আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১৩)
, ২৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ওহাবী-সালাফীদের নফসানিয়াত রক্ষায়
চুরি করার উজ্জল দৃষ্টান্ত
ওহাবী সালাফীরা চুরি ও প্রতারণা করতে করতে এতই নিচে নেমেছে যেটা বলার ভাষা নেই। তারাবীহর নামাযকে তারা কোনভাবেই ২০ রাকায়াত মানতে পারে না। কিন্তু তারা না চাইলে কি হবে ২০ রাকায়াততো ছহীহ সনদে প্রমাণিত। সালাফীদের যেহেতু একটা মুখস্ত অভ্যাস শিখিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মতের খিলাফ হলেই সেটা জাল এবং সেই সনদের সবাই মিথ্যাবাদী হয়ে যায়। নাঊযুবিল্লাহ।
তারাবীহর নামাযকে অস্বীকার করতে গিয়ে এমনই একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সালাফীরা। কিন্তু ভুল জায়গায় হাত পড়ে গেছে, স্বয়ং বুখারী শরীফ উনার প্রথম হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই হস্তক্ষেপ।
মুছান্নাফে ইবনে আবি শায়বা উনার একটি হাদীছ শরীফ যেখানে ২০ রাকায়াত তারাবীহর পক্ষে মুরসাল সনদ বর্ণিত আছে।
এই হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী হচ্ছেন-
يَـحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْاَنْصَارِيُّ
‘হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি’।
যাকে সালাফীদের তাওহীদ পাবলিকেশন্স হতে প্রকাশিত বুখারী শরীফ উনার টীকায়- এক সালাফী মতবাদের টীকাকারক ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছে এবং বলেছে উনার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, অর্থাৎ উনার কোন বর্ণনা গ্রহণ করা যাবে না। (ছহীহ বুখারী, প্রকাশনী: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৯০ হাজী আব্দুল্লাহ লেন বংশাল, ঢাকা। নবম প্রকাশ: সেপ্টেঃ, ২০১২; ২য় খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
কিন্তু বাংলায় প্রবাদ আছে চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন। সুতরাং চোর ধরা পড়ে গেলো। সেই তাওহীদ প্রকাশনীর সম্পাদনায় বুখারী শরীফ উনার ১ম খ- ২য় পৃষ্ঠা ১ নং হাদীছ শরীফ উনার সনদটি নিম্নরূপ (দাগ দেয়া অংশে রাবী উনার নাম)-
حَدَّثَنَا الْـحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَـحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْاَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِـيْ مُـحَمَّدُ بْنُ اِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيُّ، اَنَّهُ سَـمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَـمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ
বুখারী শরীফ উনার ১ম হাদীছ শরীফ “ইন্নামা আ’মালু বিন্নিয়াত” এই মশহুর হাদীছ শরীফ উনার রাবী হচ্ছেন- হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সালাফীরা তারাবীহকে অস্বীকার করতে নফসের দ্বারা প্রতারিত হয়ে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে মিথ্যাবাদী বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনি। অথচ বুখারী শরীফ উনার ১ নং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাফীদের কাছে চরম সত্যবাদীই আছেন। যেই তিনি অন্য কিতাবে তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত বলে ফেললেন, সাথে সাথে মিথ্যাবাদী হয়ে গেলেন। নাঊযুবিল্লাহ!
এর জবাব ওহাবী সালাফীরা কি দিবে? তারা কি তাদের মনগড়া ওহাবী- সালাফী মতবাদ টিকাতে উক্ত রাবীকে জারাহ করে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাল হাদীছ বর্ণনাকারী বানিয়ে দিবে?
ভয়ানক বিষয় হচ্ছে- এই অপবাদ দিতে গিয়ে তাওহীদ পাবলিকেশন্সের সালাফীরা হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতিও মিথ্যারোপ করেছে। কারণ হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব ‘জারাহ ওয়াত তা’দীল’ কিতাবে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেফারেন্স টেনে এনে বলেন, তিনি নাকি উক্ত রাবীকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।
অথচ কিতাব অনুসন্ধান করে দেখা যায় মিথ্যাবাদীতো বলেননি, বরং ছিক্বাহ ও হাদীছ শরীফ উনার চরম সত্যাবাদী শায়েখ বলেছেন। হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
اَبَا زُّرْعَةَ يَقُوْلُ: يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْاَنْصَارِيِّ مِنَ الثِّقَاتِ
অর্থ : “হযরত ইমাম আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য। ” (জারাহ ওয়াত তা’দীল ৯/১৪৯)
সুতরাং উছূলে হাদীছ শরীফ উনার ইল্ম ছাড়া যারা আজ বাড়াবাড়ি শুরু করেছে, হাজার বছর ধরে চলে আসা মশহুর আমলকৃত হাদীছ শরীফ উনাকে মওদ্বু বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য মূলতঃ মুসলমান উনাদের বিভ্রান্ত করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। সেই সাথে, যাতে মুসলমান উনারা আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নৈকট্য হাছিল করতে না পারে সেই চেষ্টা করা। নাঊযুবিল্লাহ।
বর্তমান যামানার ওহাবীদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অনেক বড় কঠিন আকার ধারণ করেছে। তারা কথায় কথায় ওমুক হাদীছ শরীফ জাল, মওদ্বু ইত্যাদি বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এদের সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَنَا مِنْ غَيْرِ الدَّجَّالِ اَخْوَفُ عَلَيْكُمْ مّـِنَ الدَّجَّالِ فَقِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عُلَمَاءُ السُّوْءِ.
অর্থ : “আমি আপনাদের ব্যাপারে এক সম্প্রদায়কে দাজ্জালের চেয়েও অধিক বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি এবং এই ব্যাপারে অধিক চিন্তিত রয়েছি (যাদের ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর)। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কোন সম্প্রদায়? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, উলামায়ে সূ’। ” (বিদায়াতুল হিদায়া ১ম খ- ১২৬-১২৭ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর। বর্তমান যামানা হচ্ছে এমনই এক ভয়াবহ ফিতনার যামানা। এখন ঈমান রক্ষা করা অনেক কঠিন। এই ফিতনা বেষ্টিত যামানায় সবার উচিত নিজের ঈমান-আমল হিফাযত করতে মহান মুজাদ্দিদে আযম, ইমামে আ’যম, গ¦উছুল আ’যম, সুলত্বনুন নাছীর, হাকীমুল হাদীছ, জামিউল আলক্বাব, জামিউল ইল্ম ওয়াল হিকাম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার পাক ক্বদম মুবারকে আসা। সেই সাথে মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে কুল কায়িনাতের সবার উচিত ইল্ম, আমল, ইখলাছ ও অফুরন্ত নিয়ামত হাছিল করা। একমাত্র পৃথিবীর বুকে তিনিই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বিষয়টা প্রকাশ করছেন, যাতে করে মানুষ হিদায়েত লাভ করে আল্লাহওয়ালা হতে পারে।
-মুহম্মদ নূরুদ্দীন (পলাশ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)