বর্তমান ডলার সংকটে মাত্র কয়েকটি শস্যদানা ও সার উৎপাদনে মনোযোগী হলেই প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব। সরকারের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নেয়া।
, ২৪ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সম্পাদকীয়
পরিবার রাষ্ট্রের একক। পরিবার ক্ষুদ্র। রাষ্ট্র বৃহৎ। তবে পরিবারের যেমন খাদ্য বাজেট ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রক্রিয়া থাকে; রাষ্ট্রের তেমনি থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রের এ চিন্তাটা গৎবাধা। দূরদর্শী ও ফলদায়ক এবং সক্রিয় ও যথেষ্ট নয়।
গ্রামের গৃহস্থ পরিবারগুলো নতুন ফসল ওঠার পর সাধারণত নিজেদের সারা বছরের চাল ও ডাল মজুত রেখে বাকিটা বিক্রি করে। তারা মনে করে, ঘরে খাবার থাকাটা সবচেয়ে জরুরি।
গ্রামের মানুষের এই খাদ্য নিরাপত্তা চিন্তা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেশের মানুষের জন্য খাদ্য দেশেই উৎপাদন করতে হবে। মনে রাখা দরকার, সংকটকালে কেউ খাদ্য বিক্রি করে না। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আমরা দেখলাম বিভিন্ন দেশ চাল ও গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এতে বিশ্ববাজারে দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেল, আমরা ভুক্তভোগী হলাম।
বলার অপেক্ষা রাখেনা, কথিত নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে। এ অবস্থায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়ানো, রপ্তানি বাড়ানো, বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগী সরকার। আমদানি নিয়ন্ত্রণেও কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটবে বলে মনে হয় না।
এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে আমরা কৃষি খাতে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনার কথা ভাবতে পারি। আমরা জানি চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ভুট্টা, ডাল, মসলা, ফল, সবজি (মূলত টমেটো), নারকেল, নারকেলের শাঁস ও সারের মতো পণ্য আমদানিতে বিপুল ব্যয় হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত বলছে, কৃষি পণ্য আমদানিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশকে ১০ বিলিয়ন ডলারের (১ হাজার কোটি ডলার) বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) হিসাবে, একই অর্থবছরে সার আমদানিতে ব্যয় ৫ বিলিয়ন ডলারের (৫০০ কোটি) বেশি।
ফলে দেখা যাচ্ছে, কৃষি পণ্য ও সার আমদানিতে বাংলাদেশকে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। আমরা যদি কৃষি খাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি, তাহলে আমদানি ব্যয়ের বড় একটি অংশ সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশে কর্মসংস্থানও বাড়বে। উল্লেখ্য, আগামী ১০ বছরে মূল্যস্ফীতি ও চাহিদা বাড়ার কৃষিতে আমদানি বেড়ে তিনগুণ হতে পারে।
বিবিএসের হিসাবে, বাংলাদেশ বছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন করে। প্রকৃত হিসেব বলে বেশী তারপরও যদি উৎপাদন মাত্র ৩ শতাংশ বাড়াতে পারি তাহলে ৪৪ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। এটা খুব কঠিন কাজ নয়, কৃষিতে যান্ত্রিকভাবে চারা রোপণ ও ফসল সংগ্রহ নিশ্চিত করা এবং উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো ছড়িয়ে দিতে আরেকটু জোর দেওয়ার মাধ্যমেই এটা করা যায়।
বাংলাদেশে মোট চাল উৎপাদনের ৫০ শতাংশ আসে ১৭টি জেলা থেকে। এই সব জেলায় উচ্চফলনশীল জাত যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি কৃষির আধুনিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের বেড়েছে ওই সব জেলায়। ১৭ জেলার সাফল্যকে বাকি জেলাগুলোতে নিতে পারলে চাল আমদানির দরকার হবে না।
বাংলাদেশে বছরে ৭০ লাখ টনের মতো গমের চাহিদা রয়েছে। আমদানি করতে হয় ৬০ লাখ টন। আর ১০ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়। গম আমদানি রাতারাতি কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। দেশে উৎপাদন বাড়াতে আবহাওয়ার বিষয় রয়েছে। তবে উচ্চফলনশীল জাত ছড়িয়ে দেওয়া ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা গমের উৎপাদন এখনকার চেয়ে আরও বাড়াতে পারি।
সরকারি সার কারখানাগুলো আমরা প্রায় সারা বছর বসিয়ে রাখি। নতুন একটি সার কারখানা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। সারের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প ভাবা যেতে পারে-প্রথমত, আমরা সরাসরি সার আমদানি না করে আপাতত গ্যাস আমদানি করব। সেই গ্যাস দিয়ে সার তৈরি হবে। এতে একটা বড় সাশ্রয় হবে বলে মনে করি। তবে এ জন্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ দরকার। মধ্য মেয়াদে দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে গ্যাস সার কারখানায় দিতে হবে।
গমের বিকল্পও ভাবা যেতে পারে। বিশেষ করে হালকা খাবার ও বিস্কুট তৈরিতে চালের গুড়া, মিষ্টি আলু ও ভুট্টার ব্যবহার বাড়াতে জোর দেওয়া যায়। নাশতার টেবিলে ভুট্টাজাত খাবার বাড়ানো যায়। কারণ দেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ছে।
বিবিএসের হিসাবে, দেশে বছরে ৪৩ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়। আমদানি হয় সাড়ে সাত লাখ টন। উচ্চফলনশীল জাত ছড়িয়ে দেওয়া ও আবাদ বাড়িয়ে ভুট্টা আমদানিতে প্রায় ৭০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি এখন অনাবাদি। ২০ লাখ হেক্টর জমি এক ফসলি।
পেঁয়াজ উৎপাদনে আমাদের দারুণ সাফল্য রয়েছে। এখন বছরে ৩৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। অবশ্য ৩০ শতাংশ আমরা সংরক্ষণ করতে পারি না। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো ও সংরক্ষণ করা গেলে ৩১ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব।
পেঁয়াজের সাফল্য কেন রসুন ও আদার ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োগ করি না? দেশে চীনা বড় রসুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ওই জাত বাংলাদেশে প্রচলন করা যায়। পাহাড়ি এলাকায় আদা হতে পারে লাভজনক অর্থকরী ফসল।
তাজা টমেটো ও প্রক্রিয়াজাত টমেটো আমদানিতে বাংলাদেশকে বছরে ব্যয় করতে হয় প্রায় আড়াই কোটি ডলার। অথচ মৌসুমের সময় বাংলাদেশে টমেটো পচে যায়। হিমাগার প্রতিষ্ঠা করে টমেটো সংরক্ষণ করে আমদানি কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি গ্রিন হাউসে উৎপাদনের উদ্যোগ নিলে সারা বছর দেশের টমেটো খেতে পারবে দেশের মানুষ।
উপকূলীয় জেলা ও চরগুলোতে ব্যাপকভাবে নারকেল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলে আমদানির প্রয়োজন হবে না।
রাসায়নিক সার আমদানিতে আমাদের ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
জৈব সার উৎপাদনে জোর দিতে হবে। দেশের শহরাঞ্চলে এখন দিনে ২৫ হাজার টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হয় (সূত্র এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ইএসডিও), যা জৈব সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, জৈব সার উৎপাদনে বড় প্রকল্প নিলে রাসায়নিক সার আমদানিতে ১০০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব।
অতএব, এতসব সুযোগকে হেলাফেলা করে ছেড়ে রাখা কোনো প্রকারেই ঠিক হবে না। বর্তমান ডলার সঙ্কটে সব সুযোগের সর্বোচ্চ সুফল নিতে হবে ইনশাআল্লাহ।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঝলসে যাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে জনসাধারণ। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের রকমফের চটকদার কথার পরিবর্তে এক্ষনি মূল্যস্ফীতিকে সংকুচিত করে দেশবাসীকে বাঁচাতে হবে ইনশাআল্লাহ।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৭ হাজার ৮০০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের দেশে কয়লার ঘাটতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ কেন? বিগত মাফিয়া সরকারের পথ থেকে সরে এসে কয়লা উত্তোলন শুরু করুন।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গঃ মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও অপব্যবহার।
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়, তাপ মুক্তি নিরাপদ ফল-সবজি প্রাপ্তি, পরিবেশ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হোক একটুকরো বাগান
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৪০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বন্ধ হয়েছে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে ইনশাআল্লাহ ঘুরে দাঁড়াবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুদি দোকান, স্টেশনারি দোকান, শপিং মল, পার্লার, সুপার শপ সবখানেই ভেজাল কসমেটিক্স। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবহারকারীরা। সরকারের কঠোর নজরদারী ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দেশের ৪ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ দেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় হয় প্রায় ৯০ কেজি। বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৮শে রবীউছ ছানী শরীফ! সাইয়্যিদাতুনা উম্মুর রদ্বাআহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ, আখু রসূলিল্লাহ মিনার রদ্বাআহ সাইয়্যিদুনা হযরত মাসরূহ্ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। সুবহানাল্লাহ!
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিক্ষা খাতে পতিত সরকারের বাজেটে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে- শিক্ষা উপকরণের দাম কমিয়ে বর্তমান সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে ইনশাআল্লাহ
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শব্দ দূষণ এখন শব্দ সন্ত্রাস ও নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। নারিকেল দ্বীপ নয় শব্দ দূষণে বিপর্যস্থ ঢাকাকে উপযোগী করার জন্য ঢাকার জনযট সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন’ ৩৯ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৬ গুণ উৎপাদন বাড়ছে মাছের, তবুও নাগালে নেই দাম
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম প্রজন্মকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরকালের কথা স্বরণ করে মুসলিম উম্মাহকে বিধর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)