মহিলাদের প্রকাশিত কিতাব থেকে ধারাবাহিক পর্ব- কিতাব: ১০০ টি চমৎকার ঘটনা
, ১৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
“পূর্ববর্তীদের ঘটনাসমূহ পরবর্তীদের জন্য নছীহত স্বরূপ”
ঘটনা-৩৯: দ্বীন ইসলাম পালনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দৃঢ়তা
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ ইহুদিদের হাত থেকে মুক্ত করেন মুসলিম সেনাপতি বিশিষ্ট ছাহাবী, হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সেখানকার ইহুদি সম্প্রদায়দের আসমানী কিতাবে বর্ণিত ছিল আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণ বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ জয় করবেন। এমনকি সেই সময় যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন থাকবেন, তিনি কি অবস্থায় আগমন করবেন সেটাও সেখানে বর্ণনা করা ছিল। তাই মুসলমানদের বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ বিজয়ের পর ইহুদিরা ফিকির করলো তবে উনারাই কি সেই সম্মানিত ক্বওম? তাই তারা কিতাবের সাথে মিলানোর জন্য হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট প্রস্তাব দিল যে, ‘আমরা সব কিছু আপনাদের বুঝিয়ে দিব। তবে শর্ত হলো আপনাদের যিনি আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে এখানে তাশরীফ মুবারক আনতে হবে। তিনি যদি দয়া করে আসেন তবে আমরা উনার নিকট সব হস্তান্তর করবো।’ তখন হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, ‘বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ ইহুদিদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ উনার চাবি যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন উনার নিকট হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক আপনি বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফে আসুন।’
চিঠি পেয়ে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তখন উনার পরিধানে কোনো নতুন বস্ত্র ছিল না। বরং উনার পরিধানে যে বস্ত্রটি ছিল তাতে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি ছিল। তার মধ্যে একটি পট্টি ছিল চামড়ার। দীর্ঘ সফরের কারণে তা ধুলায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অনেকদূর এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি উনার পোশাক মুবারকের অবস্থা দেখে বললেন, “হে হযরত আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আপনার পরিধেয় পট্টিযুক্ত বস্ত্রটি পরিবর্তন করে নিবেন?” জবাবে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘না। আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থাতেই যেতে দিন।’ সুবহানাল্লাহ! তিনি ঐ পোশাক মুবারকই ঝেড়ে যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করে নিলেন।
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ সফরেই পর্যায়ক্রমে নিজে একবার উটের উপর সাওয়ার হতেন, একবার উনার খাদিমকে সাওয়ার করাতেন ইনসাফের জন্য। যখন বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফে পৌঁছালেন তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে আর উনার খাদেম ছিলেন উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। সুবহানাল্লাহ! ইহুদিরা তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সবকিছু মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে গেছে তখন তারা উনার নিকট বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ উনার চাবি হস্তান্তর করলো।
চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদিরা আরয করলো, ‘হে হযরত আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি এতো দূর থেকে এসেছেন; আপনার সম্মানার্থে আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি সম্মতি প্রকাশ করেন।’ সম্মতি পেয়ে ইহুদিরা মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলো। আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। উনার সম্মুখে চামড়ার সুন্নতি দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হল এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশত দেয়া হলো। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশত দিয়ে খেলেন। খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরাগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে অর্থাৎ দস্তরখানা পরিষ্কার করে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে কেউ একজন বললেন, ‘হে হযরত আমীরুল মু'মিনীন! এখানে অনেক রাজা বাদশা, আমীর ওমরা উপস্থিত। আপনি যদি তাদের সম্মুখে এভাবে রুটির টুকরা টুকিয়ে টুকিয়ে খান, তবে কেমন দেখা যায়?’ জবাবে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম সবাইকে লক্ষ্য করে বুলন্দ স্বরে বললেন, “আমি কি এইসব আহমকদের (রাজা-বাদশা) জন্য আমার যিনি রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সুন্নত মুবারক উনাকে পরিহার করবো?” সুবহানাল্লাহ!
খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত ফাতকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই সুন্নত মুবারক যথাযথভাবে পালন করেছেন। তিনি সবসময় সবকিছুর উপর সুন্নত মুবারক অনুসরণকে প্রাধান্য দিতেন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)