ডাব ও নারিকেলের পার্থক্য ও পরিচিতি
, ২৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পাঁচ মিশালী
ডাবের পানি পান একজন মানুষকে সবদিক থেকেই রাখতে পারে সুস্থ সতেজ আর প্রাণদীপ্ত। সর্বগুণ বিচারে ডাবের পানি এক অমূল্য প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর পানীয়। প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি দারুণ জনপ্রিয়। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এটি মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মানুষের কাছে ডাবের পানি হলো বেহেশত থেকে আসা পানিবিন্দু। সাম্প্রতিককালে পাশ্চাত্যেও একে অভিহিত করা হচ্ছে সুপারফুড, মিরাকল ড্রিংক্স ইত্যাদি নামে।
ডাব বা নারিকেলের ইংরেজি রূপ কোকোনাট শব্দটি এসেছে পর্তুগিজ শব্দ দকোকোদ থেকে। প্রথমদিকের স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা পনের শতকে নারকেলকে অভিহিত করতো ‘কোকোস’ হিসেবে।
ডাবের উৎপত্তি হয়েছিলো পাপুয়া নিউগিনিতে। আবার অনেকে মনে করেন এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলই ডাবের প্রথম উৎপত্তিস্থল। পরবর্তী সময়ে শ্রীলংকা, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, ঘানাসহ পৃথিবীর প্রায় ৯৩টি দেশে এর বিস্তার ঘটে। উৎপত্তিস্থল যাই হোক, বর্তমানে বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ ডাব বা নারকেল সরবরাহ হয় ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইন থেকে।
বাংলাদেশে লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, নাটোর অঞ্চলে নারকেল বা ডাবের চাষ হয়। স্থানীয় ভাবে জানা যায়, দেশের মোট নারকেল উৎপাদনের বড় অংশই উৎপাদন হয় উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলায়। ১৪৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ডাব বা নারকেল গাছ। এতদিন নারকেলের জন্য এ জেলার সুনাম থাকলেও এখন ডাবের জন্যও সারাদেশে সুপরিচিত লক্ষ্মীপুর।
গ্রীষ্মম-লীয় ও উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে মূলত ডাব বা নারকেলের ফলন ভালো হয়। উপকূলীয় উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া ডাব বা নারকেল চাষে অতি উপযোগী। সফলভাবে চাষ সম্প্রসারণের জন্য যে অনুকূল পানিবায়ু দরকার তার সবই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিরাজ করে। তাছাড়া ডাব গাছের জন্য মাটি নিয়েও কোনো সমস্যা হয় না। যেকোনো মাটিতেই এর ফলন ভালো হয়।
বাংলাদেশ কৃষি সার্ভিসের তথ্য অনুসারে, তারা বারী নারকেল-১ এবং বারী নারকেল-২ নামে দুটি জাত অবমুক্ত করেছে। দুটি জাতই আকারে লম্বা ও মুক্ত পরাগায়িত। উপকূলীয় অঞ্চলের ভেতরে এই দুই জাতের ডাব সম্প্রসারণ করার যোগ্য।
ডাব ও নারিকেল আদতে একই ফল হলেও অনেকে এর পার্থক্য সম্পর্কে অবগত নন। নারকেল হলো ডাবের পরিপক্ক রূপ। ডাব পেকে গেলে তা নারকেলে রূপান্তরিত হয়।
ডাব বা নারিকেলের পানিতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি জরুরি উপাদান রয়েছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম রয়েছে। ডাবের পানিতে যেসব উপাদান রয়েছে তা প্রতিদিনের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে নানা প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে।
প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি এই পানীয়টি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্য গুণেও ভরপুর। ব্যায়াম কিংবা পরিশ্রমের পর এই পানীয়টি পান করলে শরীরের ইলেক্টোলাইটের ভারসাম্য ফিরে আসে। এতে থাকা পটাশিয়াম ও সোডিয়াম এই ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কপার এবং অ্যামিনো এসিড শরীর সুস্থ রাখতে দারুণ কার্যকরী।
ডাব বা নারিকেল গাছ বহুবর্ষজীবী উঁচু পাম উদ্ভিদ । ডাব গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কোকোস নিউসিফেরা। কাঁচা অবস্থায় ডাব আর পরিপক্ক হলে নারিকেল। বালুকাময় সৈকত এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল ছাড়াওও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাটিতেও জন্মে । পাহাড়ী মাটিতে ভাল জন্মে। বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার ঘটে।
ডাব গাছকে ‘জীবনের গাছ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি মানুষ খাদ্য, জ্বালানী, প্রসাধনী, তেল, ভেষজ ঔষধ সরবরাহ, দালান নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর রয়েছে আরও নানাবিধ ব্যবহার।
ডাবের পানিতে দ্রবণীয় একটি গ্যালাকট ম্যাননান থাকে। টাটকা শাঁসে থাকে নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থ ফ্যাট, লিগনিন, সুপার ও অজৈব পদার্থ। একটি সাধারণ কচি ডাবে ৩০০-১০০০ মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, ১ কাপ বা ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে যেসব খাদ্য উপাদান থাকে সেগুলো হলো খাদ্যশক্তি ২৮৩ ক্যালরি, চর্বি ২.৭ গ্রাম, সোডিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২.১ গ্রাম, শর্করা ২.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ মিলিগ্রাম, আয়রণ ০.২ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১১ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।
ডাবের পানি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনই উজ্জ্বল ত্বকের জন্য উপকারী। প্রখর রোদে স্বস্তি দিতেও ডাবের পানির তুলনা নেই। দেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব হলে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন। কারণ ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতি ডাবের পানি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে। ডাবের পানি খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়।
ডাবের পানি খেলে নিমেষে বেড়ে যায় ক্যালরি। মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারী উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের ভেতরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনোভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শীতে শরীর ও ফুসফুস সুস্থ রাখবে যেসব সুপারফুড
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চাঁদ নিয়ে রহস্যের জট খুললো, জানা গেল ২৮৩ কোটি বছর আগের ঘটনার ব্যাখ্যা
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বদলে যাচ্ছে রসায়নের শত বছরের পুরনো সূত্র
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাতাস থেকে সরাসরি পুষ্টি পেতে পারে মানবদেহ : গবেষণা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের যে গ্রামের জনসংখ্যা চারজন!
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ডাবের পানি খেলে শরীরে কি হয়? ডাবের পানির উপকারিতা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ধানের গোলা এখন কেবলই স্মৃতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওজন আর রক্তচাপ কমায় বিটের রস! বাড়ায় স্মৃতিশক্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)