নতুন ভূমি আইনে সাত ধরনের দলিল বাতিল
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পাঁচ মিশালী
সাধারণত যে দলিলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসারের কোনো বৈধ সিল ও স্বাক্ষর থাকে না, সরকার কোনো রেজিস্ট্রি ফি পায় না, এসব দলিল নতুন আইন অনুসারে বাতিল হতে যাচ্ছে। বিষয়টির আলোচনার প্রারম্ভে আমাদের দলিল রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি সম্পর্কে ভাল ধারণা অর্জন করতে হবে।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যেমন- বিক্রয় দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমি ক্রয় করার আগে বায়না দলিল করলে ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমা দিতে হবে। রেজিস্ট্রি ছাড়া বায়না দলিলের আইনগত মূল্য নেই। বায়না দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে বিক্রয় দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে। হেবা বা দানকৃত সম্পত্তির দলিলও রেজিস্ট্রি করতে হবে। বন্ধককৃত জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। কোনো ভূমি সম্পত্তি মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাটোয়ারা করা এবং ওই বাটোয়ারা বা আপোস বণ্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে জমি রেজিস্ট্রেশন করতে যা যা লাগে সেগুলোর অন্যতম হলো- বিক্রীত জমির পূর্ণ বিবরণ, দলিলে দাতা-গ্রহীতার পিতা-মাতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সাম্প্রতিককালের পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। যিনি জমি বিক্রয় করবেন, তার নামে অবশ্যই উত্তরাধিকার ছাড়া নামজারি থাকতে হবে। দলিলে বিগত ২৫ বছরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও কার কাছ থেকে কে ক্রয় করল, সে বিবরণ লেখা থাকতে হবে। সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য, সম্পত্তির চারদিকের সীমানা, নকশা দলিলে থাকতে হবে। যিনি ক্রয় করেছেন তিনি ছাড়া অন্য কারও কাছে এই জমি বিক্রি করা হয়নি মর্মে হলফনামা থাকতে হবে। জমির পর্চাগুলোতে সিএস, এসএ, আরএস মালিকানার ধারাবাহিকতা (কার পরে কে মালিক ছিল) থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ভায়া দলিল সংযুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুসারে রেজিস্ট্রি আইন ও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি নিয়ে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। সাধারণত দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় রেজিস্ট্রেশন আইন, স্ট্যাম্প আইন, আয়কর আইন, অর্থ আইন ও রাজস্ব সংক্রান্ত বিধি এবং পরিপত্রের আলোকে। সব দলিলের রেজিস্ট্রি ফি সমান নয়। সরকার বিভিন্ন সময় সমসাময়িক বিবেচনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রি ফি নির্ধারণ করে থাকে। কর দেওয়ারও সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। ভ্যাট ও উৎসে কর সব সময়ই জমির বিক্রেতা প্রদান করবে। আয়কর আইন অনুসারে, এই দুই ধরনের করের পরিমাণ বিক্রেতার আয়ের ওপর নির্ভর করবে। এই কর বিক্রেতার নামে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। উৎসে কর ও ভ্যাট ছাড়া অন্য সব ধরনের কর জমির ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হবে।
সে যাই হোক, নতুন ভূমি আইন প্রণীত হলে রেজিস্ট্রিবিহীন দলিল বাতিল হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে জাল খতিয়ান ও দলিল সৃষ্টি করলে সেটিও বাতিল বলে পরিগণিত হবে। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিসের গচ্ছিত দলিলগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। তখন কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক ভূমি অফিসের অসৎ ব্যক্তির সঙ্গে মিলে জাল খতিয়ান ও দলিল সৃষ্টি করে অন্যের সম্পদ দখল ও ভোগ করে। সে সংক্রান্ত দলিল কার্যকর হবে না। কেউ যদি অন্যের জমির মালিক হওয়ার উদ্দেশ্যে জাল দলিল তৈরি করে, সেক্ষেত্রে সেই জাল দলিল বাতিল হয়ে যাবে। খাস জমি বেআইনি ভাবে দখল করে নিলে যেমনÑ চর, নদীর উপকূলের জমির দলিল করে অনেকেই ভোগ করছেন। এখন থেকে এসব খাস জমির জাল দলিল বাতিল হয়ে যাবে। আপনি কারও কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন, কিন্তু তার যতটুকু অংশ সে পায়, তার ওয়ারিশান সূত্রে তার অধিক লিখে নিয়েছেন- এ ধরনের জমির দলিল কার্যকর হবে না।
ভূমি আইন (খসড়া) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কারণ, প্রায় প্রত্যেক মানুষই ভূমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জমির দলিল জাল করলে দ-বিধি আইন, ১৮৬০তেও শাস্তির বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ আইনে নতুন করে শাস্তির বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। খসড়া আইনেও কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। ভূমির জালিয়াতি, অবৈধ দখল, প্রতারণা ও অপরাধ দমন, পেশিশক্তি বা অস্ত্রের ব্যবহার রোধে নতুন ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ শীর্ষক খসড়া আইন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তার পাশাপাশি খসড়া আইনেও শাস্তির বিধান সংযোজন করা হয়েছে। খসড়া আইনে যেসব বিষয়ে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার, সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আনা হয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কয়েক প্রকারের দলিল রয়েছে, যেগুলো সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল নয়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে- বায়নাপত্র দলিল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দলিল, উইল দলিল, ওছিয়ত দলিল, চুক্তিপত্র দলিল, রেজিস্ট্রি অফিসে বাতিলকরণ দলিল- রেজিস্ট্রির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দলিলের পক্ষগণ সকলের সম্মতিতে একত্রে দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বাতিল করতে পারেন। সম্পত্তি হস্তান্তরের বিভিন্ন দলিল যেমন- সাব-কবলা, দানপত্র, হেবার ঘোষণাপত্র, হেবাবিল এওয়াজ ইত্যাদি দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে ‘বাতিলকরণ দলিল’ রেজিস্ট্রি করে বাতিল করা যায় না। আইনগত ও যৌক্তিক কারণে দলিল বাতিলের প্রয়োজন হলে আদালতে মামলা দায়ের করে বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।
আইনটি প্রণীত হলে নতুন আইন অনুসারে ওয়ারিশদের বঞ্চিত করা দলিলগুলো বাতিল বলে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রি করার পর সেই জমি কেউ ক্রয় করলে সেই ক্রয়কৃত জমির দলিল কার্যকর হবে না। বাদ যাবে না প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত দলিলগুলো। ভুল বুঝিয়ে, প্রতারণা করে হেবা দলিল করে নিলে দলিল কার্যকর হবে না। নতুন আইন অনুসারে দলিল বাতিল হওয়ার পাশাপাশি বাতিল দলিলের মালিককে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের জন্য আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শাস্তির মধ্যে রয়েছে ৩ মাস থেকে শুরু করে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগের’ সন্ধান!
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির গর্ভে বিজ্ঞানীদের নজর
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে সমস্ত মারাত্মক ক্ষতি করে?
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের বসবাস বা দ্বীন ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করে রেখেছে যে সমস্ত বিধর্মী রাষ্ট্র
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২০২২ সালে সৌরজগতের বাইরে মিলেছে ২০০ গ্রহের সন্ধান
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওনে যেভাবে দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আবাসন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপিয়ানরা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাওসে মুসলমানদের জীবনধারা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাতারের মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় শত শত চিহ্ন
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (২)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (১)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)