সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (১৯)
, ১০ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন মক্কা শরীফের অত্যন্ত সুদর্শন যুবক। পিতা-মাতার অত্যন্ত আদুরে সন্তান। খুবই সম্পদশালী ছিলেন পারিবারিকভাবেই। পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবহারে ছিলেন খুবই সৌখিন প্রকৃতির। উনার সৌখিনতার প্রসঙ্গে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘সুন্দর কেশগুচ্ছ এবং মিহিন শুভ্র পোশাকে সজ্জিত উনার মত আমি আর কাউকে দেখিনি।’
হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন সংবাদ পেলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘দারুল আরকামে’ সম্মানিত ইসলামের দাওয়াত, তা’লীম-তালকীন দিচ্ছেন, তখন তিনি চুপিসারে সেখানে গেলেন এবং দ্বীন ইসলাম কবুল করেন। কোন এক ব্যক্তি উনার পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের নিকট প্রকাশ করে দিল যে, তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। অতঃপর যা হওয়ার তাই হলো। উনার আত্মীয়-স্বজন উনাকে গৃহে বেঁধে রাখলো। এভাবে বেশ অনেকদিন উনাকে আবদ্ধ করেই রাখা হল। অবশেষে যখন মুসলমানগণ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন তখন তিনিও সুযোগ বুঝে বন্দীদশা থেকে নিজ চেষ্টায় মুক্ত হয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন।
পরবর্তীতে সেখান থেকে তিনি অন্যদের সাথে মদীনা শরীফে হিজরত করেন। এখানে তিনি খুব স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে লাগলেন। ছিলনা উনার পূর্বের সেই জাঁকজমকপূর্ণ সৌখিন লেবাস। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখ দিয়ে তিনি একদা ঐ অবস্থায় গমন করলেন। তখন উনার পরিধানে একটি মাত্র চাদর ছিল। তাও আবার কয়েক জায়গায় জীর্ণ ছিল; এমনকি একটি জায়গায় কাপড়ের পরিবর্তে চামড়ার তালি লাগানো ছিল। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট উনার ইসলাম পূর্ব জীবনের সৌখিন অবস্থা এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। এ সময় উনার চক্ষু থেকে অশ্রু মুবারক চিক চিক করতে লাগলো। সুবহানাল্লাহ!
উহুদের জিহাদে হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত বীরত্বের শাহাদাত:
ঐতিহাসিক উহুদের জিহাদে হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকেই মুহাজেরীনগণের পতাকা অর্পিত হয়েছিল। জিহাদের একটি বিশেষ মুহূর্তে যখন চর্তুদিক হতে কাফির বাহিনী কর্তৃক মুসলমানগণ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তখনও হযরত মুসআব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অটল অবিচল চিত্তে উড়ন্ত পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক পাষ- বর্বর কাফেরের এমন ঈমানদীপ্ত দৃশ্য মোটেও সহ্য হলো না; তাই সে পতাকাটি ভূপাতিত করার লক্ষ্যে হযরত মুসআব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটি হাত মুবারক কেটে ফেললো। তখন তিনি উভয় বাহু একত্র করে পতাকাটি চেপে ধরে রাখলেন। এ সময় কাফেররা অনবরত তীর নিক্ষেপ করতে করতে উনাকে শহীদ করে ফেললো। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান না করলেন ততক্ষণ পর্যন্ত পতাকাটি ভূপাতিত হতে দেননি। পরে অন্য এক মুজাহিদ ফের পতাকাটি উত্তোলন করে রাখেন।
জিহাদ শেষে যখন হযরত মুসআব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দাফন করা হচ্ছিল তখন উনার পরিধানে একটি মাত্র চাদর ছিল। যা দ্বারা উনার সমস্ত শরীর মুবারককে আবৃত করা যাচ্ছিল না। মাথার দিক হতে ঢাকলে পদদ্বয়, আবার পদদ্বয় হতে ঢাকলে মাথার দিকটা অনাবৃত থাকতো। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- ‘উনার মাথার দিক হতে চাদর দ্বারা ঢেকে দিন এবং পদদ্বয় তৃণ দ্বারা আবৃত করুন।’ এই ছিল হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার জীবনের শেষ মুহূর্তের অবস্থা মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
শৈশব হতে অত্যন্ত আরাম আয়েশ, সৌখিন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হলেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে, দ্বীন ইসলামের সম্মানে হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সবকিছুকে বিসর্জন দিলেন।
দুনিয়ার অঢেল আরাম আয়েশ উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, দ্বীন ইসলাম, জিহাদ, ঈমানদীপ্ত শাহাদাত কোন কিছু থেকেই ক্ষণিকের জন্য বিমুখ রাখতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ!
অথচ বর্তমান যামানার মুসলমানরা দুনিয়ার ভোগ বিলাস, আরাম আয়েশে এত বেশী মশগুল হয়ে পড়েছে যাতে নিজেদের আচার-ঐতিহ্য সবকিছু প্রায় নিভু নিভু; আর এ অবস্থায় তাশরীফ এনেছেন বর্তমান যামানার দ্বীন ইসলামের রাহবার ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।
বর্তমান যামানায় একমাত্র উনার মুবারক ছোহবত লাভের মাধ্যমেই উম্মাহ’র পক্ষে হযরত মুসআব বিন উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মত ঈমানদীপ্ত ইশ্ক মুহব্বত তথা আত্মত্যাগের মহান দারাজাত লাভ করা সম্ভব। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)