সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩৯)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত জজবার দৃষ্টান্ত
, ২৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শায়িরু রসূলিল্লাহ, কাতিবে ওহী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম-পুঙ্খানুপুঙ্খ আনুগত্যে কত বেশি তৎপর ছিলেন সে প্রসঙ্গে কিতাবে লিখা হয়- একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ-এ খুতবা দিচ্ছিলেন। এ সময় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদের দিকেই যাচ্ছিলেন। তিনি যখন মসজিদের রাস্তায় তখন তিনি শুনতে পেলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করছেন, ‘আপনারা নিজ নিজ স্থানে বসে পড়–ন। ’ এই নির্দেশ মুবারক কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চলতি রাস্তায় বসে পড়েন। খুৎবা মুবারক শেষ হলে কোন এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে বিষয়টি পেশ করেন। এটি শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সন্তুষ্ট হয়ে দুয়া মুবারক করলেন এই বলে- মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্যের ঈমানদীপ্ত জজবা মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাঝে আরো বৃদ্ধি করে দিন। সুবহানাল্লাহ!
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে, জাহিলী যুগে হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখনো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি। উনার বাড়িতে ছিল বিরাট এক মূর্তি। একবার হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বাড়ি থেকে বের হলেন সে সময় ঠিক উল্টো পথ দিয়ে সেই বাড়িতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রবেশ করলেন। তিনি হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোথায়? উনার আহলিয়া (স্ত্রী) জবাব দিলেন- এইমাত্র বাইরে গেলেন। হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্রুত মূর্তির ঘরে প্রবেশ করে সেখানে রক্ষিত একটি হাতুড়ি দিয়ে মূর্তিটি ভেঙে চুরমার করে দিলেন। এমন অতর্কিত হামলায় ভয়ে হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া কাঁদতে লাগলেন। হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফিরে এসে উনার আহলিয়ার নিকট ঘটনার আদ্যপান্ত শুনে খুবই রাগান্বিত হলেন। কিন্তু পরক্ষণেই উনার অন্তরে চেতনার উদয় হলো- যদি মূর্তির কোন ক্ষমতাই থাকতো তাহলে তো সে নিজেকেই রক্ষা করতে পারতো। এই ঈমানদীপ্ত আত্ম উপলব্ধির পর তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত মুবারকে (ক্বদম মুবারকে) গিয়ে দ্বীন ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
বর্ণিত ঘটনায় ফুটে উঠেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ-এ ভিতরের মুছল্লীদের যে যেখানে আছেন সেখানে বসে যেতে বলেন। অথচ মসজিদের বাহিরে রাস্তায় অবস্থানরত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুবারক আদেশ শুনামাত্রই সেখানেই বসে পড়েন। এছাড়া দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্নের তোয়াক্কা না করে হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ির মূর্তিও ভেঙে দিলেন। একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান আদর্শের আনুগত্যের আশায়। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি উম্মাহ’র প্রতি আদেশ করেছেন, ছবি না তুলতে, বেপর্দা না হতে, সুদ-ঘুষ না খেতে। এরপরও বর্তমান মুসলিম উম্মাহ তা কতটুকু আমল করছে? হাক্বীক্বতে একমাত্র মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঈমানদীপ্ত জজবার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যা হাছিল করা প্রত্যেক ঈমানদার নর-নারীর জন্য অবশ্যই কর্তব্য।
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ও উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বরকতময় নেক ছোহবতের উছীলায় গোটা মুসলিম উম্মাহ’র মাঝে সেই ঈমানদীপ্ত জজবা আবারো জাগরিত হোক। আমীন। (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)