সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩)
, ১৫ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদা হযরত উম্মুল ওয়ারাহ মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বলেন, আমরা সাধারণত বৃহস্পতিবার রাত খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরের মাধ্যমেই অতিবাহিত করতাম। আমার যাওজুল মুকাররাম আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাহাজ্জুদ নামায শেষ করে যখন মুনাজাতের জন্য হাত মুবারক তুললেন তখন সমস্ত ঘর মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় খুশবুতে ভরে গেলো।
উল্লেখ্য যে, রাতে শেষ প্রহরে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের পর আহলিয়ার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করা খাছ সুন্নত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে মুবারক সাক্ষাত করতেন। সাধারণত সেই সময় যে সন্তান মায়ের রেহেম শরীফে তাশরীফ নেন তিনি পরহেযগার, মুত্তাক্বী, আল্লাহওয়ালা হয়ে থাকেন। আর সেদিনেই আমার পবিত্র রেহেম শরীফে হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাশরীফ আনলেন। উনি তাশরীফ মুবারক আনার পর থেকে আমি প্রতি রাতেই বিভিন্ন বুযুর্গানে দ্বীন উনাদের সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করতাম। উনারা প্রত্যেক দিন আমাকে সাবধান করে বলতেন, “মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা! আপনার পবিত্র রেহেম শরীফে এমন একজন ব্যক্তিত্ব তাশরীফ এনেছেন যিনি হবেন মহান ওলীআল্লাহ উনাদের পথ প্রদর্শক কুতুবুল মাশায়িখ। মহান আল্লাহ পাক উনার পরম বন্ধু উনাদের মধ্যকার একজন বিশেষ বন্ধু “হাবীবুল্লাহ”।
অতএব, আপনাকে সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেন আপনার দ্বারা কারও কোন ক্ষতি না হয়। কোন আদেশ-নিষেধের খিলাফ কাজ সংঘটিত না হয়। কেউ যেন আপনার আচার-আচরণ মুবারক বা কথা মুবারক থেকে মনে কষ্ট না পায়। কোন সুওয়ালকারী যেন আপনার নিকট হতে খালি হাতে ফিরে না যায়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সময়কার সকল মহিলাদের মধ্য হতে আপনাকে মনোনীত করেছেন উনার বন্ধুর মাতৃত্বের জন্য। এটা আপনার জন্য এক মহান নিয়ামতের বিষয়। এ সৌভাগ্যের সম্মান যাতে রক্ষা পায় সে ব্যাপারে সদা যতœবান থাকবেন।” এছাড়াও মাঝে মাঝে একটা গইবী আওয়াজ (অদৃশ্য আওয়াজ) আমাকে ব্যাকুল করে তুলতো। আমি যখনই মহান আল্লাহ পাক উনার খেয়াল ও ধ্যান হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হতাম তখনই হাতিব (মহান আল্লাহ পাক উনার একজন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম) আমাকে নির্দেশ মুবারক স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতেন, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধুর মাতা আপনার কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে অমনযোগী হওয়া উচিত নয়।” অতএব আমি আমার অন্তর মনকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যেতাম। একজন গৃহিনী হিসেবে আমাকে সংসারের যাবতীয় কাজও করতে হতো। যখন থেকেই হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থান করছেন তখন থেকে আমার সর্বপ্রকার অভাব, অনটন দূর হয়েছে। শত্রুরাও আমার বন্ধুত্বের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থানের ১২০ দিন পূর্ণ হলো। তখন আর একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটলো। সে রাতটি ছিলো জুমুয়াবার। পবিত্র ফজর নামাযের সময় আমার ঘর অদৃশ্য আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। এক জ্যোতির্ময় ফেরেশতা আলাইহিস সালাম হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহ মুবারক বহন করে এনে আমার নাভী মুবারক উনার মধ্য দিয়ে দেহ মুবারক উনার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলেন। আমার সমস্ত দেহে একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হলো। আমি তখন নিদ্রিত ও জাগ্রতের মাঝামাঝি একটা অবস্থার মধ্যে ছিলাম। আমি কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পরলাম। যখন চেতনা ফিরে পেলাম তখন চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম সেই অদৃশ্য আলো তখনও বিলীন হয়ে যায়নি এবং একটা মনমুগ্ধকর খুশবুতে ঘর ছেয়ে আছে।
এরপর একটা তাসবীহ উনার আওয়াজ আমার কান মুবারকে আসতে লাগলো। আমি এ আওয়াজের উৎসমূল খুঁজতে লাগলাম। কি নামের যিকির হচ্ছে তাও বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। অনেক অনুসন্ধানের পর অবশ্য বুঝতে পারলাম যে, ওই আওয়াজ আমারই রেহেম শরীফ হতে হচ্ছে। আমি বিহবল ও বিচলিত হয়ে পড়লাম। আমার যাওজুল মুকাররাম আমার পাশেই শায়িত ছিলেন। আমি উনাকে জাগ্রত করে ব্যাপারটি অনুধাবনের জন্য জানালাম। তিনি প্রথমে ব্যাপারটি মোটেই গুরুত্ব দিলেন না। কিন্তু উনাকে বার বার অনুরোধ করায় তিনি আমার রেহেম শরীফে কান মুবারক লাগিয়ে আওয়াজটি শুনার চেষ্টা করে সফলকাম হলেন এবং অতি আশ্চর্য হয়ে পড়লেন। ঠিক এই সময়ে হাতিব (সম্মানিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম) উনার মুখে অদৃশ্যবাণী উচ্চারিত হলো- “হে গিয়াসউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা আপনাদের এ মুবারক সন্তান বয়োবৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত যেন এ ঘটনা অন্য কারো কর্ণগোচর না হয়।” ঠিক এ সময়েই পবিত্র ফজর নামাযের আযান মসজিদ হতে ভেসে আসতে লাগলো। আমার যাওজুল মুকাররাম ও আমি উভয়েই পবিত্র নামায উনার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)