এনআইডি’র জন্য মুখচ্ছবি বাধ্যতামূলক না করার দাবী মহিলা আনজুমানের
, ০১ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২১ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) তাজা খবর
মন্ত্রীসভায় খসড়া অনুমোদন পাওয়া জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩-এ এনআইডি’র জন্য মুখচ্ছবি বাধ্যতামূলক না করার দাবী জানিয়েছেন রাজারবাগ দরবার শরীফের মহিলা আনজুমান।
গতকাল ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার, ১৯ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে তারা এ দাবী জানান। তারা বলেন, এনআইডি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করার জন্য ফিঙ্গার ও আইরিস-ই যথেষ্ট। মুখচ্ছবিকে পুঁজি করে বরং অপরাধ ও দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকে। এজন্য তারা এনআইডিসহ রাষ্ট্রের সকল স্থানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহারের দাবী জানান। গত ১২ জুন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩-এর খসড়ার অনুমোদন হওয়াকে কেন্দ্র করে আজ ডিআরইউতে মহিলা আনজুমান এ দাবী জানায়।
সংবাদ সম্মেলনের মহিলা আনজুমানের মুখপাত্র বলেন-
১. পর্দানশীন নারীদের রাষ্ট্রীয় নিবন্ধনে আসতে চাওয়া জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিবাচক:
শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেয়ায় এনআইডি বঞ্চিত হয়ে আছেন অসংখ্য পর্দানশীন নারী, যারা সরকারের নিবন্ধনের আওতার সম্পূর্ণ বাইরে। অথচ সরকারী ডাটাবেজে সকল নাগরিকের নিবন্ধন থাকা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু পর্দানশীন নারীরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সরকারী নিবন্ধনের আওতায় আসতে ইচ্ছুক, তাই বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তাই এক্ষেত্রে ছবি বাধ্যতামূলক না করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডাটা নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে তাদের সাদরে জাতীয় নিবন্ধনের অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া।
২. পরিচয় যাচাইয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট অনেক বেশি জননিরাপত্তা বান্ধব ও দূর্নীতি রোধক:
বর্তমানে এনআইডিতে ব্যক্তির একটি মুখচ্ছবি থাকে, যার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমত অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছবির সাথে বাস্তব চেহারার অনেক অমিল থাকে। ফলে ছবি দেখে যাচাইয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। দ্বিতীয়ত দুই ব্যক্তির চেহারার মিলকে কাজে লাগিয়ে একজনের এনআইডি অন্যজন ব্যবহার করে বহুবিধ অপরাধ করে। আবার মুখচ্ছবি দেখে যাচাই পদ্ধতিকে পুঁজি করে ক্ষণস্থায়ী, গলাকাটা ও ভুয়া এনআইডি ব্যবহারও বাড়ছে। এসব কারণে বর্তমানে শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করেই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এনআইডি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা হচ্ছে, যেখানে মুখচ্ছবির কোন ব্যবহার নেই। যেমন- দ্বৈত ভোটার যাচাই, রোহিঙ্গা যাচাই, ইভিএম-এ ভোট দেয়া, সিমকার্ড নিবন্ধন ইত্যাদি। অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্টের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য। এ কারণে শুধু জাতীয় পরিচয় সনাক্তকরণেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ব্যবহার যথেষ্ট নয়, বরং রাষ্ট্রের সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের বহুল ব্যবহার চালু করা এখন সময়ের দাবী। বিশেষ করে, একজনের হাজিরা অন্যজন দিয়ে দেয়া, চেহারা মিল থাকায় পরীক্ষার হলে প্রক্সি দেয়া, একজনের ত্রাণ অন্যজন চুরি করা, স্কুলে বাচ্চাদের দুপুরের খাবার আরেকজন খেয়ে নেয়া, আসল ডাক্তারের সাথে চেহারা মিলকে কাজে লাগিয়ে তার এমডিসি নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া ডাক্তারি করার মত বহুবিধ দুর্নীতি ও অপরাধ বর্তমানে অহরহ হচ্ছে, যা রুখতে একমাত্র সমাধান হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম সনাক্ত করা। যেহেতু পর্দানশীন নারীরা সঠিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতি-ই বেছে নিয়েছেন, তাই অযথা মুখচ্ছবিকে বাধ্যতামূলক করে তাদেরকে এনআইডি বঞ্চিত করে রাখার কোন যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।
৩. শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেয়ায় নারীদের এনআইডি থেকে বঞ্চিত করে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন:
বর্তমানে রাষ্ট্রের ২২টি মৌলিক ও নাগরিক অধিকার পেতে এনআইডির প্রয়োজন। কিন্তু শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেয়ায় লক্ষ লক্ষ নারীকে এনআইডি থেকে বঞ্চিত করে তাদের ২২টি মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
৪. ঠিক কত সংখ্যক নারী এনআইডি বঞ্চিত:
ঠিক কত সংখ্যক নারী এনআইডি থেকে বঞ্চিত তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। তবে এনআইডি প্রাপ্তির আগের ধাপ হচ্ছে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়া। ২০০৮ সালে ভোটার তালিকায় পুরুষের থেকে নারীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ বেশি ছিলো। কিন্তু ২০২৩ এ এসে নারীর সংখ্যা পুরুষের থেকে ১৭ লক্ষ কমে গেছে। অথচ বর্তমান জনশুমারিতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। ইসি নিজেও স্বীকার করেছে- ধর্মীয় কারণে ছবি তুলতে না চাওয়ায় ভোটার তালিকায় নারীর অন্তর্ভূক্তি কম। ফলে তারা এনআইডিও পাচ্ছেন না। নারী-পুরুষের বিশাল এ পার্থক্য দেশে ভয়াবহ ‘জেন্ডার গ্যাপ বা লিঙ্গ বৈষম্য’ বিদ্যমান নির্দেশ করে, যা নারীর অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের বাধা।
৫. বিপুল সংখ্যক নারীকে এনআইডি’র আওতায় না আনতে পারার ব্যর্থতার দায় ইলেকশন কমিশনের:
বিপুল সংখ্যক নারীকে এনআইডি’র আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ ইসির। বিশেষ করে ‘পর্দানশীন নারীদের সমস্যা হচ্ছে’ এ কথা জানার পরও বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগী হয়নি ইসি, বরং প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করে গেছে। মূলতঃ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পর্দানশীন নারীদের উপেক্ষা করার কোনই সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আইনসমূহে কখনই পর্দানশীন নারীদের উপেক্ষা করা হয়নি, বরং সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। যেমন- গ্রাম আদালত আইন, ভূমি রেজিস্ট্রেশন বিধিমালা, ফৌজদারি কার্যবিধি, মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন, বিধবা ভাতা, অবসর ভাতা গ্রহণ, বয়স্ক ভাতা গ্রহণ ইত্যাদিতে পর্দানশীন নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এনআইডি’র ক্ষেত্রে পর্দানশীন নারীদের কেন উপেক্ষা করা হলো, তা সত্যিই আশ্চর্যজনক।! তাছাড়া ছবিবিহীন এনআইডি অনেক দেশেই স্বীকৃত। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আমিশ ও মেনোনাইট উপদলটি প্রাণীর ছবি তোলাকে ধর্মবিরোধী বলে বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাস থেকে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছিলো ছবিবিহীন এনআইডি কার্ডের জন্য। ২০১৯ সালে ভার্জিনিয়া সরকার তাদের দাবীপূরণ করে ছবিবিহীন এনআইডির সুযোগ করে দেয়। পাকিস্তানও নারীদের প্রাইভেসির কারণে ২০০৭ সালে এনআইডি কার্ডে নারীদের ছবি দেয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়। কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়া রাজ্যেও ছবিবিহীন এনআইডি কার্ডের প্রচলন আছে। সুতরাং এতকিছুর পরও পর্দানশীন নারীদের এনআইডি থেকে বঞ্চিত করে রাখার আর কোন অজুহাত থাকতে পারে না। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাহেব যেখানে নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন, এনআইডিতে কোটি কোটি ভুল রয়েছে। সেখানে প্রাইভেসি ও ধর্মীয় কারণে একটি মাত্র ডাটা (ছবি) বাধ্যতামূলক না থাকলে কি অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে? - এই প্রশ্ন মহিলা আনজুমানের।
৬. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আশাবাদী পর্দানশীন নারীরা:
যেহেতু নতুন পরিচয় নিবন্ধন আইনে এনআইডির দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যাচ্ছে, তাই মহিলা আনজুমান আশাবাদী যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্দানশীন নারীদের বিষয়টি ি বশেষ গুরুত্বের সাথে দেখবে এবং তাদের ধর্মীয় অধিকার অক্ষুন্ন রেখেই এনআইডি সুবিধা প্রদান করবে।
এ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে মহিলা আনজুমান ৩টি দাবী করেছেন-
এক. প্রস্তাবিত ‘পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩’-এ যেন এনআইডির জন্য মুখচ্ছবি বাধ্যতামূলক করা না হয়।
দুই. শুধু এনআইডি নয়, রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে যেমন অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পরীক্ষার হলে অপরাধ, দুর্নীতি ও প্রক্সি রুখতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সনাক্তকরণ/হাজিরা চালু করা হোক।
তিন. প্রয়োজনে কোন নারীর চেহারা দেখাসহ কোন সহযোগিতা যদি প্রয়োজন হয়, তবে পৃথক স্থানে নারী দিয়েই নারীর সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হোক।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
গাজার মত পশ্চিম তীরের মুজাহিদ বাহিনীও দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়ছেন
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
লেবাননে এ পর্যন্ত ২২৬ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
“গরীবের পেটে লাত্থি মারার আইন-কানুন বন্ধ করুন”
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক শক্তিশালী অভিযান পরিচালনা করেছেন মুজাহিদ বাহিনী
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গাজায় শহীদের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘বাজারেই দর বেশি, কষ্ট করে গুদামে নেব কেন’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘বাজারেই দর বেশি, কষ্ট করে গুদামে নেব কেন’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাজারে কোন কিছুর দামেই নেই স্বস্তি
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অটোরিকশা বন্ধে বেকার হবে ২৫ লক্ষ মানুষ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বরেন্দ্র অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ -্‘এই খাতে জড়িত কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের কি হবে?’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুজাহিদ বাহিনী যৌথভাবে দখলদারদের একাধিক স্থানে মর্টার শেলিং করেছে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)