ঐতিহাসিক সুমহান ১৫ই রজবুল হারাম শরীফ প্রসঙ্গ: সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তনের ইতিহাস ও তাৎপর্য
, ১৫ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হিজরী দ্বিতীয় সনের ১৫ই রজবুল হারাম শরীফ সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র হিজরত মুবারক করার পর ১৬ বা ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানকালীন পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনাদের উভয়কে সামনে রেখে নামায আদায় করতেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত মুবারক করার পর পবিত্র কা’বা শরীফ একদিকে ও পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ অন্যদিকে পড়ে যায়; তাই তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। তবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চাচ্ছিলেন যেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ক্বিবলাই আমাদের ক্বিবলা হয়। অবশেষে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে সম্মানিত ক্বিবলা উনাকে পরিবর্তন করে দিলেন-
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاء فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوِهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ.
অর্থ: “আমি লক্ষ্য করেছি আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোর বিষয়টি। অতএব, আমি আপনার আকাঙ্খিত সম্মানিত ক্বিবলা উনার প্রতিই আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা আপনি পছন্দ করেন। অতএব, আপনি পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার দিকে মুখ মুবারক ফিরিয়ে নামায আদায় করুন। আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন, উহার দিকে মুখ ফিরান এবং যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারাও নিশ্চিতভাবে জানে যে, ইহা তাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে প্রেরিত হক্ব বা সত্য। তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবহিত।” (পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
ক্বিবলা পরিবর্তনের নির্দেশনা মুবারক ও নামায আদায়:
‘মাওয়াহিব ও সাবীলুর রাশাদ’ নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত বারা ইবনে মারূর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণের পর উনার বাড়িতে তাশরীফ মুবারক নেন। হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্রের নাম ছিলো হযরত বাশার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার মাতা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাবার প্রস্তুত করতে শুরু করলেন। ইত্যবসরে পবিত্র যুহর নামায উনার সময় হলো। উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে তিনি পবিত্র যুহর উনার নামায পড়া শুরু করলেন। দু’রাকায়াত নামায শেষ হতেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ওহী মুবারক নিয়ে এলেন যে, এখন বাইতুল্লাহ শরীফ পবিত্র ক্বিবলা। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ জামায়াতসহ পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দিকে চেহারা বা মুখ মুবারক ফিরিয়ে অবশিষ্ট দু’রাকায়াত নামায আদায় করলেন। তখন থেকে বনী সালমার ওই মসজিদকে যুলক্বিবলাতাইন বা দু’ক্বিবলা বিশিষ্ট বলা হয়।
মূলত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই মসজিদে পবিত্র যুহর নামায উনার দু’রাকায়াত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার দিকে এবং অবশিষ্ট দু’রাকায়াত পবিত্র মসজিদুল হারাম শরীফ উনার দিকে মুখ করে আদায় করেছেন। ওই নামাযে হযরত ইবাদ বিন বাশার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শরীক ছিলেন। পবিত্র নামায শেষে তিনি গৃহে গমনের পর একস্থানে দেখতে পেলেন যে, বনী হারিছার লোকেরা পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার দিকে মুখ করে আছর উনার নামায আদায় করছেন।
তিনি তখন চিৎকার করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি পবিত্র যুহর উনার নামায আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র কা’বা শরীফমুখী হয়ে আদায় করেছি। উনার কথা শুনে সমস্ত নামাযী উনারা তৎক্ষনাৎ পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনার দিকে পবিত্র চেহারা বা মুখ মুবারক ফিরালেন।
হযরত বারা ইবনে আজিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে ‘পবিত্র ছহীহ বুখারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- পরিবর্তিত ক্বিবলা উনার প্রথম নামায ছিলো আছরের নামায। অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে পবিত্র যুহর উনার নামায। (তাফসীরে মাযহারী শরীফ)
ছড়িয়ে পড়লো নির্দেশনা মুবারক:
কু’বা এলাকায় মুসলমানদের নিকট ক্বিবলা পরিবর্তনের সংবাদ পৌঁছেছিলো পরদিন পবিত্র ফজর উনার সময়। ‘পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ’ উনাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র কু’বাবাসী উনারা পবিত্র ফজর নামায আদায় করছিলেন, এমন সময় একজন ব্যক্তি এসে জানালেন যে, পবিত্র ক্বিবলা পরিবর্তন হয়েছে। এখন থেকে ক্বিবলা পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ। একথা শুনে সমস্ত নামাযী উনারা তৎক্ষণাৎ বাইতুল্লাহ শরীফ উনার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত রাফে বিন খাদিজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেন যে- আমরা বনী আব্দুল আসহাল গোত্রের মসজিদে নামায আদায় করছিলাম। এক ব্যক্তি এসে চিৎকার করে জানিয়ে দিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন থেকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কা’বা শরীফমুখী হয়ে নামায আদায়ের জন্য বলেছেন; সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যিনি ইমাম তিনি ক্বিবলা পরিবর্তন করলেন। আমরাও ক্বিবলা পরিবর্তন করলাম। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফখানা সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন উনার প্রারম্ভিকা। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত মুবারক করেন। আর সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন হয় পবিত্র হিজরত মুবারক উনার দ্বিতীয় বর্ষ ১৫ই রজবুল হারাম শরীফ উনার মধ্যে। এ সম্পর্কে একাধিক মত উল্লেখ রয়েছে। কাজেই বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন হয় পবিত্র হিজরত মুবারক উনার ১৬ মাস (অথবা যারা ১৭ মাস বলেন উনারা মাসের খ- অংশকে পুরো মাস ধরে নিয়েছেন) পর।
কাফের-মুশরিকদের চু-চেরা ও তার জবাব:
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার দিকে চেহারা মুবারক করে নামায আদায় করছিলেন তখন ইহুদীরা বলাবলি করছিলো যে ইনি কেমন রসূল যিনি আমাদের ধর্মের বিপরীত চলেন, কিন্তু আমাদের ক্বিবলাকে অনুসরণ করছেন। এতে ইহুদীরা চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে যাচ্ছিলো। যখন সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন হয়ে গেলো তখন পুনরায় বলতে লাগলো, ইনি কেমন রসূল যিনি একবার এক ক্বিবলা আরেকবার অন্য ক্বিবলাকে অনুসরণ করেন। নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, যখন সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন হলো তখন যারা ইহুদী ও মুনাফিক তারা চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল শুরু করলো। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন-
سَيَقُولُ السُّفَهَاء مِنَ النَّاسِ مَا وَلاَّهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُواْ عَلَيْهَا قُل لِّلّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ - وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلاَّ عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللّهُ وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ إِنَّ اللّهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: নির্বোধ লোকেরা অচিরেই বলবে যে, উনারা এযাবৎ যে ক্বিবলা অনুসরণ করছিলেন তা হতে কিসে উনাদেরকে ফিরিয়ে দিলো? (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন- পূর্ব ও পশ্চিম মহান আল্লাহ পাক উনারই। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন। এইভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যাতে তোমরা পূর্ববর্তী মানবজাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হতে পার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্য হবেন সাক্ষীস্বরূপ। আপনি এতদিন যে ক্বিবলা উনার অনুসরণ করেছেন তাকে এ উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করেছি যাতে আমি জানতে পারি কে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়? মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া ইহসান করে যাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন তারা ব্যতীত অন্যান্যদের নিকট ইহা নিশ্চয়ই কঠিন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ নন যে, তোমাদের পবিত্র ঈমানকেকে বিনষ্ট করবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-১৪২, ১৪৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন সম্মানিত ক্বিবলা উনাকে পরিবর্তন করে দিলেন তখন আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদীদের মধ্যে কিছু নির্বোধ লোক তারা এই সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তনের উপর আপত্তি আরোপ করে। নাউযুবিল্লাহ!
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
سَيَقُولُ السُّفَهَاء مِنَ النَّاسِ مَا وَلاَّهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُواْ عَلَيْهَا قُل لِّلّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ.
অর্থ: ‘নির্বোধ লোকেরা অচিরেই বলবে যে, উনারা এ যাবৎ যে ক্বিবলা অনুসরণ করছিলেন তা হতে কিসে উনাদেরকে ফিরিয়ে দিলো? (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন- পূর্ব ও পশ্চিম মহান আল্লাহ পাক উনারই, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন।’
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল করে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ঘোষণা মুবারক করে দেন- পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক তিনিই মহান আল্লাহ পাক যিনি এই সম্মানিত কিবলা উনাকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কাজেই আহলে কিতাব তথা ইহুদী-নাছারাদের উচিত ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পালনার্থে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনে সম্মানিত ক্বিবলা উনাকে গ্রহণ করা।
মূলত এখানে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শারে’ শরীয়ত প্রণেতা- তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার পর থেকে পবিত্র বিছাল শরীফ মুবারক পর্যন্ত যা কিছু করেছেন তা উম্মতের জন্য অনুসরণ অনুকরণ করা ফরয। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দ্বারা ছাবিত করেছেন।
মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা:
এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
অর্থ: এইভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যাতে তোমরা পূর্ববর্তী মানবজাতির জন্য সাক্ষী স্বরূপ হতে পার এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্য হবেন সাক্ষীস্বরূপ।
অর্থাৎ যেভাবে আমি পবিত্র নামায উনার জন্য উত্তম ক্বিবলা নির্ধারণ করেছি এবং তোমাদেরকে তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীল আলাইহিস সালাম উনার ক্বিবলা উনার দিকে তোমাদেরকে চালিত করেছি, যিনি ছিলেন ‘আবুল আম্বিয়া’ তথা তৎপরবর্তী হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পিতা, যে সম্মানিত ক্বিবলা উনার দিকে মুখ করে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার পূর্ববর্তী হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনারা নামায আদায় করতেন, ঠিক সেভাবেই আমি আপনাদেরকে সর্বোত্তম জাতি হিসেবে নির্ধারণ করেছি এবং সকল মাখলুকাতের মধ্যে সম্মান-ইজ্জতময় মর্যাদার অধিকারী করেছি এবং আপনাদের করেছি সৃষ্টির মূল, নতুন পুরান সকলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা সম্মানের অধিকারী করেছি। যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের উপর সাক্ষী হতে পারো, যখন তারা একত্রিত হবে তোমাদের নিকট এবং তারা তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্বের ইঙ্গিত করতে পারে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً.
অর্থ: আপনি এতদিন যে ক্বিবলা উনার অনুসরণ করেছেন তাকে এ উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করেছি যাতে আমি জানতে পারি কে আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়? মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া ইহসান করে যাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন তারা ব্যতীত অন্যান্যদের নিকট ইহা নিশ্চয়ই কঠিন।
অর্থাৎ অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, প্রথম ক্বিবলা শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক ছিলো। তথা প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ক্বিবলা নির্ধারণ করে পরে পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ক্বিবলারূপে নির্ধারণ করা শুধু এই জন্যই ছিলো যে, এর দ্বারা হক্ব সত্য অনুসরণকারী উনাদের পরিচয় পাওয়া যায়। এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিচয় লাভ করা যায়। আর সম্মানিত ক্বিবলা উনার কারণে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে অনেকে ফিরে যায়। মূলত, এটা বাস্তবিকই কঠিন কাজ, কিন্তু যাঁদের অন্তরে ঈমানের নূর ছিলো অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছিলেন মূলত হক্ব বা ছদিক্বীন তাই উনারা মহান আল্লাহ তিনি যা আদেশ নির্দেশ মুবারক করেন এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে আদেশ-নির্দেশ মুবারক করেন তাই পালন করেন এবং উনার যে নির্দেশ মুবারক উঠিয়ে নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তা উঠিয়ে নেন, বরং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতিটি কাজ- খুবই সুন্দর ও নিপুণতায় পরিপূর্ণ। আর মু’মিন তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জন্য এই নির্দেশ মুবারক পালন করা মোটেও কঠিন নয়। আর যাদের অন্তর রোগাক্রান্ত তাদের কাছে কোনো নতুন নির্দেশ মুবারক এলেই তা তাদের নতুন ব্যথা শুরু হয়। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ.
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ নন যে, তোমাদের পবিত্র ঈমানকে বিনষ্ট করবেন।’
অর্থাৎ তোমরা যে বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ উনাকে ক্বিবলা করে যেসব নামায-কালাম আদায় করছো তার নেকী বা ছাওয়াব থেকে তোমাদেরকে বঞ্চিত করবো না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন যে, উনারা এর দ্বারা উচ্চমানের ঈমানদার হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছেন। উনাদেরকে দুই ক্বিবলা উনার দিকে মুখ করে নামায আদায় করার ছাওয়াব দেয়া হবে। এর ভাবার্থ এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার সাথে আপনাদের সম্মানিত ক্বিবলা উনার দিকে ঘুরে যাওয়াকে বিনষ্ট করবেন না।
-শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)