সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
, ০৬ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আর এটাই উনার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচিতি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন ‘আর রবি‘য়াহ তথা চতুর্থ।’ সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মর্যাদা-মর্তবা মুবারক হচ্ছেন, তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের প্রায় ৩ বছর পূর্বে ২০শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ ছুবহে ছাদিক্ব উনার সময় বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৩৭ বছর পার হয়ে ৩৮ বছর চলাকালীন। সুবহানাল্লাহ! আর উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৫২ বছর পার হয়ে ৫৩ বছর চলাকালীন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, দুনিয়ার কোনো কিতাবে উপরোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ নেই; বরং এটা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার একখানা অভূতপূর্ব বেমেছাল মহাসম্মানিত ফায়ছালা মুবারক, যা উনার বেমেছাল শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় বিশেষ ঘটনা মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সময় উনার এবং উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ চার জন সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
دَخَلَ عَلَيْهَا اَرْبَعُ نِسْوَةٍ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْـجَمَالِ وَالنُّوْرِ مَا لَا يُوْصَفُ فَقَالَتْ لَـهَا اِحْدَاهُنَّ اَنَا اُمُّكِ حَضْرَتْ حَوَّاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ اٰسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ كُلْثُوْمٌ عَلَيْهَا السَّلَامُ اُخْتُ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ مَرْيَـمُ بِنْتُ عِمْرَانَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اُمُّ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ جِئْنَا لِنَلِىْ مِنْ اَمْرِكِ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য চারজন সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করলেন, উপস্থিত হলেন। উনাদের চেহারা মুবারক অত্যন্ত সুন্দর ও নূরানী। ছূরতান উনাদেরকে পরিচিত মনে হচ্ছিলো না। তখন উনাদের মধ্যে প্রথমজন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি আপনার সম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! দি¦তীয়জন বললেন, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসিয়াহ বিনতে মুযাহিম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তৃতীয়জন বললেন, আমি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বোন হযরত কুলছূম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! চতুর্থজন বললেন, আমি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমরা এসেছি আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/৪৫)
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টা ফায়ছালা মুবারক করেন। অর্থাৎ তিনি কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শুধু উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সময় নয়; বরং মহাসম্মানিত হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রত্যেকের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়ই উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ বিশেষ সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেছেন এবং উনারা উনাদের যথাযথ সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়ে নিজেদেরকে ধন্য করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র সিজদারত অবস্থায় এবং পবিত্র অঙ্গুলি মুবারক উত্তোলন করা অবস্থায় যমীনে তাশরীফ মুবারক:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন, পবিত্র সিজদারত অবস্থায় এবং অঙ্গুলি মুবারক উত্তোলন করা অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখেছেন, ঠিক তেমনিভাবে উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতু নিসায়ি ‘আলাল আলামীন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিও সিজদারত অবস্থায় এবং সম্মানিত ও পবিত্র অঙ্গুলি মুবারক উত্তোলন করা অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قَالَتْ فَوَلَدَتْ اَلنُّوْرُ الرَّابِعَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءُ (حَضْرَتْ فَاطِمَةُ) عَلَيْهَا السَّلَامُ فَوَقَعَتْ حِيْنَ وَقَعَتْ عَلَى الْاَرْضِ سَاجِدَةً رَّافِعَةً اُصْبُعَهَا.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর সাইয়্যদাতু নিসায়ি ‘আলাল আলামীন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি যখন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন তিনি সিজদারত অবস্থায় এবং সম্মানিত ও পবিত্র অঙ্গুলি মুবারক উত্তোলন করা অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা শরীফ ১/৪৫)
পবিত্র জিসম মুবারক থেকে সারা কায়িনাতে নূর মুবারক বিচ্ছূরিত হওয়া:
উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ এমনিতেই নূরানী। সুবহানাল্লাহ! তথাপি সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের কারণে উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ আরো নূরানী হয়ে গেলেন এবং উনার সম্মানিত ও পবিত্র জিসম মুবারক থেকে সম্মানিত নূর মুবারক বিচ্ছূরিত হতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত নূর মুবারক উনার আলোতে সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর চতুর্দিকে এবং সারা কায়িনাতে উনার সম্মানিত নূর মুবারক উনার আলো মুবারক ছড়িয়ে পড়লেন। সুবহানাল্লাহ!
জান্নাত থেকে সম্মানিত হুর উনাদের আগমন এবং জান্নাতী পানি মুবারক দ্বারা সম্মানিত গোসল মুবারক করানো:
আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ চার জন সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেই শুধু প্রেরণ করেননি; বরং অসংখ্য-অগণিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং অসংখ্য-অগণিত সম্মানিত জান্নাতী বিশেষ হুর-গেলমান উনাদেরকেও প্রেরণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিতা জান্নাতী বিশেষ হুর উনাদের হাত মুবারক-এ গোসল মুবারক করানোর জন্য বড় বাটি এবং উজ্জ্বল, চাকচিক্যময় পানির মশক ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! প্রত্যেকটি মশক সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার সম্মানিত পবিত্র পানি মুবারক দ্বারা পরিপূর্ণ ছিলেন। এই সকল সম্মানিতা বিশেষ হুর উনারা অত্যন্ত আদবের সাথে আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার সম্মানিত পানি মুবারক দ্বারা সম্মানিত গোসল মুবারক করান এবং খুশবূ মুবারক মিশ্রিত সম্মানিত জান্নাতী লেবাস মুবারক পরিধান করিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনারা অত্যন্ত আদবের সাথে উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত কোল মুবারক-এ আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে তুলে দেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেই উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য সম্মানিত দু’য়া মুবারক করা:
আল্লামা হাফিয আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মদ মুহিব্বুদ্দীন ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
قَالَتْ فَوَلَدَتْ اَلنُّوْرُ الرَّابِعَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءُ (حَضْرَتْ فَاطِمَةُ) عَلَيْهَا السَّلَامُ فَوَقَعَتْ حِيْنَ وَقَعَتْ عَلَى الْاَرْضِ سَاجِدَةً رَّافِعَةً اُصْبُعَهَا.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর সাইয়্যদাতু নিসায়ি ‘আলাল আলামীন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি যখন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারকরত অবস্থায় এবং অঙ্গুলি মুবারক উত্তোলন করা অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ শরীফ ১/৪৫)
মূলত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পর সিজদারত অবস্থায় যেমন উনার উম্মত উনাদের গুণাহ মাফের জন্য সম্মানিত দু’য়া মুবারক করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পর সিজদারত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত উনাদের গুণাহ মাফের জন্য সম্মানিত দু’য়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উপরোক্ত সম্মানিত ওয়াকেয়াহ মুবারক সেই দিকেই ইঙ্গিত বহন করে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে খুশি প্রকাশ:
উনার পবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ কুল-কায়িনাতের সকলেই সম্মানিত ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র জিসম মুবারক থেকে বেহেশতী সুঘ্রাণ মুবারক:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র রেহেম শরীফ-এ থাকা অবস্থায় উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সবসময় সম্মানিত বেহেশতী সুঘ্রাণ মুবারক পেতেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন উক্ত বেহেশতী সুঘ্রাণ মুবারক উনার মাঝে শোভা পেতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন এই সম্পর্কে ‘নুযহাতুল মাজালিস’-কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَلَمَّا حَمَلَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الْاُوْلـٰى سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلْكُبْرٰى (حَضْرَتْ خَدِيـْجَةُ) عَلَيْهَا السَّلَامُ بِالنُّوْرِ الرَّابِعَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءِ (حَضْرَتْ فَاطِمَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ وَجَدَتْ رَائِحَةَ الْـجَنَّةِ تِسْعَةَ اَشْهُرٍ فَلَمَّا اَرْضَعَتْهَا اِنْتَقَلَتِ الرَّائِحَةُ اِلَيْهَا.
অর্থ: “যখন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র রেহেম শরীফ-এ ধারণ মুবারক করেন, তখন থেকে তিনি দীর্ঘ ৯ মাস (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত) সম্মানিত বেহেশতী সুঘ্রাণ মুবারক পেতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন উক্ত সম্মানিত বেহেশতী সুঘ্রাণ মুবারক উনার মাঝে শোভা পেতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস ২/১৭১)
মূলত, সম্মানিত জান্নাত মুবারকসহ সমস্ত কায়িনাত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইতি শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারণে সমস্ত প্রকার নিয়ামত মুবারক লাভ করেছে। শুধু তাই নয়, সম্মানিত জান্নাত মুবারক যে সুঘ্রাণ মুবারক লাভ করেছে, সেটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিস সালাম উনাদের থেকেই লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ! সেই সম্মানিত সুঘ্রাণ মুবারকই আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাঝে শোভা পেয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেয়া এবং সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৭ম দিন তথা ২৬ শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উনার সম্মানিত নাম মুবারক রাখেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক:
আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক হচ্ছেন ‘উম্মুল হাসান আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
‘হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’ ইসম বা নাম মুবারক রাখার বেমেছাল হিকমত মুবারক:
মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক মুতাবিক উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখেন ‘হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত সম্মানিত নাম মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন- উদ্ধারকারিণী, পৃথককারিণী, রক্ষাকারিণী। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখার পিছনে লক্ষ কোটি হিকমত মুবারক নিহিত রয়েছে। যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম-কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু আলোচনা করা হলো-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّـمَا سَـمَّيْتُ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لِاَنَّ اللهَ فَطَمَ مَنْ اَحَبَّهَا مِنَ النَّارِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যাঁরা মুহব্বত করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। সুবহানাল্লাহ! তাই উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা হয়েছে ‘হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’ ।” সুবহানাল্লাহ! (ইমাতুল ইসমা’ ৪/১৯৬)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ للهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّـمَا سَـمَّيْتُ بِنْتِـىْ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لِاَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَطَمَهَا وَفَطَمَ مُـحِـبِّـيْهَا عَنِ النَّارِ .
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম রাখার কারণ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে এবং উনার মুহব্বতকারী উনাদেরকে জাহান্নাম থেকে পৃথক রেখেছেন, মুক্তি দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল ফিরদাউস লিদ দায়লামী ১/৩৪৬)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْـنَتِـىْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَوْرَاءُ اٰدَمِيَّةٌ لَـمْ تَـحِضْ وَلَـمْ تَطْمِثْ وَاِنَّـمَا سَـمَّاهَا حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لِاَنَّ اللهَ فَطَمَهَا وَمُـحِبِّـيْهَا مِنَ النَّارِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে), লখতে জিগার আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘মহাসম্মানিতা মানবীয় হুর মুবারক’। সুবহানাল্লাহ! মহিলাদের যে স্বাভাবিক মাজূরতা রয়েছে সেটা উনার নেই। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে এবং উনার মুহব্বতকারী উনাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তাই উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’ রাখা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখে বাগদাদ ১২/৩৩১, কানযুল ‘উম্মাল ১২/১০৯, মু‘জামুশ শুয়ূখ ২/২১৬)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلنُّوْرِ الرَّابِعَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءِ (حَضْرَتْ فَاطِمَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ يَا حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَدْرِيْنَ لـِمَ سَـمّيْت حَضْرَتْ فَاطِمَة عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لـِمَ سَـمَّيْتَ حَضْرَتْ فَاطِمَة عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ فَطَمَهَا وَذُرِّيَّتَهَا عَنِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম! আপনার কি জানা রয়েছে যে, কেন আপনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’ রাখা হয়েছে? সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কেন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’ রাখা হয়েছে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে এবং উনার সম্মানিত বংশধর উনাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রাখবেন। সুবহানাল্লাহ! এ জন্য উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা হয়েছে, ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! (যাখায়িরুল ‘উক্ববাহ শরীফ ১/২৬)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَحَرَّمَ اللهُ ذُرِّيَتَهَا عَلَى النَّارِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত চরিত্র মুবারক পবিত্র থেকে পবিত্রতম রেখেছেন, ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এবং উনার সম্মানিত বংশধর উনাদের উপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে বাযযার ১/২৯৫, ৫/২২৩, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৪/১৮৮, মুস্তাদরকে হাকিম ৩/১৫২, ৩/১৬৫, আস সওয়ায়িকুল মুহরিক্বহ)
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, উম্মুল আইম্মাহ, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যাঁরা জাররাহ থেকে জাররাহ পরিমান মুহব্বত করবেন, উনারা প্রত্যেকই নাজাতপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ! আর এ বিষয়টি উনার সম্মানিত নাম মুবারক থেকেই স্পষ্টভাবে প্রকাশিত প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ছূরত মুবারক
বিদ্ব‘য়াতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মাক্বাম মুবারক-এ অনন্যা।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুবহু নকশা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু নকশা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের নিসবত মুবারক ছিলো উভয় দিক থেকে। অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের থেকে সমানভাবে সম্মানিত নিসবত মুবারক পেয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার প্রায় অনুরূপ সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ত্ববীয়ত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী উভয় প্রকার শান মুবারক মিশ্রিত ছিলেন, তবে সম্মানিত জালালী শান মুবারক উনার কিছুটা প্রাধান্য ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ত্ববীয়ত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী উভয় প্রকার শান মুবারক মিশ্রিত ছিলেন, তবে সম্মানিত জালালী ত্ববীয়ত মুবারক উনার শান মুবারক বেশি প্রকাশ পেতেন।” সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ (حَضْرَتْ عَائِشَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ مَا رَاَيْتُ اَحَدًا اَشْبَهَ سَـمْتًا وَّدَلًّا وَّهَدْيًا بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ قِيَامِهَا وَقُعُوْدِهَا.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাল-চলন মুবারক, আচার-ব্যবহার মুবারক, কথা-বার্তা মুবারক, স্বভাব-চরিত্র মুবারক, কাজ-কর্ম মুবারক, উঠা-বসা মুবারক-এ আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণায় রয়েছে-
كَلَامًا وَّحَدِيْثًا.
অর্থাৎ “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কথাবার্তা মুবারক-এ, বর্ণনা ভঙ্গি মুবারক-এ আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম, বাইহাক্বী, ইবনে সা’দ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ (حَضْرَتْ عَائِشَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اِنَّا كُنَّا اَزْوَاجَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهٗ جَمِيْعًا لَّـمْ تُغَادِرْ مِنَّا وَاحِدَةٌ فَاَقْبَلَتْ اَلنُّوْرُ الرَّابِعَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءُ )حَضْرَتْ فَاطِمَةُ( عَلَيْهَا السَّلَامُ تَـمْشِىْ لَا وَاللهِ مَا تَـخْفٰى مِشْيَتُهَا مِنْ مِّشْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, একদা আমরা হযরত উম্মাহাতুল মু‘মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত ছিলাম। আমাদের মধ্য হতে কেউ অনুপস্থিত ছিলেন না। এমতাবস্থায় সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবি‘য়হ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সেখানে তাশরীফ মুবারক নিলেন। যিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! উনার চলার ভঙ্গি মুবারক ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চলার ভঙ্গি মুবারক উনার মধ্যে বিন্দু পরিমাণও পার্থক্য ছিলো না।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফাযায়িলুছ ছাহাবা লিন নাসায়ী, মুসনাদে ত্বায়ালসী, ইবনে সা’দ, দুলাবী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
সম্মানিত ইলম মুবারক
আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত তা’লীম মুবারক দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা। সুবহানাল্লাহ! তাহলে তিনি কত বেমেছাল সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন, সেটা জিন-ইনসান ও তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا اَنَا قَاسِمٌ وَّاللهُ يُعْطِىْ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন দাতা আর আমি হচ্ছি বণ্টনকারী।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ১/২৭, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে উনার সম্মানার্থেই সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সম্মানিত ইলম, আমল, ইখলাছ, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকসহ সমস্ত প্রকার সম্মানিত নিয়ামত মুবারক লাভ করেছেন, করছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ লাভ করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ كَانَ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ اَىُّ شَيْءٍ خَيْرٌ لِّلْمَرْاَةِ فَسَكَتُوْا فَلَمَّا رَجَعْتُ قُلْتُ لِسَيِّدَةِ نِسَاءِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ اَلنُّوْرِ الرَّابِعَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءِ )حَضْرَتْ فَاطِمَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ اَىُّ شَىْءٍ خَيْرٌ لِّلنِّسَاءِ اَوْ لِلْمَرْاَةِ قَالَتْ اَلَّا يَرَاهُنَّ الرِّجَالُ وَلَا يَرَوْنَـهُمْ فَذَكَرْتُ ذٰلِكَ لِلنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مِـمَّنْ قُلْتُ مِنْ سَيِّدَةِ نِسَاءِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ اَلنُّوْرِ الرَّابِعَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءِ (حَضْرَتْ فَاطِمَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِضْعَةٌ مِّـنِّـىْ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। একদিন তিনি (এবং অনেক বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ (সম্মানিত দরবারে নববী শরীফ-এ) বসে ছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (সবাইকে উদ্দেশ্য করে) জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন- মেয়েদের জন্য কোন আমলটা সবচেয়ে উত্তম? সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সকলেই চুপ থাকলেন। আমি (আস্তে করে পিছন থেকে উঠে) সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ-এ এসে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম- মেয়েদের জন্য কোন আমলটা সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেন, মেয়েদের জন্য সবচাইতে উত্তম আমল হচ্ছে, কোন পুরুষ সে মহিলাকে দেখবে না এবং সে মহিলা কোন পুরুষকে দেখবে না। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি সেখান থেকে এটা শুনে সরাসরি যেয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মেয়েদের জন্য শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে তারা কোন পুরুষকে দেখবে না এবং তাদেরকেও কোন পুরুষ দেখবে না। (এটা শুনে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- আপনি কার কাছ থেকে জেনে এটা বললেন? তিনি বলেন, আমি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে জেনে এটা বলেছি। সুবহানাল্লাহ! সেটা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন) এবং বললেন- সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি তো আমার সম্মানিত জিস্ম মুবারক উনার সম্মানিত গোশত মুবারক উনার একখানা সম্মানিত টুকরো মুবারক, আমার সম্মানিত লখতে জিগার মুবারক (সেজন্য তিনি হাক্বীক্বী বিষয়টা বলে দিয়েছেন, জানিয়ে দিয়েছেন)।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা সর্বপ্রথম উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রকাশ করেন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পুরুষ-মহিলা সকলের পূর্বে সর্বপ্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সাথে উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারাও সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সামান্য সময়ের ব্যবধানে খাইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনিও সংবাদ মুবারক পাওয়ার সাথে সাথে এসে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনারাই হচ্ছেন পুরুষ-মহিলা সকলের মাঝে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশকারিণী। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারকের আনজাম দেয়া:
মহান আল্লাহ পাক তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য মু‘য়াল্লিমাহ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকেসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, কিভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতে হয়। সুবহানাল্লাহ! যখন মুশরিকরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট-তাকলীফ দিতো এবং উনার উপর যুলুম নির্যাতন করতো, তখন একজন মা তার সন্তানকে যেভাবে স্নেহভরে আদর-যতœ করে থাকে, ঠিক সেইভাবে বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতেন। সুবহানাল্লাহ! এই জন্য উনার একখানা সম্মানিত লক্বব মুবারক হচ্ছেন “উম্মু আবীহা”। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন “তিনি উনার স্বীয় পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি যে কত বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন, এই বিষয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ عِنْدَ الْكَعْبَةِ وَجَمَعَ قُرَيْشٌ فِـىْ مَـجَالِسِهِمْ اِذْ قَالَ قَائِلٌ اَيُّكُمْ يَقُوْمُ اِلـٰى جَزُوْرِ اٰلِ فُلَانٍ فَيَعْمَدُ اِلـٰى فَرْثِهَا وَدَمِهَا وَسَلَاهَا ثُـمَّ يـَمْهِلُهٗ حَتّٰى اِذَا سَجَدَ وَضَعَهٗ بَيْنَ كَتِفَيْهِ فَانْبَعَثَ اَشْقَاهُمْ فَلَمّاَ سَجَدَ وَضَعَهٗ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَثَبَتَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا فَضَحِكُوْا حَتّٰى مَالَ بَعْضُهُمْ عَلـٰى بَعْضٍ مِّنَ الضِّحْكِ فَانْطَلَقَ مُنْطَلِقٌ اِلـٰى سَيِّدَةِ النِّسَاءِ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ الزَّهْرَاءِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَاَقْبَلَتْ تَسْعٰى وَثَبَتَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا حَتّٰى اَلْقَتْهُ عَنْهُ وَاَقْبَلَتْ عَلَيْهِمْ تَسُبُّهُمْ وَدَعَتْ عَلـٰى مَنْ صَنَعَ ذٰلِكَ فَلَمَّا قَضٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلصَّلـٰوةَ رَفَعَ صَوْتَهٗ ثُـمَّ دَعَا عَلَيْهِمْ فَقَالَ اَللّٰهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ ثَلَاثًا وَّكَانَ اِذَا دَعَا دَعَا ثَلَاثًا وَّاِذَا سَاَلَ سَاَلَ ثَلَاثًا ثُـمَّ سَـمّٰى اَللّٰهُمَّ عَلَيْكَ بِاَبِىْ جَهْلٍ وَعَلَيْكَ بِعُتْبَةَ بْنِ رَبِيْعَةَ وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيْعَةَ وَالْوَلِيْدِ بْنِ عُتْبَةَ وَاُمَيَّةَ بْنِ خَلْفٍ وَّعُقْبَةَ بْنِ اَبِـىْ مُعِيْطٍ وَّعَمَّارَةَ بْنِ الْوَلِيْدِ. قَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فَوَاللهِ لَقَدْ رَاَيْتُهُمْ صَرْعٰى يَوْمَ بَدْرٍ ثُـمَّ سَحَبُوْا اِلَـى الْقَلِيْبِ قَلِيْبِ بَدْرٍ ثُـمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاتَّبِعْ اَصْحَابَ الْقَلِيْبِ لَعْنَةً.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার পাশে সম্মানিত ছলাত (নামায) মুবারক আদায় করছিলেন। এই সময় কুরাইশদের একদল লোক সেখানে বসা ছিল। তখন তাদের মধ্য থেকে একটা (সর্ব নিকৃষ্ট লোক আবূ জাহল) বললো, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে অমুক গোত্রের উটের নাড়িভুঁড়ি এনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইঙ্গিত করে বললো, ঐ ব্যক্তি তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত সিজদা মুবারক-এ যাবেন তখন তা উনার সম্মানিত দুই কাঁধ মুবারক উনাদের মাঝখানে রেখে দিবে? নাঊযুবিল্লাহ! তখন তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় পাপিষ্ঠ লোকটি (উক্ববা) উঠে গেল (এবং তা নিয়ে এসে অপেক্ষা করতে থাকলো)। অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারক-এ গেলেন তখন সে তা (উটের নাড়িভুঁড়ি) উনার সম্মানিত দুই কাঁধ মুবারক উনাদের মাঝখানে রেখে দিলো। নাউযুবিল্লাহ! এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারক অবস্থায় রইলেন। এই অবস্থা দেখে সেই পাপিষ্ঠ লোকগুলো খুব হাসাহাসি করতে লাগলো, এমন কি হাসতে হাসতে একে অন্যের উপর লুটিয়ে পড়তে লাগলো। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! এমন সময় এক ব্যক্তি উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে গিয়ে সংবাদ দিলেন,
فَاَقْبَلَتْ تَسْعٰى وَثَبَتَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا حَتّٰى اَلْقَتْهُ عَنْهُ وَاَقْبَلَتْ عَلَيْهِمْ تَسُبُّهُمْ وَدَعَتْ عَلـٰى مَنْ صَنَعَ ذٰلِكَ.
তিনি শোনামাত্র খুব দ্রুত ছুটে আসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনও সম্মানিত সিজদা মুবারক অবস্থায় ছিলেন। উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর থেকে উটের নাড়িভুঁড়ি সরিয়ে দেন। অতঃপর কাফিরদের দিকে মুখ করে তাদের ধ্বংস কামনা করেন এবং যে ব্যক্তি এই সর্বনিকৃষ্ট কাজটি করেছে তার বিরুদ্ধে বদদু‘য়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায মুবারক শেষ করে উচ্চ আওয়ায মুবারক-এ তাদের বিরুদ্ধে বদদু‘য়া মুবারক করেন। তিনি বলেন, আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি কুরাইশদেরকে ধ্বংস করে দিন। এরূপ তিনবার বলেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা বিশেষ সম্মানিত সুন্নত মুবারক ছিলেন যে, তিনি যখন কোনো বিষয়ে দু‘য়া মুবারক বা বদদু‘য়া মুবারক করতেন অথবা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কোনো বিষয়ে আরজি মুবারক পেশ করতেন, তখন বাক্য মুবারকগুলো তিনবার উচ্চারণ করতেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর তিনি নাম ধরে ধরে বদদু‘য়া মুবারক করেন, আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি আবু জাহিলকে ধ্বংস করে দিন এবং উতবা ইবনে রবী‘য়াহ, শায়বা ইবনে রবী‘য়াহ, ওয়ালীদ ইবনে উতবা, উমাইয়া ইবনে খালফ, উক্ববা ইবনে আবী মুআইত এবং উমারাহ ইবনুল ওয়ালীদকে ধ্বংস করে দিন। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাদের নাম উচ্চারণ করে বদদু‘য়া মুবারক করেছিলেন, আমি তাদের প্রত্যেককে সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে বদরের একটি অনাবাদ (তথা ময়লা-আবর্জনাযুক্ত) কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই কূপের অধিবাসীদের উপর অন্ততঃকালের জন্য লা’নত বর্ষিত হোক।” (আমীন!) (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আল আহকামুশ শর‘ইয়্যাহ ২/৩০৭, শরহুস সুন্নাহ ১৩/৩৩০)
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি কতো বেমেছালভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন, যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
শি‘আবে আবী ত্বালিবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম:
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার সপ্তম (৭ম) বছর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শি‘আবে আবী ত্বালিবে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে তিন বছর সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। শি‘আবে আবী ত্বালিবে কাফির-মুশরিকরা খাবার পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে। তাদের বাধার কারণে সেখানে সাধারণত খাবার পৌঁছতো না বিধায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের এরূপ অবস্থা হয়েছিলো যে, উনারা খাদ্য হিসেবে গাছের লতা-পাতা, ছাল-বাকল পর্যন্ত খেয়েছিলেন। এমনকি উনারা চামড়ার না’লাঈন শরীফ (জুতা মুবারক) পানিতে সিদ্ধ করে চিবিয়েছেন। গাছের লতা-পাতা, ছাল-বাকল খাবার হিসেবে গ্রহণ করার ফলে উনাদের ইস্তিঞ্জা মুবারক বকরীর লেদের মত হয়ে গিয়েছিলো। ক্ষুধার্ত শিশু উনাদের কান্না মুবারক-এ আশে-পাশের লোকেরা রাতে ঘুমাতে পারতো না। তারপরও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে দূরে সড়ে যাননি। কি অপূর্ব আত্মত্যাগ! সুবহানাল্লাহ! তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উম্মুল মু‘মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন অনেক বেশি। তিনি কখনও কখনও সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করতেন (অসুস্থতা মুবারক গ্রহণ করতেন) আবার কখনও কখনও সম্মানিত ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করতেন (সুস্থতা মুবারক গ্রহণ করতেন)। সুবহানাল্লাহ! সেই সময় খাইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। সুবহানাল্লাহ! যা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! মূলত, উনাদের কাছ থেকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা শিক্ষা মুবারক গ্রহণ করেছেন কিভাবে সমস্ত কিছু ত্যাগ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা-বাক্বা হতে হয়, উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতে হয়। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত হিজরত মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত হিজরত মুবারক করেন, তখন বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত মক্কা শরীফ-এ অবস্থান মুবারক করছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আলক্বাব, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক করে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালামতিনি, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা এক সাথে সম্মানিত হিজরত মুবারক করে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত নতুন হুজরা শরীফ
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আ’যীম শরীফ সম্পাদন হওয়ার পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতেন। ২য় হিজরী সনের সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাসে উনাদের সম্মানিত নিসবতে আ’যীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে আলাদাভাবে সম্মানিত হুজরা শরীফ ব্যবস্থা করার জন্য বললেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
اُطْلُبْ مَنْزِلا فَطَلَبَ حضرت عَلِىٌّ عليه السلام مَنْزِلا فَأَصَابَهُ مُسْتَأْخِرًا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَلِيلا. فَبَنَى بِهَا فِيهِ فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهَا قَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُحَوِّلَكِ إِلَيَّ. فَقَالَتْ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَلِّمْ حَارِثَةَ بْنَ النُّعْمَانِ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ أَنْ يَتَحَوَّلَ عَنِّي. تُرِيدُ أَنْ يَتَحَوَّلَ لِي عَنْ مَنْزِلِهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ تَحَوَّلَ حَارِثَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ عَنَّا حَتَّى قَدِ اسْتَحْيَيْتُ. فَبَلَغَ حَارِثَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ فَتَحَوَّلَ وَجَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَوِّلُ حضرت فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ إِلَيْكَ وَهَذِهِ مَنَازِلِي وَهِيَ أَسْقَبُ بُيُوتِ بَنِي النَّجَّارِ بِكَ. وَإِنَّمَا أَنَا وَمَالِي لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَلَّذِي تَأْخُذُ مِنِّي أَحَبُّ إِلَيَّ مِنَ الَّذِي تَدَعُ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَقْتَ بَارَكَ اللهُ عَلَيْكَ فَحَوَّلَهَا إِلَى بَيْتِ حَارِثَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ.
অর্থ: “(হ হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম) আপনি সম্মানিত হুজরা শরীফ তথা গৃহ বা বাসস্থান তালাশ করুন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হুজরা শরীফ তালাশ করতে থাকলেন। তারপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (সম্মানিত হুজরা শরীফ) থেকে কিছুটা দূরে একটি সম্মানিত হুজরা শরীফ (গৃহ) পেলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সেই সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ ‘সম্মানিত লাইলাতুয যাফাফ শরীফ’ বা সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সম্মানিত প্রথম রাত মুবারক অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট (উক্ত হুজরা শরীফ বা বাড়ি মুবারক-এ) সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখলেন। তিনি (সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে) ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে আমার কাছাকাছি রাখতে চাই। অর্থাৎ আমি চাই আমার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার পাশাপাশি বা নিকটে আপনার সম্মানিত হুজরা শরীফ হোক। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, তাহলে আপনি হযরত হারিছাহ ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে এই বিষয়ে আলোচনা মুবারক করুন, (কারণ হযরত হারিছাহ ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার তো অনেকগুলো বাড়ি মুবারক সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ উনার পাশে তথা আপনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার পাশে রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! ) তিনি যেন আমার জন্য উনার (বাড়ি থেকে) একটি বাড়ি খালি করে দেন। (অর্থাৎ তিনি যেন আমার সম্মানিত হুজরা শরীফ স্থানান্তরের বিষয়ে আমার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য উনার একটি বাড়ি মুবারক আমাকে সম্মানিত হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!) আপনি এটা পছন্দ করেন যে, তিনি যেন উনার একটি বাড়ি আমার জন্য খালি করে দেন। (অর্থাৎ তিনি আমাকে উনার একটি বাড়ি মুবারক হাদিয়া মুবারক করে আমার সম্মানিত হুজরা শরীফ স্থানান্তরের বিষয়ে আমার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। সুবহানাল্লাহ!) তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত হারিছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আমাদের জন্য ইতঃপূর্বে অনেকগুলো বাড়ি মুবারক ছেড়ে দিয়েছেন, আমাদেরকে অনেকগুলো বাড়ি মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আমি এখন উনাকে এই বিষয়ে বলতে লজ্জাবোধ করছি। তারপর (যে কোনোভাবে) সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছাহ ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নিকট এই সংবাদ মুবারক পৌঁছলো। তখন তিনি উনার একটি বাড়ি মুবারক খালি করে দিলেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَوِّلُ سَيِّدَتنَا حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ إِلَيْكَ وَهَذِهِ مَنَازِلِي وَهِيَ أَسْقَبُ بُيُوتِ بَنِي النَّجَّارِ بِكَ. وَإِنَّمَا أَنَا وَمَالِي لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَلَّذِي تَأْخُذُ مِنِّي أَحَبُّ إِلَيَّ مِنَ الَّذِي تَدَعُ.
অর্থ: “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার নিকট এই সম্মানিত সংবাদ মুবারক পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই আপনি উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে আপনার কাছাকাছি রাখতে চান। এইগুলো হচ্ছে আমার বাড়ি মুবারক। এই বাড়ি মুবারকগুলো বনু নাজ্জার গোত্রের যেকোন বাড়ি থেকে আপনার তথা আপনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিক নিকটবর্তী। নিশ্চয়ই আমি এবং আমার সমস্ত সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের জন্য। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমার যে সম্পদ মুবারক গ্রহণ করবেন, তা আমার নিকট অধিকতর প্রিয় যে সম্পদ আমার জন্য রেখে দিবেন তা থেকে।” সুবহানাল্লাহ!
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
صَدَقْتَ بَارَكَ اللهُ عَلَيْكَ
অর্থ: “আপনি সত্য কথাই বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সম্মানিত বরকত মুবারক দান করুন!” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছাহ ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার একটি বাড়ি মুবারক-এ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে আসেন।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ, তারীখে ত্ববারী শরীফ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি তখন থেকে হযরত হারিছাহ ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার উক্ত বাড়িখানা উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ হিসেবে ক্ববূল করেন এবং সেখানে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:
নিসবতে আযীম শরীফ উনার বিষয়ে বিভিন্ন দিকে থেকে প্রস্তাব মুবারক এবং এই বিষয়ে খোদায়ী ফায়ছালা মুবারক:
বিভিন্ন কিতাবের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করার লক্ষ্যে এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিসহ আরো অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য আরজী মুবারক পেশ করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই বিষয়ে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অপেক্ষায় আছি। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের পরামর্শে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিষয়ে প্রস্তাব নিয়ে যান এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে উনাকে সম্মানিত সালাম মুবারক দেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সালাম মুবারক উনার জবাব দিয়ে বলেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি কিছু বলবেন কী? তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহূ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সম্মানিত প্রস্তাব মুবারক নিয়ে এসেছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জবাবে বললেন, ‘মারহাবান ওয়া আহলান’। সুবহানাল্লাহ! এর অধিক কিছু বললেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সে সময় আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হওয়ার আলামত প্রকাশ পাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! সেটাই নিম্নোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়।
عَن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه قَالَ كنت قَاعِدا عِنْد النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فغشيه الْوَحْي فَلَمَّا سري عَنهُ قَالَ لي يَا أنس أَتَدْرِي مَا جَاءَ بِهِ حضرت جِبْرِيل عليه السلام من عِنْد صَاحب الْعَرْش قلت بِأبي أَنْت وَأمي وَمَا جَاءَ بِهِ حضرتجِبْرِيل عليه السلام من عِنْد صَاحب الْعَرْش قَالَ إِن الله أَمرنِي أَن أزوج فَاطِمَة من عَليّ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক আসলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি যখন সম্মানিত ওহী মুবারক উনার কারণে আনন্দিত হলেন, তখন আমাকে বলেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি কি জানেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত আরশ উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কি সংবাদ মুবারক নিয়ে এসেছেন? আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত আরশ উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কি সংবাদ মুবারক নিয়ে এসেছেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বলেছেন আমি যেন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ ২৩/৯৭, কানযুল ‘উম্মাল ১৩/৬৮৩, আল বায়ান ওয়াত তা’রীফ ১/১৭৪)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى امرنى ان ازوج حضرت فاطمة عليها السلام من حضرت على عليه السلام.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ওহী মুবারক করেছেন, আমি যেন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ! (মুজামুল কবির লিত তাবরানী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ লিল হায়সামী, কানযুল উম্মাল ১৩/৩৮১, আল বয়ান ওয়াত তা’রীফ ইত্যাদি)
বিশেষ ফেরেশতা উনাদের উপস্থিতিতে আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন:
‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে,
فجاءه حضرت جِبْرِيل عليه السلام في بعض الأيام وقال إن الله تعالى يقرئك السلام ويقول لك اليوم كان عقد حضرت فاطمة عليها السلام في مَوْطِنِهَا في قَصْرٍ أمها في الجنة الخاطب حضرتإسرافيل عليه السلام، وحضرت جبريل عليه السلام وحضرتميكائيل عليه السلام الشهود والولي رب العزة والزوج حضرتعلي عليه السلام.
অর্থ: “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি আপনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছেন, আজ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বালাখানা মুবারক উনার মধ্যে আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! খতীব হচ্ছেন হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি। আর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ও হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা দু‘জন সাক্ষী, স্বয়ং খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন অলী তথা অভিভাবক এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেনমহাসম্মানিতযাওজুম মুকাররাম।” সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো এসেছে,
عن حضرتأنسرضي الله عنه قال بينما رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد إذ قال صلى الله عليه وسلم لعليهذا حضرت جبريل عليه السلام يخبرني أن الله عز وجل زوجك حضرت فاطمة عليها السلاموأشهد على تزويجك أربعين ألف ملك وأوحى إلى شجرة طوبى أن انثري عليهم الدر والياقوت فنثرت عليهم الدر والياقوت فابتدرت إليه الحور العين يلتقطن من أطباق الدر والياقوت فهم يتهادونه بينهم إلى يوم القيامة.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করছিলেন। হঠাৎ তিনি সাইয়্যিদানা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি আমাকে এই সংবাদ দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে আপনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আপনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ চল্লিশ হাজার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ উনার অনুষ্ঠানে হাজির করা হয়েছিলো। আর ‘তুবা’ বৃক্ষকে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছিলো যেন উনাদের উপর মুক্তা ও ইয়াকুত (মূল্যবান পাথর) ছিটায়। অতঃপর চিত্তাকর্ষী নয়না বিশিষ্ট হুরেরা ওই মুক্তা এবং ইয়াকুত দ্বারা পাত্র পূর্ণ করতে লাগলেন। যেগুলো উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত পরস্পর হাদিয়াস্বরূপ বিনিময় করবেন।” (আর রিয়াদুন নাদরাহ ফী মানাকিবি আশারাহ ৩/১৪৬, যখায়িরুল ‘উকবা ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা ৩২)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت على عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أتانى ملكفقال يا محمد صلى الله عليه وسلم ان الله تعالى يقرأ عليك السلام ويقول لك انى قد زوجت زوجك حضرت فاطمة عليها السلام ابنتك من حضرت على بن أبى طالب عليه السلام في الملا الاعلى فزوجها منه في الارض.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নিকট একজন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আর বলেছেন, আমি (মহান আল্লাহ পাক) আপনার সম্মানিত লখতে জিগার মুবারকআন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের একটি সুউচ্চ মজলিস মুবারক-এ সম্পন মুবারক করেছি। কাজেই, আপনি দুনিয়ার যমীনে আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান মুবারক নিসবতে আযীম শরীফ সুম্পন্ন করুন।” সুবহানাল্লাহ! (যখায়িরুল ‘উকবাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা ৩২)
আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে মাশওয়ারা করা:
এই সম্পর্কে ‘যাখায়েরুল ‘উক্ববা শরীফ’ উনার বর্ণিত রয়েছে যে,
لما خطب حضرت على عليه السلام حضرت فاطمة عليها السلام أتاها رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ان حضرت عليا عليه السلام قد ذكرك فسكتت فخرج فزوجها.
অর্থ: “যখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য আরজী মুবারক পেশ করলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার নিকট আসলেন। তারপর তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আপনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য আরজী মুবারক পেশ করেছেন। তখন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বের হয়ে গেলেন। তারপর উনার সম্মানিত আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ শরীফ)
এখান থেকে একটি মাসয়ালা বের করা হয়েছে যে,
السكوت نصف الرجاء.
অর্থ: “চুপ থাকা হচ্ছে অর্ধ সমর্থন।”
অর্থাৎ সমর্থনের লক্ষণ। সুতরাং বিবাহ শাদীর বিষয়ে কোনো মেয়েকে যদি প্রস্তাব দেয়া হয়, আর উক্ত মেয়ে যদি প্রস্তাব শুনে চুপ থাকে। তাহলে বুঝতে হবে যে, উক্ত মেয়ে এই প্রস্তাবে রাজি রয়েছে।
আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ উনার প্রস্তুতি মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আপনার কাছে কিছু আছে কি? তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার নিকট একটি ঘোড়া ও একটি বর্ম রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ঘোড়াটি আপনার প্রয়োজন রয়েছে। আপনি বর্মটি বিক্রি করে এর হাদিয়া আমার নিকট নিয়ে আসুন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্মটি বিক্রি করার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিয়ে যান। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি বর্মটি নিয়ে এর হাদিয়াস্বরূপ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হাত মুবারক-এ ৫০০ দিরহাম দেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি নিজ হাত মুবারক-এ উক্ত বর্মটি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার শির (মাথা) মুবারক-এ পরিয়ে দিয়ে বললেন, এই বর্ম মুবারক একমাত্র ‘আসাদুল্লাহ তথা শে’রে খোদ’ উনার মাথা মুবারকেই শোভা পায়। সুবহানাল্লাহ! এটা বলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত বর্মটিও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ৫০০ দিরহাম নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পেশ করেন।আর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি যে বর্মটির বিনিময়ে ৫০০ দিরহাম দেয়ার সাথে সাথে বর্মটিও উনাকে হাদিয়া মুবারক করেন সে বিষয়টি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পেশ করেন। বিষয়টি শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার জন্য অনেক দু‘য়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত অর্থ থেকে কয়েকটি মুদ্রা হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার হাত মুবারক-এ দিয়ে আতর ও খুশবু কিনে আনতে বললেন। অবশিষ্ট মুদ্রাগুলো উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার হাত মুবারক দিয়ে উনাকে বললেন সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সাজসজ্জা, সংসারের কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনতে। ‘মাদারেজুন নুবুওওয়াহ শরীফ’ উনার বর্ণনা অনুযায়ী হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি দুটি চাদর, কাতানের দুটি নেহালী, চার বিঘত কাপড়, পরিধেয় বস্ত্র, রৌপ্যের দুটি বাযুবন্দ, গদী, বালিশ, একটি পেয়ালা, একটি চৌকি, একটি মশক এবং কিছু পানপাত্র ক্রয় করেন। অতঃপর সেগুলো এনে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখেন। সুবহানাল্লাহ! কেনাকাটা করার পর অবশিষ্ট যেই মুদ্রা থাকে, সেগুলো আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত হাদিয়া মুবারক করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
বায়তুল মামুর শরীফে আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত আদেশ মুবারক দিলেন, উনারা যেনো সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হন। তারপর জান্নাতের হুরদেরকেও সুন্দরভাবে সুসজ্জিত হওয়ার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিলেন। তুবা বৃক্ষকে হুকুম দিলেন সুন্দরভাবে সুসজ্জিত হওয়ার জন্য। অতঃপর সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে চতুর্থ আসমানে অবস্থিতসম্মানিত বাইতুল মামুর-এ শরীফ-এ উপস্থিত হওয়ার সম্মানিত নির্দেশ মুবরক দিলেন। সেই বাইতুল মামুর শরীফ উনার মেম্বর শরীফ-এ আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বসে খুতবাহ মুবারক দিলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে মিষ্টভাষী ‘রাহিল’ ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে মিম্বরে এসে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। ‘রাহিল’ ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি যখন খুৎবাহ পাঠ করলেন উনার অতি সুমিষ্ট কণ্ঠের সুমধুর আওয়াযে আসমানের সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আমি আমার খাছ মাহবুবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে আমার আখাচ্ছুল খাছ প্রিয় বা মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করলাম। সুবহানাল্লাহ! হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি এই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মজলিসে সম্পাদন করে দিন। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুতাবিক আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ উনার অর্থাৎ উনাদের আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার আক্বদ মুবারক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সাক্ষী বানিয়ে সম্পন্ন করা হলো। এই সম্মানিত আক্বদ মুবারক উনার অনুষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রম সম্মানিত জান্নাতী রেশমী কাপড় মুবারক উনার মধ্যে লিখে রাখা হলো। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক অনুযায়ী উনাদের আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ বাস্তবায়ন করেন। সুবহানাল্লাহ!
যমীনে আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠান:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপস্থিতিতে ‘সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ’-এ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পড়ান। এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যান, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ডেকে আনুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক-এ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উপস্থিত হন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পড়ান। সুবহানাল্লাহ! বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ নিম্নোক্ত খুতবাহ মুবারক পাঠ করেন,
الحمد لله المحمود بنعمته المعبود بقدرته المطاع بسلطانه المرهوب من عذابه وسطوته النافذ أمره فى سمائه وأرضه الذى خلق الخلق بقدرته وميزهم بأحكامه وأعزهم بدينه وأكرمهم بنبيه محمد صلى الله عليه وسلم. إن الله تبارك اسمه وتعالت عظمته جعل المصاهرة سببا لا حقا وأمرا مفترضا أوشج به الأرحام وألزم به الأنام فقال عز من قائل وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْماءِ بَشَراً فَجَعَلَهُ نَسَباً وَصِهْراً وَكانَ رَبُّكَ قَدِيراً . فأمر الله تعالى يجرى إلى قضائه وقضاؤه يجرى إلى قدره ولكل قضاء قدر ولكل قدر أجل ولكل أجل كتاب يمحو الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتاب. ثم إن الله عزّ وجل أمرنى أن أزواج حضرت فاطمة عليها السلام من حضرت على بن أبى طالب عليه السلامفاشهدوا أنى قد زوجته على أربعمائة مثقال فضة إن رضى بذلك حضرت على عليه السلام وفى رواية أرضيت يا حضرت على عليه السلام فقال حضرت على عليه السلامرضيت عن الله وعن رسوله فقال جمع الله شملكما وأسعد جدّكما وبارك عليكما وأخرج منكما كثيرا طيبا.
আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজ হাত মুবারকে সকলের উদ্দেশ্যে খেজুর মুবারক ছিটানো:
শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাদারেজুন নুবুওওয়াহ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি কবূল করলেন এবং রাজি হলেন? সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি কবুল করলাম এবং রাজী হলাম। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একপাত্র খেজুর মুবারক নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মাঝে ছিটিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাবিবাহ অনুষ্ঠানে যে, খেজুর ছিটানো খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত সেই বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফে হাদিয়া মুবারক:
বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যেই সকল সম্মানিত বিষয় মুবারকগুলো হাদিয়া মুবারক করেছিলেন, তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো,
১. একটি মাদুর মুবারক। যা মিশরীয় কাপড় মুবারক দ্বারা তৈরি ছিলো এবং যার ভিতরে দেয়া হয়েছিলো পশম।
২. একটি বিছানা মুবারক,
৩. একটি চকি মুবারক,
৪. চামড়ার তৈরি বালিশ মুবারক যা খেজুরের ছালে পূর্ণ ছিলো,
৫. একটি অথবা দুইট মাটির তৈরি পাত্র,
৬. একটি পানির মশক- যা চামড়ার তৈরি ছিলো,
৭. একটি বাটি মুবারক,
৮. একটি শস্য ভাঙ্গানোর জাঁতা, কোনো বর্ণনায় দুটি জাঁতা,
৯. একটি নামাযের মাদুর,
১০. একটি খেজুর পাতার তৈরি চাটাই,
১১. ১টি তামার বদনা,
১২. একটি কম্বল মুবারক,
১৩. দুই টুকরো কাপড় মুবারক,
১৪. রুপার তৈরি দুটি বাহুবন্ধনী,
১৫. ২টি ঘোড়া,
১৬. হাতির দাতের তৈরী চিরুনী মুবারক।
১৭. এগুলো ছাড়া আরেকটি চামড়ার পাট্টা দেয়া হয়েছিলো। যেটাতে কোরআন শরীফ উনার কয়েকটি সম্মানিত সূরা শরীফ লিখা ছিলো। ইত্যাদি
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে বিশেষ দো‘আ মুবারক
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ فَلَمَّا كَانَ لَيْلَةُ الْبِنَاءِ قَالَ يَا عَلِيُّ لاَ تُحْدِثْ شَيْئًا حَتَّى تَلْقَانِي فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِـمَاءٍ فَتَوَضَّأَ مِنْهُ ثُـمَّ أَفْرَغَهُ عَلَى عَلِيٍّ فَقَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ فِيهِمَا وَبَارِكْ عَلَيْهِمَا وَبَارِكْ لَهُمَا فِي شِبْلِهِمَا. وفى رواية وَبَارِكْ فِي نَسْلِهِمَا
অর্থ:“হযরত বুরায়দাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের ‘সম্মানিত লাইলাতুল বিনা’ শরীফ’ (অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত নিসবতে আ’যীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সম্মানিত প্রথম রাত্রি মুবারক-এ) সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি আমার সম্মানিত আদেশ মুবারক ব্যতীত কোনো কাজ করবেন না। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানি মুবারক তলব করেন। তারপর তা দিয়ে সম্মানিত ওযু মুবারক করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর সম্মানিত দু’য়া মুবারক করেন,
اللَّهُمَّ بَارِكْ فِيهِمَا وَبَارِكْ عَلَيْهِمَا وَبَارِكْ لَهُمَا فِي شِبْلِهِمَا
আয় বারে ইলাহী! আপনি উনাদের মধ্যে বরকত দান করুন এবং উনাদের উভয়ের জন্য উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বরকত দান করুন।
অন্য আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে,
وَبَارِكْ فِي نَسْلِهِمَا
উনাদের উভয়ের জন্য উনাদের বংশধর আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বরকত দান করুন।”(মুসনাদুল বাযযার-১০/৩৩৯, আস সুনানুল কুবরা-৯/১০৬, আল মু’জামুল কাবীর-১/৪৯৫, মুসনাদুর রূয়ানী-১/১৪, আত ত্ববাক্বাতুল কুবরা-৮/২১, আস সীরতুল হালবিয়্যাহ-২/৪৭৩, যাখাইরুল ‘উক্ববা-১/৩৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ-১১/৪৩ ইত্যাদি।)
উহুদের জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল খিদমত মুবারকের আনজাম দান:
তৃতীয় হিজরী সনে সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারক সংঘটিত হয়। এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা সম্মানিত দান্দান মুবারক শহীদ হন। ‘মুসনাদে আহমদ শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كسرت رباعيته وشجّ في وجهه حَتَّى سَالَ الدَّمُ عَلَى وَجْهِه.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সম্মানিত উহুদ যুদ্ধ মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা সম্মানিত দান্দান মুবারক শহীদ হন, উনার সম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক (মুখম-ল মুবারক) জখম হন এবং উনার সম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক (মুখম-ল মুবারক) হতে সম্মানিত নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) প্রবাহিত হন।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ وَهُوَ يُسْأَلُ عَنْ جُرْحِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَاَعْرِفُ مَنْ كَانَ يَغْسِلُ جُرْحَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ كَانَ يَسْكُبُ الْـمَاءَ وَبِـمَا دُووِىَ قَالَ كَانَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلاَمُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَغْسِلُهُ وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ يَسْكُبُ المَاءَ بِالْمِجَنِّ فَلَمَّا رَأَتْ فَاطِمَةُ أَنَّ المَاءَ لاَ يَزِيدُ الدَّمَ إِلَّا كَثْرَةً أَخَذَتْ قِطْعَةً مِنْ حَصِيرٍ فَأَحْرَقَتْهَا وَأَلْصَقَتْهَا فَاسْتَمْسَكَ الدَّمُ وَكُسِرَتْ رَبَاعِيَتُهُ يَوْمَئِذٍ وَجُرِحَ وَجْهُهُ وَكُسِرَتِ البَيْضَةُ عَلَى رَأْسِهِ.
অর্থ: “হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ‘জুরহী শান মুবারক’ প্রকাশ (আহত হওয়া) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! (সম্মানিত উহুদ প্রান্তরে) কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জখম মুবারক ধুয়েছিলেন এবং কে পানি ঢেলে ছিলেন উনাদেরকে আমি অবশ্যই অবশ্যই চিনি। আর কি দ্বারা উনাকে চিকিৎসা মুবারক করা হয়েছিলো, সে সম্পর্কেও আমি ভালোভাবে অবগত রয়েছি। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত জখম মুবারক ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ঢালে করে পানি এনে ঢালছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন দেখলেন যে, সম্মানিত নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) ঝরা বন্ধ হচ্ছেন না; বরং তা বেড়েই চলছেন, তখন তিনি এক টুকরা চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে তার ছাই সম্মানিত জখম মুবারক-এ লাগিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সম্মানিত নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) ঝরা বন্ধ হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! সেদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখের ডান দিকের একখানা সম্মানিত দান্দান মুবারক শহীদ হয়েছিলেন, সম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক (মুখম-ল মুবারক) জখম হয়েছিলেন। সম্মানিত শিরস্ত্রাণ মুবারক ভেঙ্গে সম্মানিত সির বা মাথা মুবারক-এ ঢুকে গিয়েছিলো।” (বুখারী শরীফ, সুননানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর, মুস্তাখরজে আবী আওয়ানাহ, বিদয়াহ-নিহায়াহ ইত্যাদি)
না’তু সাইয়্যিদাতিনা আন নূরির রবি‘য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার সম্মানিত লখতে জিগার মুবারকআন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালামতিনি প্রায় ১২টিরও অধিক সম্মানিতনা’ত শরীফ পাঠ করেন। যেগুলো‘না’তুয যাহরা আলাইহাস সালাম’হিসেবে খ্যাত। নিম্নে সেই সকল সম্মানিত না’ত শরীফ থেকে কয়েকখানা সম্মানিত না’ত শরীফ ও উনাদের অনুবাদ তুলে ধরা হলো।
১ম সম্মানিত না’ত শরীফ ও উনার অনুবাদ:
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗعَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا رُمِسَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَتْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَوَقَفَتْ عَلٰى قَبْرِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَخَذَتْ قَبْضَةً مِنْ تُرَابِ الْقَبْرِ فَوَضَعَتْهٗ عَلٰى عَيْنَيْهَا وَبَكَتْ وَاَنْشَاَتْ تَقُوْلُ:
مَاذَا عَلٰى مَنْ شَمَّ تُرْبَةَ اَحْمَدَ ৃৃ
أَنْ لَا يَشَمَّ مَدَى الزَّمَانِ غَوَالِيَا
صُبَّتْ عَلَيَّ مَصَائِبُ لَوْ اَنَّهَاৃৃ
صُبَّتْ عَلَى الْاَيَّامِ صِرْنَ لَيَالِيَا
অর্থ:“সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হলো, তখন আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিএসেনূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারসম্মানিত রওযা শরীফ উনার নিকটে অবস্থান মুবারক করলেন। তারপরতিনি সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মাটি মুবারক থেকে এক মুষ্টি মাটি মুবারক নিয়ে উনার দুই চোখ মুবারক-এমাখলেনএবং সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করতে করতে এই বলে সম্মানিত না’ত শরীফ রচনা মুবারক করলেন এবং পাঠ করলেন,
مَاذَا عَلٰى مَنْ شَمَّ تُرْبَةَ اَحْمَدَ ৃৃ
أَنْ لَا يَشَمَّ مَدَى الزَّمَانِ غَوَالِيَا
صُبَّتْ عَلَيَّ مَصَائِبُ لَوْ اَنَّهَاৃৃ
صُبَّتْ عَلَى الْاَيَّامِ صِرْنَ لَيَالِيَا
অর্থ: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মাটি মুবারক বা ধূলি-বালি মুবারক উনাদের ঘ্রাণ মুবারক নেয়, তার জন্য আর কি চাই? তার জন্য সারা জীবন বা অনন্তকাল যাবৎ আর কোন খোশবুর ঘ্রাণ নেয়ার প্রয়োজন নেই। সুবহানাল্লাহ!
(নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে) আমার উপর যেসব মুসিবত আপতিত হয়েছে, তা যদি দিনসমূহের উপর আপতিত হতো, তাহলে দিনগুলো রাতে পরিণত হয়ে যেতো।” সুবহানাল্লাহ! {(১) সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১২/২৮৯, (২) তুহফাহ, (৩) শরহে কাফিয়াহ, (৪) তাফসীরে রূহুল মা‘আনী ১০/১৪৬, (৫) ইত্তিহাফুয যায়ির ১/১৬৭, (৬) আদ দুররাতুছ ছামীনাহ ফী আখবারিল মাদীনাহ ১/১৩৯, (৭) জামউল ওসায়িল ফী শরহিশ শামায়িল, (৮) মিরক্বাত শরীফ ৩য় খ-, (৯) ইরশাদুস সারী ২/৩৭৮, (১০) ফাতাওয়ায়ে ফিক্বহিয়্যাহ ২/১৮, (১১) তুহফাতুল হাবীব ৭/৪৭৮, (১২) আশ শরহুল কাবীর লিইবনে কুদামাহ ২/৪৩০, (১৩) আল মুগনী ফী ফিক্বহ ৫/৪৫, (১৪) আল মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ৩/৫৮২, (১৫) শারহুয যারক্বনী আলাল মাওয়াহিব ১২/১৬৮, (১৬) ‘ঊয়ূনুল আছার ২/৪০৯, (১৭) নুযহাতুল মাজালিস ১/৩২৭, (১৮) ওয়াফাউল ওয়াফা ৪/২১৮ ইত্যাদি)
শব্দার্থ:مَاذَا কি? عَلٰىউপর, مَنْযে, যারা, شَمَّঘ্রাণ নিয়েছে, تُرْبَةَ মাটি মুবারক, ধূলি-বালি মুবারক, ধুলা, ধুলো, اَحْمَدَ অধিকতর প্রশংসাকারী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক, مَدَى দুরত্ব, আওতা, প্রসার, ব্যাপ্তি, পরিধি, সময়কাল, মেয়াদ, শেষ সীমা, الزَّمَانِ সময়, কাল, যুগ, যামানা, صُبَّتْ আপতিত হয়েছে, ঢলে পড়েছে, عَلَيَّ আমার উপর, مَصَائِبُ মুসিবতসমূহ, বিপদসমূহ, لَوْ যদি, اَنَّهَا নিশ্চয়ই তা, উহা, الْاَيَّامِ দিনসমূহ, صِرْنَ ফিরে এসেছে, পরিণত হয়েছে, হতো, لَيَالِيَاরাতসমূহ।
২য় না’ত শরীফ ও উনার অনুবাদ :
وَلَمّا تُوُفِّـىَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدُفِنَ وَرَجَعَ الْمُهَاجِرُوْنَ وَالْاَنْصَارُ اِلـٰى رِحَالِـهِمْ وَرَجَعَتْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِلـٰى بَيْتِهَا اجْتَمَعَ اِلَيْهَا نِسَاؤُهَا فَقَالَتْ
اِغْبَرَّ اٰفَاقُ السَّمَاءِ وَكُوّرَتْ ...
شَمْسُ النَّهَارِ وَاَظْلَمَ الْعَصْرَانٖ
فَالْاَرْضُ مِنْ بَعْدِ النَّبِىِّ كَئِيبَةٌ ...
اَسَفًا عَلَيْهِ كَثِيْرَةَ الرَّجَفَانٖ
فَلْيَبْكِهٖ شَرْقُ الْبِلَادِ وَغَرْبُهَا ... ..
وَلْتَبْكِهٖ مُضَرُ وَكُلُّ يَـمَانٖ
وَلْيَبْكِهِ الطَّوْدُ الْمُعَظَّمُ جُوْدُهٗ ...
وَالْبَيْتُ ذُو الْاَسْتَارِ وَالْاَرْكَانٖ
يَا خَاتَـمَ الرُّسُلِ الْمُبَارَكُ قَبْرُهٗ ...
صَلّٰى عَلَيْكَ مُنَزِّلُ الْقُرْاٰنٖ
نَفْسِىْ فِدَاؤُكَ مَا لِرَأْسِكَ مَائِلًا ...
مَا وَسَّدُوْكَ وِسَادَةُ الْوَسْنَانٖ
অর্থ: “আর যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হলো, তখন হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের বাড়ি ফিরে আসলেন। আর সায়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যাবর্তন করলেন। উনার চারপাশে হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জমা হলেন। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন (না’ত শরীফ পাঠ করলেন)
اِغْبَرَّ اٰفَاقُ السَّمَاءِ وَكُوّرَتْ ...
شَمْسُ النَّهَارِ وَاَظْلَمَ الْعَصْرَانٖ
فَالْاَرْضُ مِنْ بَعْدِ النَّبِىِّ كَئِيبَةٌ ...
اَسَفًا عَلَيْهِ كَثِيْرَةَ الرَّجَفَانٖ
فَلْيَبْكِهٖ شَرْقُ الْبِلَادِ وَغَرْبُهَا ... ..
وَلْتَبْكِهٖ مُضَرُ وَكُلُّ يَـمَانٖ
وَلْيَبْكِهِ الطَّوْدُ الْمُعَظَّمُ جُوْدُهٗ ...
وَالْبَيْتُ ذُو الْاَسْتَارِ وَالْاَرْكَانٖ
يَا خَاتَـمَ الرُّسُلِ الْمُبَارَكُ قَبْرُهٗ ...
صَلّٰى عَلَيْكَ مُنَزِّلُ الْقُرْاٰنٖ
نَفْسِىْ فِدَاؤُكَ مَا لِرَأْسِكَ مَائِلًا ...
مَا وَسَّدُوْكَ وِسَادَةُ الْوَسْنَان
অর্থ: “আকাশের দিগন্তসমূহ ধূলায় ধূসরিত হয়েছে, দিবসের সূর্য হয়েছে আলোক শূন্য, আর যামানা হয়েছে অন্ধাকারাচ্ছন্ন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সারা পৃথিবী, সারা কায়িনাত শুধু দুঃখ-মলিনই হয়নি; বরং দুঃখ ভারে প্রকম্পিতও হয়েছে। অতঃপর যেন ক্রন্দন করে উনার জন্য প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, আরো যেন ক্রন্দন করে মুদ্বার ও প্রত্যেক ইয়ামেনবাসী। যেন ক্রন্দন করে উনার জন্য মহান বদান্যতার অধিকারী বিরাট পাহাড় এবং রুকন ও গিলাফ বিশিষ্ট ঘর তথা সম্মানিত কা’বা শরীফ। ইয়া খ¦াতামার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যাঁর সম্মানিত রওযা শরীফ বরকতময়, সম্মানিত কুরআন শরীফ অবতীর্ণকারী মহান আল্লাহ আপনার প্রতি ছলাত পাঠ করুন। সুবহানাল্লাহ! আমার জীবন আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনার সম্মানিত শির বা মাথা মুবারক কাত হয়নি, তন্দ্রাচ্ছন্নের বালিশ আপনাকে বালিশে শয়ন করায়নি। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মাঝে তন্দ্রাচ্ছন্ন নন; বরং আপনি সদা-সর্বদা সবকিছু অবলোকন করছেন এবং শুনছেন তথা আপনি সর্বাস্থায় সর্বত্র হাযির এবং নাযির।” সুবহানাল্লাহ! (আর রওদ্বুল উনফ ৪/৪৫৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১২/২৮৯, ইত্তিহাফুয যায়ির ১/১৭১,ইরশাদুস সারী ৬/৪৭২, সালওয়াতুল কায়ীব বিওয়াফাতিল হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১/২৭, ‘উইয়ূনুল আছার ২/৪৩৪, আল মুক্বতাফা মিন সীরাতিল মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১/২৪৩, আল ইকতিফা ২/৬১, বাহজাতুল মাহাফিল ২/১২০, নিহায়াতুর আরাব ১৮/২৮৫, আল হামাসাহ ১/৭৮, যাহরুর আদাব ১/৪২ ইত্যাদি)
শব্দার্থ: اِغْبَرّধুলায় ঢেকে গেছে, ধূসরবর্ণ হয়েছে, ধূলিময় হয়েছে, اٰفَاقُ দিগন্তসমূহ, সুদূর প্রান্তসমূহ, দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ,السَّمَاءِ আসমান, আকাশ, গগন, كُوّرَتْঅন্ধকার হয়েছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে, কিরণবিহীন হয়েছে, আলোক শূন্য হয়েছে, شَمْس সূর্য, النَّهَارِ দিবস, দিবা, দিন, اَظْلَمَ অন্ধকার হয়েছে, তমসাচ্ছন্ন হয়েছে, তিমিরাচ্ছন্ন হয়েছে, الْعَصْرَانٖ সময়, যুগ, কাল, শতাব্দী, الْاَرْضُ পৃথিবী, কায়িনাত, بَعْدِ পরে, পরবর্তীতে, النَّبِىِّ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, كَئِيْبَةٌবিষণœ, দুঃখপূর্ণ, অবসাদগ্রস্ত, اَسَفًا দুঃখ করা, দুঃখিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া, মনক্ষুণœ হওয়া, عَلٰى উপর, ه উনার, كَثِيْرَةَ অনেক, বেশি, অধিক, বহু, প্রচুর, পর্যাপ্ত, الرّجَفَانٖ কেঁপে উঠা, কম্পিত হওয়া, فَঅতঃপর, لْيَبْكِه যেন উনার জন্য কাঁদে, شَرْقُ পূর্ব, প্রাচ্য, الْبِلَاد ভূখ-সমূহ, ভূমিসমূহ, শহরসমূহ, غَرْبُ পশ্চিম, পাশ্চাত্য, هَا তার, وَ আর, আরো, لْتَبْكِهٖ যেন কাঁদে উনার জন্য, مُضَرُ মুদ্বার, كُلُّপ্রত্যেক, يَـمَانِ ইয়ামেনবাসী, الطّوْدُ উচ্চ পর্বত, বিরাট পাহাড়, الْمُعَظَّمُ সম্মানিত, শ্রদ্ধেয়, মর্যাদাবান, মহান, جُوْدُ দান, দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা, الْبَيْتُ ঘর, ذُو অধিকারী, বিশিষ্ট,الْاَسْتَارِ পর্দাসমূহ, আবরণসমূহ, الْاَرْكَانরুকনসমূহ, স্তম্ভসমূহ, খুঁটিসমূহ, يَا হে, خَاتَـمَ শেষ, الرُّسُلِ রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা, الْمُبَارَكُ বরকতময়, বরকতপূর্ণ, কল্যাণময়, قَبْرُসম্মানিত রওযা শরীফ, هٗউনার, صَلّى তিনি ছলাত পাঠ করুন, عَلٰى উপর, كَ আপনার, مُنَزِّلُ নাযিলকারী, অবতীর্ণকারী, الْقُرْاٰنٖ সম্মানিত কুরআন শরীফ, نَفْسِ আত্মা, প্রাণ, জীবন, ىْ আমার, فِدَاؤُكَ আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার জন্য কুরবান হোক, مَا নেই, নাই, لِ জন্য, رَأْسِ শির মুবারক, মাথা মুবারক, كَআপনার, مَائِلًا কাত, مَا وَسَّدُوْكَ বালিশে শোয়ায়নি, وِسَادَةُ বালিশ, الْوَسْنَانٖ তন্দ্রাচ্ছন্ন, নিদ্রাচ্ছন্ন, তন্দ্রালু, নিদ্রালু।
৩য় না’ত শরীফ ও উনার অনুবাদ:
বিশ্বখ্যাত কিতাব সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ উনার ১২তম খ-ের পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
وَقَالَتْحَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ:
اِذَا اِشْتَدَّ شَوْقِىْ زُرْتُ قَبْرَكَ بَاكِيًا ..
اَنُوْحُ وَاَشْكُوْ لَا اَرَاكَ مُجَاوِبِـىْ
فَيَا سَاكِنَ الصَّحْرَاءِ عَلَّمْتَنِىْ الْبُكَا ..
وَذِكْرُكَ اَنْسَانِـىْ جَمِيْعَ الْـمَصَائِبٖ
فَاِنْ كُنْتَ عَنّـِىْ فِـى التُّرَابِ مَغِيْبًا ..
فَمَا كُنْتَ مِنْ قَلْبِ الْـحَزِنِ بِغَائِبٖ
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
اِذَا اِشْتَدَّ شَوْقِىْ زُرْتُ قَبْرَكَ بَاكِيًا ..
اَنُوْحُ وَاَشْكُوْ لَا اَرَاكَ مُجَاوِبِـىْ
فَيَا سَاكِنَ الصَّحْرَاءِ عَلَّمْتَنِىْ الْبُكَا ..
وَذِكْرُكَ اَنْسَانِـىْ جَمِيْعَ الْـمَصَائِبٖ
فَاِنْ كُنْتَ عَنّـِىْ فِـى التُّرَابِ مَغِيْبًا ..
فَمَا كُنْتَ مِنْ قَلْبِ الْـحَزِنِ بِغَائِبٖ
অর্থ: “যখন আমার আগ্রহ, মুহব্বত মুবারক প্রবল আকারে প্রকাশ পায়, তখন আমি ক্রন্দনরত অবস্থায় আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করি। আমি কান্না মুবারক করি এবং আমার কষ্ট মুবারক ব্যক্তি করি, কিন্তু আপনাকে আমার সাড়াদানকারীরূপে দেখতে পাই না। অতঃপর হে নির্জন প্রান্তরের প্রবাসী তথা সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মাঝে অবস্থানকারী, আপনিই আমাকে কান্না মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। অর্থাৎ আপনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণেই আমি আজ কান্না মুবারক করছি। আপনার সম্মানিত যিকর তথা স্মরণ মুবারক আমাকে সমস্ত বালা-মুসিবত, বিপদ-আপদ ভুলিয়ে দিয়েছে।
অতঃপর যদিও আপনি আমার থেকে সম্মানিত মাটি মুবারক তথা সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে অদৃশ্য। কিন্তু আপনি আমার সম্মানিত ব্যথিত ও চিন্তিত হৃদয়ে সর্বদা দৃশ্যমান, উপস্থিত, হাযির।” সুবহানাল্লাহ!
শাব্দিক অর্থ: اِذَا যখন, اِشْتَدَّ তীব্র হয়েছে বা হয়, কঠিন হয়েছে বা হয়, বেড়ে যায়, প্রবল হয়, شَوْقِىْ আগ্রহ, ইচ্ছা, আকাঙ্খা, زُرْتُ আমি যিয়ারত করেছি বা করি, قَبْرَ সম্মানিত রওযা শরীফ, كَ আপনার, بَاكِيًا ক্রন্দনরত অবস্থায়, اَنُوْحُ আমি কান্না মুবারক করি, আমি আর্তনাদ মুবারক করি, اَشْكُوْ আমি অভিযোগ করি, আমি কষ্ট ব্যক্তি করি, لَا اَرَاكَ আমি আপনাকে দেখি না, مُجَاوِبِ সাড়াদানকারী, জাওয়াবদানকারী, ىْ আমার, فَ অতঃপর, يَا হে, سَاكِنَ বাসিন্দা, নিবাসী, বসবাসকারী, অধিবাসী, الصَّحْرَاءِ নির্জন প্রান্তর, জনমানবহীন, عَلَّمْتَ আপনি শিক্ষা দিয়েছেন, نِىْ আমাকে, الْبُكَا কান্না মুবারক, ক্রন্দন মুবারক, وَ আর, ذِكْرُ সম্মানিত যিকর মুবারক, আলোচনা মুবারক, স্মরণ মুবারক, كَ আপনার, اَنْسَانِـىْ আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে, جَمِيْعَ সমস্ত, সকল, الْـمَصَائِب বালা-মুসিবতসমূহ, বিপদ-আপদসমূহ, اِنْ যদি, كُنْتَ আপনি হন, عَنّـِىْ থেকে আমার, فِـى মধ্যে, التُّرَابِ সম্মানিত মাটি মুবারক, সম্মানিত রওযা শরীফ, مَغِيْبًا অদৃশ্য, فَ অতঃপর, مَا كُنْتَ আপনি নন, مِنْ হতে, থেকে, قَلْبِ সম্মানিত অন্তর মুবারক, সম্মানিত হৃদয় মুবারক, الْـحَزِنِ দুঃখিত, ব্যথিত, বিষণœ, শোকাকুল, শোকাতুর غَائِب অদৃশ্য, অনুপস্থিত।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের প্রায় ৬ মাস পর অর্থাৎ ১১ হিজরী সনের ৩রা রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা’দ আছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত গোসল মুবারক:
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে মহাসম্মানিত গোসল মুবারক সম্পন্ন করেন এবং নতুন পোশাক মুবারক পরিধান করে ক্বিবলামুখী হয়ে শুয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান প্রকাশ করার কথা বলতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! তখন মহাসম্মানিত ওছীয়ত মুবারক করেন যে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনাকে যেন কেউ আর সম্মানিত গোসল মুবারক না করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তাই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ওছীয়ত মুবারক অনুযায়ী পূণরায় মহাসম্মানিত গোসল মুবারক না করিয়েই উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখেন। সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ শরীফ)
মহাসম্মানিত ছলাতুল জানাযা মুবারক:
আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ছলাতুল জানাযা মুবারক কে পড়িয়েছেন, এই সম্পর্কে কিতাবে কয়েকটি মত রয়েছে। কেউ বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত খ¦াতিমুল মুহাজিরীন আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম) তিনি পড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি পড়িয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পড়িয়েছেন।
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে- আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ছলাতুল জানাযা মুবারক পড়িয়েছেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে ‘ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছেন,
عَنْ حضرت عُرْوَةَ رحمة الله عليه أَنَّ امام الاول سيدنا حضرت كرم الله وجهه عليه السلام صَلَّى عَلَى النور الرابعة سيدتنا حضرت الزهراء عليها السلام
অর্থ: “হযরত ‘উরওয়াহ রহমতুললাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ছলাতুল জানাযা মুবারক পড়ান সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ ৮/২৯)
মহাসম্মানিতন ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ:
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ ام المؤمنين الثالثة سيدتنا حَضْرت الصديقة عَلَيْهَا السَّلَامُ أَنَّ امام الاول سيدنا حضرت كرم الله وجهه عليه السلام دَفَنَ النور الرابعة سيدتنا حضرت الزهراء عليها السلام لَيْلا
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি রাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনর মধ্যে রাখেন।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ ৮/২৯)
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যখন ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনর মধ্যে রাখেন, তখন উনার সাথে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুই আওলাদ সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি এবং সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল খ¦ামিস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারাও ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জান্নাতুল বাকী’ শরীফ’-এ অবস্থিত। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম:
উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ছিলেন মোট ৬ জন। ৩ জন মহাসম্মানিত আবনা’ (ছেলে) আলাইহিমুস সালাম এবং ৩ জন মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনারা হচ্ছেন-
১. ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। তিনি ৩য় হিজরী সনের ১৫ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল আরবিয়া শরীফ বা’দ আছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
২. ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম। তিনি ৪র্থ হিজরী সনের ৫ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ আছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
৩. সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম। তিনি ৫ম হিজরী সনের ৫ই জুমাদাল ঊলা শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
৪. সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বইয়্যাহ আলাইহাস সালাম। তিনি ৬ষ্ঠ হিজরী সনের ২০শে জুমাদাল ঊখরা শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
৫. সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম। তিনি ৭ম হিজরী সনের ১০ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
৬. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহসিন আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি ৯ম হিজরী সনে ৯ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার মাধ্যম দিয়েই আহলু বাইতি নসব মুবারক জারি রয়েছে:
উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালম উনাদের মাধ্যম দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক (সম্মানিত বংশ মুবারক) জারি থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ الْكُبْرَى عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ بني أُمٍّ يَنْتَمُونَ إِلَى عَصَبَةٍ إِلا وَلَدَ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَ السَّلَامُ فَأَنَا وَلِيُّهُمْ وَأَنَا عَصَبَتُهُمْ.
অর্থ “উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক মায়ের সন্তান স্বীয় পিতার দিকে সম্পর্কিত হয় কিন্তু উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা ব্যতীত। আমিই উনাদের সম্মানিত অবিভাবক এবং আমিই উনাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষ।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৩/৭৪, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ১২/১০৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/৯৯, আল ফাতহুল কাবীর ৩/২২ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهَ السَّلَامُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ كُلُّ بني أُنْثَى فَإِنَّ عَصَبَتَهُمْ لأَبِيهِمْ مَا خَلا وَلَدَ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَإِنِّي أَنَا عَصَبَتَهُمْ وَأَنَا أَبُوهُمْ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ কথা মুবারক ইরশাদ মুুবারক করতে শুনেছি যে,প্রত্যেক মহিলার সন্তানদের সম্পর্ক স্বীয় পিতার দিকে হয়ে থাকে; কিন্তু উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা ব্যতীত। আমিই উনাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষ এবং আমিই উনাদের সম্মানিত অভিভাবক।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর ৩/৭৩, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৪/২৬০, আল জামি‘উছ ছগীর ২/১৫৯, আল ফাতহুল কাবীর ২/৩০৪, জামি‘উল আহাদীছ ১৫/৩২৫, কানযুল ‘উম্মাল ১২/১৬ ইত্যাদি)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (৩)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (২)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (১)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার জীবনী মুবারক
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদী বা হিদায়াতদানকারী (২)
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদী বা হিদায়াতদানকারী (১)
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন ঘুম বা বিশ্রামের জন্য সুন্নতী চকি
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)