স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা:
শানে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
, ০৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ০২ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাকে দেখেছি সবসময় তিনি পাক সাফ পরিপাটি থাকাকে পছন্দ করেন। যেকোন কাজ করার ক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে গুছিয়ে করতে পছন্দ করেন। যেমন কাপড় ভাঁজ করা, কাপড় কাটা, সেলাই করা, এমনকি তরকারি কাটার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে তিনি সবজির টুকরোগুলো যেন ছোট বড় বিভিন্ন রকম না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখেন। লিখার ক্ষেত্রেও অনুরূপ গুছিয়ে লিখা পছন্দ করেন। কোন শব্দের পর কোন শব্দ সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, কোন বাক্যের পর কোন বাক্য মানানসই তাও তিনি সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করেন। পোশাকের ক্ষেত্রেও কোন রংয়ের সাথে কোন রং বা ডিজাইন, কার জন্য কেমন মানানসই হবে এসব নির্বাচনের ব্যাপারে এবং আরও অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি উনার মাঝে সূক্ষ্ম মার্জিত রুচিবোধ প্রবল।
ইনসাফের ব্যাপারে তিনি সবসময় আপোষহীন। ছোট-বড়, কাছের-দূরের, ধনী-গরীব, আম-খাছ সবার জন্যই সর্বক্ষেত্রে উনার আইন সমান।
ব্যবসায়িক লেনদেন, হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে, ছাত্রী-শিক্ষিকা-অভিভাবিকা, মা-বাবা-সন্তান, শাশুড়ী-পুত্রবধূ সবার মাঝে ফায়সালার ক্ষেত্রে উনাকে দেখেছি ইনসাফের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেননি।
যখন পবিত্র আইমুল্লাহ শরীফ পালন করা শুরু হল তখন দেখা গেলো, কিছুদিন পরপরই একেকটি বিশেষ দিন পড়ে যাচ্ছে এবং ঘন ঘন মাহফিল হচ্ছে তখন তিনি বললেন, ‘আমাকে আইয়্যামুল্লাহ শরীফও পালন করতে হবে আবার ইনসাফও বজায় রাখতে হবে। ঘন ঘন মাহফিল হওয়ার কারণে যদি ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয় তাহলে তার জন্য আমাকে পরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ তাদের মা বাবা টাকা পয়সা খরচ করে সন্তানকে এখানে পড়তে দিয়েছে। আমি তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে একটা বাৎসরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি। এখন সেটা যদি না হয় তবে তা আমানতদারি বা ইনসাফ হবে না”। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি তখন এমন একটা ব্যবস্থা করলেন যাতে করে উভয়টিই রক্ষা হয়। সুবহানাল্লাহ!
তিনি যে কত বিনয়ী! আমি দেখেছি, তিনি যখন আল বাইয়্যিনাত শরীফ, আল ইহসান শরীফ বা কোনো রেসালা পাঠ করে শুনান সেখানে উনার সম্পর্কে কোনো প্রশংসা সূচক কথা লিখা থাকলে তিনি সবসময় অত্যন্ত সন্তর্পনে তা এড়িয়ে যান এবং সে লিখাগুলো কিছুটা বাদ দিয়ে পরবর্তী প্রসঙ্গে চলে যান।
মুলত এটা উনার সীমাহীন লাজুকতা বা বিনয়ের একটি উদাহরণ মাত্র। তিনি কখনো নিজের প্রশংসা নিজে করা পছন্দ করেন না। তবে কেউ যখন উনার নিকট উনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে তখন হয়তো কিছু কিছু বিষয় প্রকাশ করেছেন। সেটাও তিনি শুধু এ উদ্দেশ্যেই করেছেন যেন মানুষ পরবর্তীতে উনার অবর্তমানে সঠিক বিষয়টা জানতে পারে। কেউ যেন উনার কোনো বিষয় সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা বা ধারণা দিতে না পারে।
উনার সীমাহীন বিনয়ের অনেক দৃষ্টান্ত আমি দেখেছি। তারমধ্যে একটা ঘটনা বলছি, আমার বোনের সন্তানের জন্ম হওয়ার কয়েক মাস পূর্বে হঠাৎ এমআরআই রিপোর্টে দেখা গেলো তার বেবির পজিশনের মধ্যে অস্বাভাবিকতা রয়েছে। কয়েকবার একই রকম রিপোর্ট আসলো। চিকিৎসক খুবই ভীতিকর সমস্যার কথা জানালো। আমরা সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। আমি তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নিকট দোয়া মুবারক চাইলাম, চিকিৎসকদের কথা যেন সত্যি না হয়। তিনি আমাকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফে সুস্থতার নিয়তে হাদিয়া করার পরামর্শ মুবারক দিলেন। ইতিমধ্যে আরও ভালোমত বেবির অবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। এমআরআই করানোর কথা বলা হলো। এমআরআই করানোর আগে আমি আবারো একই দোয়া মুবারক চাইলাম। তিনি বললেন, “আচ্ছা।
এর ঠিক তিনদিন পর এমআরআই রিপোর্টে দেখা গেলো বেবি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে, কোনো জটিল সমস্যা তার মধ্যে নেই। আমার বোনের আহাল, শ্বশুর-শাশুড়ী এমনকি চিকিৎসক নিজেই অবাক হয়ে গেলো এই অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে! আমরা অবাক হইনি কারণ জানতাম এমন হবে। যেহেতু পর্বেও বহুবার এরকম ফায়দা লাভ করেছি। আমি বিষয়টি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাকে জানালাম যে, আপনাদের দোয়া মুবারকের উসীলায় অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেছে, রিপোর্ট ভালো এসেছে। ... এবার আমার অবাক হওয়ার পালা! আমি দেখলাম উনার চেহারা মুবারকে একটা স্নিগ্ধ খুশির দীপ্তি ছড়িয়ে পড়লো, তিনি একটুখানি লাজুক মুচকি হাসি মুবারক দিয়ে বেমেছাল বিনয়ীভাব প্রকাশ করে বললেন, “আচ্ছা”। শুধু এটুকুই। আমার সংকীর্ণ আক্বলে মনে হলো এভাবে সরাসরি বলাতে তিনি কিছুটা বিব্রত হয়েছেন। উনার মাঝে বিনয় আর লাজুকতা মিশ্রিত এক অন্যরকম রূপ দেখতে পেলাম। একরাশ ভাবনার মাঝে ডুবে গেলাম... তিনি এই সুখবরে খুবই খুশি হয়েছেন কিন্তু এতে যে উনার ভূমিকা রয়েছে তা যেন উনার কাছে কোনো বিষয়ই নয়! যেন তিনি কিছুই করেননি! একজন উপকৃত হয়েছে, শুধু এতেই তিনি খুশি। যাঁর দোয়া মুবারকের উসীলায় এতকিছু হয়ে যায় তিনি এতো বিনয়ী হন কিভাবে!!!
তারপর স্মরণ হলো, ওলীআল্লাহগণ তো এমনই হয়ে থাকেন। তাযকিরাতুল আউলিয়া নামক কিতাবে এমন অনেক ঘটনা পড়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুল কায়িনাতের রাজত্বভার উনাদেরকে হাদিয়া করেছেন, উনাদের এক ইশারায় অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে, কিন্তু কখনোই উনারা তা প্রকাশ করেন না বরং চরম বিনয়ী হয়ে থাকেন। কিতাবে পূর্ববর্তীগণের ঘটনা পড়েছি আর মিলিয়ে দেখেছি। কিছু কিছু বিষয় কিতাবের বর্ণনারও উর্ধ্বে ছিল। যা অতীতে কেউ দেখেনি, শুনেনি, লিপিবদ্ধও করেনি।
-আহমাদ হুবায়রা বছরী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)