মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয় (পর্ব-২০)
, ০৫ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ সামিন, ১৩৯০ শামসী সন, ২৮শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ بِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمُ اهْتَدَيْتُمْ
অর্থ: “আমার সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত পেয়ে যাবে।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ অনুসরণযোগ্য। কেননা উনাদের অনুসরণ করার অর্থই হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করা। আর উনাদের হুকুমকে অস্বীকার করার অর্থই হলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমকে অস্বীকার করা। আর বিশেষ করে আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ফাযায়িল ফযীলত যেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
افضل الناس بعد الانبياء حضرت ابو بكر ثم عمر رضى الله تعالى عنهما.
অর্থ: “হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَوْ كَانَ بَعْدِي نَبِيٌّ لَكَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ.
অর্থ: “যদি আমার পরে কেউ নবী হতেন তবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিই নবী হতেন।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ الْحَقُّ يَنْطِقُ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ
অর্থ: “স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার যবান মুবারকে কথা বলেন।” অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কথা মুবারকের সমর্থনে মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশটিরও বেশী পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলে শয়তানের মাথা খারাপ হয়ে যেত, কোন রাস্তা দিয়ে সে পালাবে।” সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এতসব ফযীলত ও মর্যাদা, উনার পক্ষে কি করে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা করা সম্ভব? এটা কল্পনাও করা যায় না।
কাজেই সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, তা অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ সমর্থিত এবং আমাদের জন্য তা নিঃসন্দেহে অনুসরণীয়। তাছাড়া উক্ত বিষয়টি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন অর্থাৎ সত্যায়িত করেছেন। আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
خذوا نصف دينكم من هذه الحميرة.
অর্থ: “তোমরা ওহী মুবারক ব্যতীত পূর্ণ দ্বীনি ইলিম গ্রহণ করবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে।”
অথচ আজ আমাদের সমাজের কিছু জাহিল কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কখনো মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা। আর তাদের এ চির সত্যকে অস্বীকার করার কারণ তারা দু’টি অবস্থা থেকে খালি নয়। (১) তারা এ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ তাই তারা মিথ্যা প্রলাপ বকছে। (২) তারা মনে করে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞাকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে পারলে মহিলাদের পক্ষে মসজিদে যেতে আর কোন বাধা বা নিষেধ থাকবে না। নাঊযুবিল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, নিম্নে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে তার দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
ولقد نهى عمر رضى الله عنه النساء عن الخروج الى المساجد فشكون الى عائشة عليها السلم- فقالت لو علم النبى صلى الله عليه وسلم مما علم عمر عليه السلم ما اذن لكن فى الخروج- (فتح القدبر ج ১ صفه ৩১৪، دار العلوم ديوبند)
অর্থ: যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন, তখন মহিলারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তখন তিনি বললেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি তোমাদের এখন যে অবস্থায় দেখছেন, এরূপ অবস্থায় যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখতেন, তবে তোমাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিতেন না।” (ফাতহুল ক্বাদির, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ)
আর সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা মুবারককে যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি পূর্ণ সমর্থন করেছেন, তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لو ان رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى ما احدثت النساء لمنعهن. (ابو دائود- بخارى، مسلم)
অর্থ: “যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই তিনিও নিষেধ করতেন।” (আবূ দাউদ শরীফ, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সুতরাং উপরোক্ত কিতাবসমূহের বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি তা পূর্ণ সমর্থন করেন অর্থাৎ সত্যয়ন করেন এবং এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারুক্ব আলাইহিস সালাম তিনি নিষেধ করেননি- তারা হয় গ-মূখ্য, জাহিল অথবা চরম মিথ্যাবাদী। (চলবে)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ আহমদ আবূ সাফওয়ান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জমিনে ফিতনা-ফাসাদের বড় একটা কারণ বেপর্দা-বেহায়া নারী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)