো।
তখন সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে একটা ঝর্ণার পাশে নিয়ে গেলেন। অযু করতে বললেন। তারা অযু করার পর তাদেরকে একটি সুন্দর ফুল বাগানের পাশে নিয়ে গেলেন। সেখানকার পরিবেশ ছিল আরো সুন্দর ও মনোরম। একদিকে পানির ঝর্ণাধারা অপর দিকে ফুলের বাগান। গোলাপের সুবাসে স্থানটি ছিল মোহিত। তিনি তাদেরকে সেখানে গোল করে বসালেন। নফী-ইছবাতের (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) যিকির শিক্ষা দিয়ে যিকির শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের হালের সৃষ্টি হলো। এভাবে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো। পরে তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলো। তারা স্বাভাবিক হওয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জড়িয়ে ধরলো। জিজ্ঞাসা করলো, এ শিক্ষা আপনি কোথা থেকে শিখেছেন?
তিনি বললেন, আমার সম্মানিত আব্বাজান উনার কাছ থেকে। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন এটা তোমাদের কাছে কেমন লাগলো? উত্তরে তারা বললো, অত্যন্ত সুন্দর। বেমেছাল, অতুলনীয়। আপনি যা বলেছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশি ইতমিনান (শান্তি) লাভ করেছি। আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা প্রতিদিন এখানে এসময় একবার মিলিত হতে পারি। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি এই আমল মুবারক অনেক পূর্ব থেকে করে আসছি। তোমরাও আমার ছোহবত মুবারকে থাকলে আমি অত্যন্ত খুশি হবো। পরবর্তীতে সবাই প্রতিনিয়ত উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতো। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)