হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত উপাখ্যান
, ২১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নূরে মুহাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেখানে প্রেরণ করেন। ইহুদীদের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি তাদেরকে বলেন, আমার মতে তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফরমান মুতাবিক অস্ত্র সমর্পণ কর ও অন্যান্য নির্দেশনা মেনে নাও। নতুবা... বলে হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গলা মুবারকের দিকে ইশারা করলেন অর্থাৎ বুঝিয়ে দিলেন যে, না মানলে গলায় ছুরি চালানো হবে। গলা মুবারকের দিকে ইশারা করার পর মুহূর্তেই হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ‘ইন্না লিল্লাহ’ পাঠ করে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। উনার ইশারা দ্বারা না জানি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমানত শরীফ উনার খিয়ানত হয়ে গেল।
তৎক্ষণাৎ তিনি সেখান থেকে সরাসরি ছুটে গেলেন পবিত্র মসজিদ নববী শরীফ উনার দিকে। একটা মোটা ও ভারী শিকল দিয়ে নিজেকে মসজিদে নববী শরীফ উনার একটি খুঁটি মুবারকের সাথে ভালভাবে বেঁধে অঝোর নয়নে তওবা-ইস্তিগফার রোনাজারী করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! এই সময় নূরে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খবর নিলেন। তখন কেউ একজন বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘উনি যদি আমার নিকট সরাসরি চলে আসতেন তবে আমিই তো উনার মাগফিরাতের জন্য দুয়া করতাম। ’ (সুবহানাল্লাহ)
এদিকে হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঐ অবস্থায় ৮/৯ দিন মতান্তরে ২০ দিন পর্যন্ত থাকলেন। শুধুমাত্র নামায ও জরুরতের সময় উনার সম্মানিত পরিবারের সদস্যগণ এসে বাঁধন খুলে দিতেন আবার বেঁধে দিতেন। এ সময় খানাপিনাও সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করলেন। এতে উনার শ্রবণশক্তি এমনকি দৃষ্টিশক্তিও লোপ পাওয়ার উপক্রম হলো। অবশেষে নিতান্ত দুর্বল হয়ে বেহুশ অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঠিক এ অবস্থায় উনার ঈমানদীপ্ত অনুতাপে সন্তুষ্ট হয়ে মহান আল্লাহ পাক ফযরের নামাযের কিছু পূর্বে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম উনার হুযরা শরীফ মুবারকে ছিলেন। সে সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবাস্সুমী শান (মুচকি হাসি মুবারক) মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক আপনাকে সব সময়ই আপনাকে ইতমিনান এবং খুশি মুবারক উনার মধ্যে রেকেছেন, তবে এখন কি ব্যাপার একটু খুলে বলবেন কি? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, “হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত অনুতাপে মহান আল্লাহ পাক বড়ই সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এ সম্পর্কে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। ” উম্মুল মু’মিনীন হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইযাযত নিয়ে হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা অনহু সম্পর্কে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার কথা ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। ঘোষণা শুনে দলে দলে লোকজন উনার বাঁধন খুলে দিতে জড়ো হলেন। কিন্তু হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দীপ্তকণ্ঠে বলে দিলেন, “মহান আল্লাহ পাক-এর কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রাণের আক্বা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত মুবারকে আমার বাঁধন না খুলবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এভাবেই পড়ে থাকবো। ” অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযরের নামাযের জন্য পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক আনার পর নিজ হাত মুবারকে হযরত আবূ লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাঁধন মুবারক খুলে দেন। (সুবহানাল্লাহ)
চরম-পরম ফালইয়ারহু অর্থাৎ খুশি মুবারক প্রকাশ করতে থাকা হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরজি করতে থাকলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সবকিছুই আপনার জন্য কুরবান। ধন-সম্পদের সবটুকুও আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিলাম। মেহেরবানী করে আবাদুল আবাদের জন্য আপনার কদম মুবারকে আমাকে ঠাঁই দিন। (সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী ওয়া রসূলিল্লাহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)