সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৪৫)
, ০৭ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ১০-১৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিজেই কতিপয় প্রশ্ন করে নিজেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গোজামিল দিয়ে জবাব লিখেছে: তার সঠিক জবাব নিম্নরূপ-
এক. যদি সমগ্র পৃথিবীতে একই চন্দ্র তারিখে ও একই দিনে রোযা, ঈদ, কুরবানীসহ চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত পালিত হওয়া শরীয়তের বিধান, তাহলে সব দেশের রোযাদারগণ কেন এক সাথে সাহরী ও ইফতার গ্রহণ করেন না? বা পৃথিবীর সকল মুসলিম একই সাথে নামায আদায় করেন না?
তার জবাবে সে লিখেছে প্রতিটি আমলের দুটি দিক রয়েছে এক. রোযা ফরয হওয়া। দুই. ফরয হওয়া উক্ত আমলকে কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। রোযার বিষয়টিও অনুরূপ। প্রথমত: রোযা ফরয হওয়া। দ্বিতীয়ত: রোযাকে কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। প্রথমটি ফরয হওয়া নির্ভর করে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাসের উপস্থিতির উপর। পৃথিবীর আকাশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমাদ্বান শরীফ মাস প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবীর সকল মু’মিন নারী পুরুষের উপর একই সাথে রোযা ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যায়। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হলো-
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থ: সুতরাং যে ব্যক্তি উক্ত মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৮৫)
জাওয়াব: মূলত: সে যে প্রশ্ন করেছে তার কোন সঠিক জাওয়াব সে দেয় নাই। উল্লেখিত প্রশ্নের জওয়াবটিতে সে গোজামিল দিয়ে সঠিক জাওয়াব থেকে এড়িয়ে গেছে।
প্রথমত: সে লিখেছে যে, পৃথিবীর আকাশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমাদ্বান শরীফ মাস প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবীর সকল মু’মিন নারী পুরুষের উপর একই সাথে রোযা ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যায়।
তার উক্ত জওয়াবটি মোটেও সঠিক হয় নাই। কেননা, (ক) পৃথিবীর আকাশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর সকল মু’মিন নারী পুরুষের উপর একই সাথে রোযা ফরয হয় না। বরং দূরবর্তী ও নিকটবর্তী অঞ্চলভেদে উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী পবিত্র রোযা ফরয হয়। তা আমরা ইতিপূর্বে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, ৩টি কারণে সমগ্র পৃথিবীর সকল মু’মিন নারী পুরুষের উপর একই সাথে পবিত্র রোযা শুরু করা সম্ভব নয়। (খ) তার কথা অনুযায়ী চাঁদ দেখার সাথে সাথে প্রথমে রোযা ফরয হয়। কিন্তু ফরয হওয়ার সাথে সাথেই বাস্তবায়ন হয় না। বরং বাস্তবায়ন করা ফরয হয় দেরিতে।
আমাদের জওয়াব হলো: নতুন চাঁদ দেখার পর একই সাথে রোযা ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও যদি সারাবিশ্বে একই সাথে পবিত্র রোযা বাস্তবায়ন করা ফরয না হয় তাহলে, এক অঞ্চলের রাত ও অন্য অঞ্চলের দিন মিলিয়ে ১৫ থেকে ২৪ ঘন্টা সময়ের পার্থক্য থাকায় একই দিনে সারাবিশ্বে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু তথা বাস্তবায়ন করা কখনই সম্ভব নয়। এ সাধারণ জ্ঞানতো বুঝমান একজন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রেরও রয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে মাহবুব ও মা’রুফরা একবারেই জাহিল বা গন্ডমূর্খ। এবং অনর্থক একটি ফেৎনা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
দ্বিতীয়ত: নতুন চাঁদ দেখার পর একই সাথে রোযা ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও যদি সারাবিশ্বে একই সাথে পবিত্র রোযা বাস্তবায়ন করা ফরয না হয় তাহলে, একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করে মাহবুব ও মা’রুফরা একই সাথে তো দূরের কথা, একই দিনে সারাবিশ্বে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করতে কখনোই পারবে না।
আমাদের তো মনে হচ্ছে, তাদের দাবি ও কথাগুলি পাগলের প্রলাপ। তারা কি বলছে, তা তারা নিজেরাই বুঝে না।
তৃতীয়ত: সে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা ফরয হওয়ার প্রমাণস্বরূপ দলীল পেশ করেছে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ-
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ.
অথচ উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা সারাবিশ্বে একই সাথে পবিত্র রোযা শুরু করা কোনক্রমেই প্রমাণিত হয় না। এটাও আমরা ইতিপূর্বে প্রমাণ করে দিয়েছি। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)