কোয়াসার : মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু
, ২৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২০ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
আভিধানিক সংজ্ঞা অনুসারে, কোয়াসার একটি ভারী ও অত্যন্ত দূরবর্তী মহাকাশীয় বস্তু যা প্রচুর পরিমাণে শক্তি বিকিরণ করে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে একটি কোয়াসার দেখতে নক্ষত্রের মতো হলেও এটি থেকে বিপুল পরিমাণে রেডিও তরঙ্গ বিকিরিত হয়।
একারণে প্রথমদিকে কোয়াসি-স্টেলার রেডিও সোর্স নামকরণ করা হয়েছিল যা এখন সংক্ষেপে কোয়াসার নামে পরিচিত। কোয়াসারগুলো অনেক উজ্জ্বল হয়। কখনও কখনও এতই উজ্জ্বল হয়, এরা যে গ্যালাক্সিতে অবস্থান করে সে গ্যালাক্সিকেই এদের উজ্জ্বলতার কারণে দেখা যায় না। এই শক্তিশালী বস্তুগুলো আবিষ্কারের পর থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করে আসছে।
কোয়াসারের আবিষ্কার:
রেডিও ও অপটিক্যাল জ্যোতিবিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগের সবচেয়ে সফল ফলাফল ছিল কোয়াসারের আবিষ্কার। ১৯৩২ সালে একজন প্রকৌশলী সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা রেডিও তরঙ্গের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলো। ১৯৫০-এর সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুজ্জ্বল মহাকাশীয় বস্তুগুলো থেকে রহস্যজনক রেডিও তরঙ্গ নির্গমনের কারণ খুঁজছিলেন।
আগে কোয়াসারকে শুধুমাত্র রেডিও তরঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হত (যার সাথে সম্পৃক্ত কোন দৃশ্যমান বস্তু পাওয়া যেত না) ১৯৬৩ সালে, দৃশ্যমান বস্তু হিসেবে ৩ঈ ৪৮ নামক রেডিও তরঙ্গের উৎস শনাক্ত করা হয়েছিল। রহস্যময় এই বস্তুর নাম দেওয়া হয় কোয়াসার।
কোয়াসারের গঠন এবং বৈশিষ্ট্য:
বিজ্ঞানীদের মতে এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রায় গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব হচ্ছে অধিকাংশ বড় বড় ছায়াপথগুলোতে একটি করে সুপারম্যাসিভ কালোগহ্বর থাকে। তত্ত্বীয়ভাবে, কোয়াসার এবং অ্যাক্টিভ গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াইতে (অএঘ) কালোগহ্বরের চারপাশে একটি গ্যাসীয় অপপৎবঃরড়হ ডিস্ক ঘিরে থাকে। আশেপাশের গ্যাস যখন কালোগহ্বরে পড়তে থাকে, শক্তি তখন তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ আকারে বিকিরিত হয়। যা আমরা সমগ্র তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালী জুড়েই পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কোয়াসারের বৈশিষ্ট্যসমূহ অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন কোয়াসার সম্পৃক্ত কালোগহ্বরের ভর, কোয়াসারে গ্যাসের বৃদ্ধির হার, পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে অ্যাক্রিশন ডিস্কের অবস্থান, জেটের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি এবং ছায়াপথগুলোর মধ্যে গ্যাস-ধুলিকণার অস্পষ্টতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।
শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণের কারণে কোয়াসার এবং সাধারন নক্ষত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে পার্থক্য করা যায়। সাধারনত মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্র কোয়াসারের মতো শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণ করে না। কোয়াসার সক্রিয় ছায়াপথের মতো একই রকমের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য প্রদর্শণ করে। এগুলো তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালীর অনেক অংশে থাকে, যেমন বেতার, অবলোহিত, দৃশ্যমান, অতিবেগুনী, এক্স-রে এমনকি গামা রশ্মিতেও দৃশ্যমান।
কোয়াসারের সকল ধরনের বর্ণালী পর্যবেক্ষণ/বিশ্লেষণ করে ০.০৬ থেকে সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ ৬.৪ পর্যন্ত রেড শিফট পাওয়া গিয়েছে। কোয়াসারের ক্ষেত্রে রেড শিফটের মান ৩ থেকে বেশি হলে এই তথ্য প্রকাশ করে যে, কোয়াসারগুলো উচ্চ গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে এবং খুবই দূরে অবস্থিত।
কোয়াসারের উপপ্রকার:
কোয়াসারের বিভিন্ন উপপ্রকারগুলো হলো-
বেতার সক্রিয় কোয়াসার (জধফরড়-ষড়ঁফ ছঁধংধৎং): এসকল কোয়াসারে শক্তিশালী জেট পাওয়া যায় যা রেডিও-তরঙ্গের শক্তিশালী উৎস। এদের পরিমান সকল কোয়াসারের প্রায় ১০%।
বেতার নিষ্ক্রিয় কোয়াসার (জধফরড়-য়ঁরবঃ ছঁধংধৎং): এসকল কোয়াসারে শক্তিশালী রেডিও জেট নেই অর্থাৎ এরা তুলনামূলকভাবে দূর্বল রেডিও জেট নির্গমন করে। অধিকাংশ কোয়াসারই (প্রায় ৯০%) হলো বেতার নিষ্ক্রিয় কোয়াসার।
প্রশস্ত শোষণ-রেখা কোয়াসার (ইৎড়ধফ ধনংড়ৎঢ়ঃরড়হ-ষরহব ছঁধংধৎং): এসকল কোয়াসারের ব্লু শিফট হওয়া বর্ণালীতে প্রশস্ত শোষণ-রেখা দেখা যায়। প্রায় ১০% কোয়াসারে প্রশস্ত শোষণ রেখাগুলো দৃশ্যমান হয়। প্রশস্ত শোষণ-রেখা সাধারণত বেতার নিষ্ক্রিয় কোয়াসারে দেখা যায়।
ঞুঢ়ব ওও কোয়াসার: এই ধরণের কোয়াসারে ঘন গ্যাস এবং ধুলিকণা, কোয়াসারের অ্যাক্রিশন ডিস্ক ও প্রশস্ত বিকিরণ-রেখাকে অস্পষ্ট করে তুলে।
রেডিস কোয়াসার (জবফ ছঁধংধৎং): এ কোয়াসারগুলো সাধারন কোয়াসারের তুলনায় রেডিস হয়ে থাকে। এগুলো সম্ভবত কোয়াসারের হোস্ট গ্যালাক্সির মধ্যে মাঝারি মাত্রার ধূলিকণা বিলুপ্তির ফলাফল। অবলোহিত ব্যান্ডের তথ্য অনুসারে, লোহিত কোয়াসারগুলো মোট কোয়াসারের উল্লেখযোগ্য অংশ।
অপটিক্যালি ভায়োলেন্ট ভেরিয়েবল কোয়াসার (ঙঢ়ঃরপধষষু ঠরড়ষবহঃ ঠধৎরধনষব (ঙঠঠ) ছঁধংধৎং): বেতার সক্রিয় কোয়াসার যার জেটটি পর্যবেক্ষকের দিকে থাকে, নির্গমন জেটের আপেক্ষিক দিকের কারণে এধরণের কোয়াসারের উজ্জ্বলতায় তীব্র ও দ্রুত পরিবর্তনশীলতা দেখা যায়।
দুর্বল নির্গমন লাইন কোয়াসার (ডবধশ বসরংংরড়হ ষরহব ছঁধংধৎং): অতিবেগুনী বা দৃশ্যমান বর্ণালীতে এ কোয়াসারগুলো থেকে অস্বাভাবিকভাবে মৃদু নির্গমন রেখা পাওয়া যায়।
কোয়াসারের গুরুত্ব:
একটি কোয়াসার অত্যন্ত দূরবর্তী, উজ্জ্বল এবং দেখতে তুলনামূলক ছোট প্রতীয়মান হয়। তাই আকাশে একটি স্থানাঙ্ক সিস্টেম (ঈড়-ড়ৎফরহধঃব ঝুংঃবস) স্থাপনে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বিন্দু হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, কোয়াসার ইন্টারন্যাশনাল সেলেস্টিয়াল রেফারেন্স সিস্টেমের (আইসিআরএস) অন্যতম মৌলিক ভিত্তি। বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী, প্রায় ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোয়াসার চিহ্নিত করেছিলেন। ঔ১৩৪২+০৯২৮ নামের কোয়াসারটি বিগ-ব্যাংয়ের মাত্র ৬৯০ মিলিয়ন বছর পর আবির্ভূত হয়েছিল।
এই প্রাচীন কোয়াসারগুলো সময়ের সাথে ছায়াপথের বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। আবার, কোয়াসার থেকে শক্তি পৃথিবীর বায়ুম-লে পৌঁছাতে বিলিয়ন বছর লাগে। এই কারণে এদের জানার মাধ্যমে মহাবিশ্বের শুরুর দিকের তথ্য পেতে পারে জ্যোতিবিজ্ঞানীরা।
আটক ছাত্রদের মুক্তির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম-ইনানের ফেসবুক পেজ বন্ধ করলো মেটা
আন্দোলনে গুলি না চালানোর রিটের শুনানি হতে পারে আজ রোববার
বাংলাদেশ ভ্রমনে সতর্কবার্তা যুক্তরাষ্ট্রের
আমরা শান্তির স্বপক্ষে, সন্ত্রাসীর বিপক্ষে : বিএসএমএমইউ উপাচার্য
খুলনায় পুলিশ হত্যায় ১২০০ জনের নামে মামলা
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের যে গ্রামের জনসংখ্যা চারজন!
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ডাবের পানি খেলে শরীরে কি হয়? ডাবের পানির উপকারিতা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ধানের গোলা এখন কেবলই স্মৃতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওজন আর রক্তচাপ কমায় বিটের রস! বাড়ায় স্মৃতিশক্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালের সন্ধান মিললো প্রশান্ত মহাসাগরে
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্ট্রবেরি খেলে শরীরে যা ঘটে
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে ৫ ভিটামিনের অভাবে অকালে চুল পেকে যায়
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার নৌকার সন্ধান দেবে ৩ হাজার বছরের পুরোনো মানচিত্র!
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)