দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩৬)
হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত আত্মত্যাগ
, ০৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মুহম্মদ ইবনে ইসহাক হযরত আছিম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন- ঐতিহাসিক উহুদ জিহাদের পর আদল ও কারাহ গোত্রের কতিপয় লোক পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আরজ করলো যে, তাদের গোত্র ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতএব, কিছুসংখ্যক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে যেন তাদের সাথে দেয়া হয়। গোত্রের লোকজনকে দ্বীন ইসলামের তা’লীম তালকীন দেয়ার জন্য।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সাথে হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ৬ জন মতান্তরে ১০ জনকে পাঠালেন। প্রতিনিধি দল মক্কা শরীফ ও আছফানের মধ্যবর্তী স্থানে আর-রাজী নামক কূপের নিকট পৌঁছলে সাথের লোকগুলো পরিকল্পিতভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের উপর স্থানীয় ‘বনু লেহ্ইয়ান’ সন্ত্রাসী মুশরিকদের লেলিয়ে দেয়। ১০০ তীরন্দাজসহ মুশরিক সন্ত্রাসীদের সংখ্যা ছিল প্রায় দুই শতাধিক। এহেন অবস্থার সম্মুখীন হয়ে হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সঙ্গীদেরকে নিয়ে দ্রুত একটি পর্বতের টিলায় আরোহন করেন। এ সময় মুশরিকরা বলতে লাগলো- মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনাদের হত্যার কোন উদ্দেশ্য নেই এবং আমাদের নিকট আত্মসমর্পণ করুন; তাহলে মক্কা শরীফের মুশরিকদের হাতে আপনাদেরকে তুলে দিতে পারলে আমরা কিছু কামাই করতে পারবো। হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুশরিকদের ধোঁকা বুঝতে পেরে দীপ্তকণ্ঠে বলে উঠলেন, আমি কোন মুশরিকদের নিকট আত্মসমর্পণ করবো না। কোন কাফিরের জিম্মায়ও আমি যাবো না।
এ সময় তিনি দু’হাত তুলে দুয়া করলেন, আয় বারে ইলাহী! আপনি আপনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আমাদের অবস্থা অবহিত করুন। উনার দুয়া তৎক্ষণাৎ কবুল হলো। যার ফলে মদীনা শরীফে থেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের অবস্থা সম্পর্কে উপস্থিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাঝে বর্ণনা করছিলেন।
এদিকে হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সঙ্গীদের নিয়ে মুশরিকদের মুকাবিলা করতে লাগলেন। উনার তীর শেষ হয়ে গেলে উনি বল্লম দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন। এক সময় বল্লমও ভেঙ্গে গেলে শুধু তরবারী দ্বারাই জিহাদ করতে লাগলেন। অবশেষে ঈমানদীপ্ত বীরত্বের সাথে প্রায় দুই শতাধিক মুশরিক সন্ত্রাসীদের সাথে লড়তে লড়তে ৭ জন সঙ্গী সাথীসহ শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেন। শুধু এতটুকুই নয়; তিনি দৃঢ় সংকল্প করেছিলেন যে, তিনি কোন মুশরিককে স্পর্শ করবেন না এবং কোন মুশরিক দ্বারাও তিনি স্পর্শিত হবেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলা দিয়ে তিনি দুয়া করেছিলেন- আয় আল্লাহ পাক! আজ আমি আপনার মনোনীত দ্বীনের হিফাজত করতে লড়ছি, আপনি আমার দেহের হিফাজত করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এই দুয়াও কবুল করলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, মুশরিকরা হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে প্রমাণস্বরূপ উনার জিসিম মুবারকের কোন একটি অংশ পবিত্র মক্কা শরীফে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু লোক পাঠায়। মুশরিকরা উনার জিসিম মুবারকের কাছে যেতেই এক ঝাঁক বিষাক্ত মৌমাছি বা বোলতা এসে তাদেরকে এমনভাবে কামড়াতে শুরু করলো তারা দিশেহারা হয়ে লাত-মানাত-উজ্জার নাম বিকটভাবে চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে পলায়ন করে। দিনের আলোতে এমন বেগতিক ঘটনার সম্মুখীন হয়ে তারা পরিকল্পনা করলো যে, রাতের আঁধারে উনার জিসিম মুবারক নিয়ে যাবে। কিন্তু রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার আগেই এমন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো যে, গোটা উপত্যকায় প্লাবনের ঢল নামে। সেই প্লাবনের স্রোতে হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারক কোথায় ভেসে গেলো মুশরিকরা তা তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেলো না। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ সন্তুষ্টি এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম। ঐতিহাসিক বদর এবং উহুদের জিহাদে তিনি বিশেষ বীরত্বের প্রমাণ রাখেন। উহুদের জিহাদে কঠিন এক পরিস্থিতিতে যে পনের জন মুজাহিদ পাহাড়ের মত অটলচিত্তে কাফির-মুশরিকদের মুকাবিলা করেন উনাদেরই অন্যতম একজন হলেন হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহ!
বর্তমানকালে হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঈমানদীপ্ত বীরত্বের সাথে দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করতে প্রতিক্ষেত্রে ইহুদী-মুশরিক-নাছারা এবং মুনাফিক উলামায়ে ‘সূ’দের মুকাবিলা করে যাচ্ছেন বর্তমান যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি।
এ কারণেই দেখা যায়, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গায়েবী মদদে কুদরতীভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনাকে বিধর্মী-বিজাতী উলামায়ে ‘সূ’দের যাবতীয় বদরছম-বদপ্রথা তথা বদতাছীর থেকে সর্বাবস্থায় মাহফুজ অর্থাৎ সুরক্ষিত করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)