‘ইজারা’ ও ‘হাসিল’ নামক চাঁদাবাজি থেকে কুরবানীর হাটকে রক্ষা করতে হবে;
হাসিলের নামে বছর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা কুরবানী দাতাদের থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে; পূজা-পার্বণে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে পারে, কুরবানীর পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় কেন ভর্তুকি দিতে পারবে না?
, ০৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৯ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আপনাদের মতামত
একটা কুরবানীর পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় কত টাকা লাগে? বড়জোর লাখখানেক টাকা। সামান্য এই টাকা কি সরকার ভর্তুকি দিতে পারে না?
অথচ এই কুরবানীর হাটকে সরকার এখন ব্যবসা আর চাঁদাবাজির কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে। প্রথমত এই কুরবানীর পশুর হাটকে ইজারা দিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে। এরপর এই হাটগুলোকে নিজেদের দলীয় নেতা-কর্মীদের ভাড়া দিয়ে বিরাট চাঁদাবাজির কারখানা বানিয়ে ফেলে। তারা কুরবানীর হাটগুলোকে ‘হাসিলের’ ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
তথ্যমতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কুরবানীর পশুর হাটের ইজারা বাবদ আয় ধরেছে ১৮ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয় ধরেছে ১২ কোটি টাকা।
শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য জেলাগুলোর প্রায় সকল গরু-ছাগলের হাট থেকেই এভাবে প্রশাসন বিপুল পরিমাণ টাকা কামাই করে।
গরু-ছাগলের হাট থেকে এ টাকা কামাই করার প্রক্রিয়া শুধু প্রশাসনের আমলাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। মূলত টাকা কামাইয়ের ধান্ধার এটা মাত্র শুরু। এরপর কমিশনের ভিত্তিতে এই হাটগুলোর ইজারা দেয়া হয় বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের। তারা হাটগুলো থেকে নিজেদের ইচ্ছামত ‘হাসিল’ নামক চাঁদাবাজির মাধ্যমে গরু-ছাগল ক্রেতা-বিক্রেতাদের থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
এই ‘ইজারা’ ও ‘হাসিল’ মানেই যেহেতু কোটি কোটি টাকা কামাইয়ের ধান্ধা, তাই এটা নিয়ে প্রতিবছরই মারামারি, খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে থাকে।
তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এই ইজারা ও হাসিল প্রক্রিয়ায় সরকার লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কুরবানীর পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়পক্ষ।
হাটে কুরবানী দাতার কাছ থেকে পশুর কেনা দামের উপর যে ‘হাসিল’ আদায় করা হয়ে থাকে, তার কারণে কুরবানী দাতাকে পশুর কেনা দামের চেয়েও অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
এছাড়া হাটের ইজারাগ্রহীতারা অন্য হাটের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে জোরপূর্বক গরুর ট্রাক নিজেদের হাটে প্রবেশ করিয়ে থাকে। এতে করে গরু-ছাগল বিক্রেতারা হয়রানি ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।
সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, কুরবানীর পশুর হাট নিয়ে এই যে একপ্রকার ‘টাকাবাজি’, ‘চাঁদাবাজি’ ও কুরবানী দাতা ও পশু বিক্রেতাদের উপর জুলুম ও হয়রানি -এসব কিছুই ঘটতো না যদি সরকার নিজের কাছে হাটগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রাখতো।
একটি হাটের ব্যবস্থাপনায় সরকারের কত টাকাইবা খরচ হবে? এই সরকারই কিন্তু নিজের দলের খাতিরে, পূজা-পার্বণে কোটি কোটি টাকা খরচ করে থাকে।
বিশেষ করে দেখা যায়, পূজার সময় দেশের বিভিন্ন মাঠ-ঘাট দখল করে পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তখন কিন্তু কেউ সে জায়গাগুলো ইজারা দেয় না বা সেখানে গিয়ে কেউ হাসিল দাবি করে না। উপরন্তু সরকার তাদের পূজায় টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
৯৮ ভাগ মুসলমানদের এই দেশে মুসলমানরা বছরে একবার নিজের দ্বীনি অধিকার পবিত্র কুরবানী আদায় করতে গিয়ে কোন বরাদ্দ, ভর্তুকিতো পাচ্ছেই না বরং ইজারা আর হাসিলের নামে জুলুম-নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিপরীতে সংখ্যালঘু হয়েও ইজারা ও হাসিল ছাড়াই নির্বিঘেœ দেশের বিভিন্ন মাঠ-ঘাট ব্যবহার করে পূজা-পার্বণ পালন করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে চিন্তা করলে প্রশ্ন আসে, এ দেশের সরকারী আমলারা যে টাকা দিয়ে আরাম-আয়েশ করছে, সংখ্যালঘুদের পূজায় বরাদ্দ দিচ্ছে, সে টাকাগুলো তারা কিভাবে পেয়েছে? এগুলোতো তাদের বাপের পকেটের টাকা নয়। এগুলো এ দেশের মানুষের টাকা। এ দেশের মুসলমানদের টাকা। তাহলে মুসলমানদের এই টাকা মুসলমানদের পবিত্র কুরবানীর জন্য খরচ করতে বাধা কোথায়?
সার্বিক দিক বিচেনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পবিত্র কুরবানীর অবদান অনেক ব্যাপক। কুরবানী আসলে দেশজুড়েই অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য বৃদ্ধি পায়। আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে এই গরু, ছাগল, মহিষ কেনাবেচা এবং চামড়াসহ অন্যান্য শিল্প।
সবশেষে বলতে হয়, এই দেশের সার্বিক উন্নয়নে মুসলমানদের এত এত অবদান, সরকারও মুসলমানদের থেকে এত এত পায়, তারপরও কেন সেই মুসলমানদেরকেই বঞ্চিত হতে হচ্ছে? জুলুমের শিকার হতে হচ্ছে?
মূলত কুরবানী নির্বিঘেœ করতে পারা,
কুরবানীতে সরকারী বরাদ্দ পাওয়া,
কুরবানীর হাট ব্যবস্থাপনায় ভর্তুকি পাওয়া
-এগুলোতো মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকার।
তাই সরকারের উচিত- হাসিল ও ইজারা প্রথা বাদ দিয়ে কুরবানীর পশুর হাটগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দ করে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করা। এবং হাসিল নামক জুলুম ও হয়রানি থেকে কুরবানী দাতাদের রক্ষা করে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা।
-আবুল কালাম আর রাযী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
এ সকল মুখোশধারীদের আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ স্টাইলের শাসকগোষ্ঠী দিয়ে উন্নয়ন নয়, লুটপাটই হবে
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)