প্রসঙ্গ: সিডও সনদ ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান পরিবর্তনের দাবি! ‘নারীদের সম্পত্তিতে সমঅধিকার নিশ্চিত করা দরকার’
, ২০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
বক্তারা তাদের বক্তব্যে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। নাউযুবিল্লাহ! কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহিলারা সম্পত্তিতে কত ভাগ পাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেটার বিরুদ্ধাচরণ করে কথিত সমান অধিকারের দাবি তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)
কেউ মুসলমান দাবি করলে তার জন্য পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিধানের বাহিরে কথা বলা বা দাবি তোলা সম্পূর্ণ কুফরী। এতে সে ঈমানহারা হয়ে বেঈমান হয়ে যাবে। এখানে বক্তারা সে রকমই দাবি তুলেছে। নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য ৮ই মার্চ উপলক্ষ্যে আলোচ্য সংগঠন বা বক্তাদের বক্তব্য তাদের নিজস্ব বক্তব্য নয় বরং এটা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী ‘সিডও সনদের’ শেখানো বুলি। এই সনদের পরতে পরতে রয়েছে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী ধারা। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বিকৃতির এজেন্ডা দেয়া হয়েছে এই সনদে। বিদেশী পরিচালিত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন ও মিডিয়া প্রতিবছর ৮ই মার্চে তথাকথিত নারীদিবসের নামে সিডও সনদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী ধারা বাস্তবায়নে জোড় প্রচারণা চালায়।
নারীর তথাকথিত মানবাধিকার, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নামে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সিডও সনদ পাস করে। এই সনদ নারীদের সুরক্ষিত করার পরিবর্তে অরক্ষিত করেছে।
বিশ্বের অনেক দেশ সনদটি মেনে নিলেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী ধারা থাকায় সৌদি আরবসহ কিছু দেশ এখনো সনদে স্বাক্ষর করেনি।
সনদের অধিকাংশ ধারাগুলি পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং সম্মানিত শরয়ী আইন ও জীবনব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। সিডও সনদের অধিকাংশ ধারাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সম্পূর্ণ বিরোধী। এই সনদের মাধ্যমে জাতিসংঘ মুসলিম দেশগুলোকে পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। কারণ যেসব দেশ এই সনদে স্বাক্ষর করেছে, এই সনদ বাস্তবায়নে তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতি চার বছর পর পর জাতিসংঘের সিডও কমিটির কাছে তার প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিরোধী অধিকাংশ ধারার মধ্যে একটি ধারা হলো, ১৬ ধারা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিয়েসহ সকল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে নারী-পুরুষের সম অধিকার। বিয়ে, বিয়েতে পছন্দ-অপছন্দ এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও দায়-দায়িত্ব। সন্তান গর্ভে ধারণ ও জন্মদান এবং সন্তান ধারণে বিরতি ও সন্তান সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার। সম্পত্তির মালিকানা, ব্যবস্থাপনা, ভোগ ও বিরোধ নিষ্পত্তিতে নারী-পুরুষের একই অধিকার। বাল্যবিবাহ বা বাল্যকালে বাগদান নিষিদ্ধকরণ এবং বিয়ের নূন্যতম বয়স নির্ধারণ ও বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা।’
অর্থাৎ সিডও সনদের মূল ভাষ্য হলো, পুরুষ যদি চারটি বিবাহ করতে পারে তাহলে মহিলাদেরও চারটি বিবাহের অধিকার দিতে হবে। মহিলাকে তার পছন্দনীয় যে কোন পুরুষের মাধ্যমে গর্ভধারনের অধিকার দিতে হবে। মেয়েদের শুধু বিবাহ বা সম্পত্তির ক্ষেত্রে নয় বরং ব্যক্তিগত যেকোন বিষয়ে পুরুষের সমান অধিকার তারা লাভ করবে। সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারী সমতার বিপরীত হয় পবিত্র কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফের এমন বিধান মানা যাবেনা। পরিবার বা দ্বীন ইসলাম উনার কোন বিধিনিষেধ মানা যাবেনা। নারী সমতার পরিপন্থী যেকোন আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় সিডও অনুসমর্থনকারী রাষ্ট্রকে সিডও কমিটির কাছে জবাবদিহী করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
উপরোল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে সরাসরি বিরুদ্ধাচারণ। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পুরুষকে প্রয়োজনে চারটি পর্যন্ত বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘বিয়ে করে নাও দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত।’ (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ: ৩)
ইতিমধ্যে সৌদি আরব পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী এই সনদটি প্রত্যাখ্যান করেছে। সৌদি আরবের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদিল আল জাবির বলেছে, ‘নারী অধিকারের নামে জাতিসংঘ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এবং শরিয়তের বিধি-বিধানের সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ করছে। কোনোভাবেই তাদের এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব ইসলামী দেশ সিডও সনদের পক্ষাবলম্বন করেছে, তাদের দ্বিতীয়বার চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’
-আহমদ মুবাশ্বশিরা
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)