সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৪৭)
, ০৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ১১ পৃষ্ঠায় নিজে প্রশ্ন করে নিজেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গোজামিল দিয়ে জবাব লিখেছে যে- দুই. পৃথিবীর সকল স্থানে একই সাথে রাত বা দিন হয় না। বরং একস্থানে যখন রাত অন্যস্থানে তখন দিন, তাহলে একই দিনে সমগ্র বিশ্বে রোযা, ঈদ, কুরবানী পালন করা কি করে সম্ভব?
সে উত্তর লিখেছে যে, প্রথমত: সহজ জবাব দিয়ে বলতে হয়, শুক্রবারের জুমার নামায জাপান থেকে আলাস্কা পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে শুক্রবারেই আদায় করা হয় কোথাও শনিবার বা বৃহস্পতিবারে আদায় করা হয় না।
৬৪ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে- শুক্রবারের জুমার নামায যেভাবে সারা পৃথিবীতে শুক্রবারেই আদায় করা হয়। কোথাও বৃহস্পতিবারে বা শনিবারে আদায় করা হয় না। ঠিক সেভাবেই উদাহরণস্বরূপ জুমুয়াবার প্রথম রমাদ্বান বা ঈদের দিন হলে সারা পৃথিবীতেই জুমুয়াবারে ১ম রমাদ্বানের রোযা বা ঈদের নামায আদায় করতে হয়।
সঠিক জাওয়াব: উপরোক্ত কথায় সে সূক্ষ্মভাবে মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ প্রথমত: পবিত্র ইয়াওমুল জুমুয়াহ পবিত্র জুমুয়ার ছলাত তো সারাবিশে^ একই দিনে পড়া হয় না। বরং ভিন্ন দিনে ভিন্ন তারিখে পড়া হয়। জুমুয়াবার নামে যেমন সারাবিশে^ বার আছে, তদ্রুপ ইয়াওমুস সাবতি (শনিবার) থেকে শুরু করে ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত উক্ত সাত দিনের একই নামে সারাবিশে^ বার রয়েছে। তাই বারের ক্ষেত্রে নামের মিল থাকায় সারাবিশে^ একই দিনে জুমুয়াবার দাবি করাটা মাহবুবের আশাদ্দুদ দরজার জিহালতী, ধোঁকাবাজি ও জঘন্যতম মিথ্যাচারের শামিল।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়ে এ ধরনের মিথ্যাচার, প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি নিকৃষ্ট মুনাফিকীর প্রমাণ। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
অর্থ: নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ-১৪৫)
দ্বিতীয়ত: পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করাটা নতুন চাঁদ দেখার সাথে জড়িত। কিন্তু পবিত্র জুমুয়াবারে পবিত্র জুমুয়ার ছলাত আদায় করা তো জুমুয়াবার নামক বারের সাথে সম্পর্কযুক্ত, চাঁদ দেখা বা না দেখার সাথে জড়িত নয়। পৃথিবীতে এমন কেউ আছে কি যে বলেছে, নতুন চাঁদ দেখলে পবিত্র জুমুয়ার ছলাত পড়বো, আর চাঁদ না দেখলে জুমুয়ার ছলাত পড়বো না? আসলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উক্ত বিষয় নিয়ে তাদের এসব কথা, চাপাবাজি আর ধোঁকাবাজি ছাড়া অন্য কিছু নয়। যা কোন মুসলমানের কাজ নয়।
তৃতীয়ত: সূর্যাস্ত হওয়ার সাথে সাথে সারাবিশ্বে নতুন করে দিন শুরু হয়। মাত্র ৪-৫ ঘন্টার পরেই সর্বপ্রথম পবিত্র জুমুয়া আদায়কারী দেশটিতে আর জুমুয়াবার থাকে না, বরং শনিবার দিন এসে যায়। যার কারণে সারাবিশ্বে ১৫-২৪ ঘন্টা পার্থক্য থাকায় সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র জুমুয়া আদায় করা কখনো সম্ভব হয় না। তাই শুধুমাত্র জুমুয়াবার নামক দিনকে কেন্দ্রকরে একই দিনে সারাবিশ্বে জুমুয়া পালিত হয়, এ কথা দাবি করা, এটা চরম মিথ্যাচার ও অপপ্রচার। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)