আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ
, ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِكْلِيْلُ الْاِسْلَامِ
অর্থ: ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মালা স্বরূপ।’ (নুজহাতুল মাজালিস)
অর্থাৎ মালা পরিধানের মাধ্যমে যেরূপ মানুষের শরীরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হয়, তদ্রুপ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতের দরুণ পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং উনার সাথে সংশ্লিষ্ট-সম্পৃক্ত বিষয়াবলীর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হয়। যার প্রমাণও অগণিত।
আমীরুল মু’মিনীন, খ¦লীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে- পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার সংকলন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাহিরীভাবে পর্দা মুবারক গ্রহণের পূর্বে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ বিভিন্ন জায়গায় লিখে রাখা হতো। কিন্তু সেটা একত্রিত করা হয়নি। আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকালে ইয়ামামার জিহাদে বহু সংখ্যক হাফিযে কুরআন উনারা শহীদ হন। বিধায় পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে দেখা দেয়। এহেন পরিস্থিতিতে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পরামর্শক্রমে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি কাতিবে ওহী হযরত যায়েদ সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরীফ সংকলন করেন। সংকলনকৃত সেই নুসখাখানা উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত থাকে।
এদিকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা অত্যধিক দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকাল অবধি সারা বিশ্বে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা প্রসারিত হয়। কোটি কোটি লোক পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অনেক বিচ্ছিন্ন নুসখা রচিত হয়। এলাকার ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন নুসখা প্রচারিত হয়। এতে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আমীরুল মু’মিনীন, খ¦লীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সংকলিত এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার সর্বাধিক বিশুদ্ধ নুসখাখানা পবিত্র মদীনা শরীফ, পবিত্র মক্কা শরীফ, বসরা কুফা এবং দামেস্কসহ পুরো ইসলামী খিলাফতে ছড়িয়ে দেন। অপরদিকে সন্দেহযুক্ত এবং বিভ্রান্তিকর অন্যান্য সমস্ত নুসখা তিনি নিশ্চিহ্ন করে দেন।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সমস্ত ইলমের মূল। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একক নুসখা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ায়, পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টির সব সম্ভাবনা বিদূরিত হয়। পুরো মুসলিম উম্মাহ এক নুসখা পাঠে অভ্যস্ত হয়। সঙ্গতকারণেই জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ ইলমের নিরাপত্তা সুদূঢ় হয়। এজন্যই আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ‘জামিউল কুরআন’ লক্বব মুবারকে ভূষিত করা হয়।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সুবিধার্থে ওয়াক্বফে রুকু সংযোজন এবং মনযিল হিসেবে বিভাজন করেন। তাছাড়া তিনি খতমে তারাবীহ উনার প্রচলন করেন। ফলশ্রুতিতে মুসলিম উম্মাহর মাঝে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, আলোচনা, পর্যালোচনা ব্যাপকতা লাভ করে। আর এভাবেই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সৌন্দর্য্য বর্ধন করেন। পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে শৃঙ্খলাবদ্ধতা আরোপ করেন। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার উল্লেখযোগ্য অবদান নৌবাহিনী গঠন। আগে কোনো নৌবাহিনী ছিল না। বিধর্মীদের যদিও কতিপয় নৌযান ছিল, কিন্তু সামরিক ব্যবস্থাপনা ছিল না। ছিল না নৌ-বহর, নৌঘাঁটি, নৌসেনা। সর্বোপরি পানিতে যুদ্ধ করার মতো কোনো নৌযানও ছিলনা। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ২৭ সালে কাতিবে ওহী হযরত মু’আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তত্ত্বাবধানে এবং বিশিষ্ট সেনাপতি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে নৌবাহিনী গঠন করেন। তখন বিশাল নৌবহর তৈরী করা হয়। সেই নৌ-বাহিনী দ্বীপদেশ সাইপ্রাস বিজয় করে। মুসলিম বাহিনীর দেখাদেখি রোম সম্রাটও নৌবাহিনী গঠন করে। কিন্তু ৩১ হিজরীতে ইসকান্দারিয়ায় মুসলিম নৌ-বাহিনীর মুকাবিলায় তাদের নৌবহর ধ্বংস হয়ে যায়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুসলিম নৌবাহিনীর মুবারক সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফতের অন্তর্বর্তী উপকুলসমূহে নৌঘাঁটি স্থাপন করেন। তিনি নৌবাহিনীকে অত্যধিক শক্তিশালী করেন। পরবর্তী সময়ে পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্প্রসারণে সেই নৌবাহিনী অত্যধিক কার্যকর ভূমিকা রাখে। মুসলিম বাহিনী কর্তৃক আমেরিকা আবিষ্কার এবং স্পেন বিজয় তারই সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে স্থাপত্য শিল্পের উন্মেষ ঘটে। ২৯ হিজরীতে তিনি পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার ব্যয়বহুল ও ব্যাপক সংস্কার করেন। পবিত্র মসজিদ উনাকে কারুকার্যম-িত করেন। নকশাকৃত পাথর দ্বারা মসজিদের দেয়াল ও খুঁটি স্থাপন করেন। তাছাড়া তিনি মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনিই সর্বপ্রথম মসজিদে মেহরাব স্থাপন করেন।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মসজিদ কেন্দ্রিক মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের যে বে-নজীর দৃষ্টান্ত অদ্যাবধি মওজুদ রয়েছে, তার মূলে কিন্তু আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনারই অবদান। আর মুসলিম স্থাপত্য শিল্পকে উপজীব্য করেই পুরো মানব সভ্যতা টিকে আছে। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তুপে মসজিদ অক্ষত থাকার বিষয়টিই তার দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৬ হিজরীতে পবিত্র হারাম শরীফ উনাতে সংস্কার করেন। তিনি পবিত্র জুমুয়ায় ছানী আযানেরও প্রচলন করেন।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ সংকলন, সংরক্ষণ করে একদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল চাবিকাঠিকে সুসংহত করেছেন। অপরদিকে নৌ-বাহিনী গঠনের মাধ্যমে তিনি সামরিক ক্ষেত্রে একটি নতুন দিক আবিষ্কার করেন। পবিত্র হারামাইন-শরীফাইন উনাদের সংস্কারের মাধ্যমে মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের উদ্ভব ঘটান। সর্বোপরি বিশ্বজুড়ে অবকাঠামোগত সৌন্দর্যের পথ তিনি উন্মুক্ত করেন। সুবহানাল্লাহ!
- ইমাদুদ্দীন আহমদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)