সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩০)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ১৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট থেকে আনুষ্ঠানিক খিলাফত লাভ:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মহান পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা কুতুবুল আকতাব, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিজের জানের চেয়ে বেশি মুহব্বত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
জান-মাল সময়, শ্রম সব কিছু দিয়েই উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেন। সুদীর্ঘ সাড়ে বিশ বছর যেভাবে উনার খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দিয়েছেন তার কোনো তুলনা নেই। তিনি জীবনের বিরাট সময় সফরে অতিবাহিত করেছেন। এই দীর্ঘ সফরের কষ্টকে তিনি কোনো কষ্টই মনে করেননি। স্বীয় পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সফরের যাবতীয় জিনিসপত্র তিনি নিজেই মাথায় বহন করেছিলেন। তিনি দৈহিক মানসিক উভয় দিক দিয়েই উনার খিদমতের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতেন। যাতে নিজের পীর ও মুর্শিদ উনার কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে সবসময় নজর রাখতেন। নিজের সুখ শান্তি আরাম ও আয়েশের কথা কখনো চিন্তাও করতেন না। সুবহানাল্লাহ!
উনার এরূপ নজীরবিহীন, তুলনাহীন খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়া দেখে কুতুবুল আকতাব, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্তর মুবারক বিগলিত হয়েছিল। তিনি অন্তরের অন্তস্থল থেকে উনার জন্য নজীরবিহীন দোয়া মুবারক করেছিলেন। তিনি উনার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে বলেন, হে উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি আমার জন্য কি নিয়ে এসেছেন? তখন আমি বলবো, হে মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার জন্য মুঈনুদ্দীন উনাকে নিয়ে এসেছি। সুবহানাল্লাহ! তিনি এ সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত দান করতঃ নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করলেন। এ সময় কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৫২ বছর। (ইকতিবাসুল আনওয়ার-১১৬, ছিয়ারুল আকতাব-১২৩, আনিসুল আরওয়াহ-৩২)
কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ও সমাদৃত কিতাব ‘আনিসুল আরওয়াহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, কুতুবুল আকতাব, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন বলেন, মুঈনুদ্দীন! আমি এখন আপনাকে যে চারটি জিনিস নিয়ামতস্বরূপ দিচ্ছি তার প্রতিটি জিনিসই আমাদের সম্মানিত তরীক্বার মহান পীর ও মুর্শিদগণ উনাদের মাধ্যমে আমার কাছে এসেছে। এগুলো সবই পবিত্র তরীক্বা উনার আমানত। যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে সিলসিলানুক্রমে আমার নিকট আমানত ছিল। আজ আমি আপনার মুবারক হাতে তা অর্পণ করলাম। আশা করছি আপনি এগুলোর হক্ব পরিপূর্ণরূপে আদায় করবেন। আপনার পরে আপনি যাকে উপযুক্ত মনে করবেন উনার নিকট এই আমানত সমর্পণ করবেন। আর এর আইন-কানুন, বিধি-বিধান, নিয়ম-কানুন ভালোভাবে বুঝিয়ে দিবেন।
মুঈনুদ্দীন! আমি এ সমস্ত জিনিস আপনার কামালিয়াত বা পরিপূর্ণতার নিদর্শনস্বরূপ হাদিয়া করলাম। আর আমার কাজ চূড়ান্তভাবে সমাধা করলাম। আপনিও এ পদ্ধতি ও নিয়ম-কানুন মেনে চলবেন। যোগ্য ও নেকপুত্ররূপী খলীফা তো তিনিই যিনি নিজের পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ-নিষেধসমূহকে তার কর্ম তালিকার মধ্যে শীর্ষে স্থান দেয়। নিজের শাজরা শরীফের মধ্যে ইহাকে লিপিবদ্ধ করে রাখে। আর এভাবে তিনি ও উনার মুরীদানদেরকে পরিচালিত করেন যাতে ক্বিয়ামতের দিন লজ্জিত হতে না হয়।
তারপর তিনি উনার সামনে রক্ষিত আছা বা লাঠি মুবারক তুলে আমাকে দিলেন। এরপর খিরকা মুবারক ও নালাইন শরীফ বা সেন্ডেল মুবারক দিলেন। সবশেষে জায়নামায (মুছল্লা) মুবারক দান করে আমাকে সরফরাজ বা গৌরবান্বিত করলেন। অতঃপর বললেন, সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। মানুষের ভীড় হতে দূরে থাকবেন। জনকোলাহল হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। কখনো কারো নিকট কিছু চাইবেন না।
তারপর তিনি আমাকে নিয়ে লোক চক্ষুর অন্তরালে গেলেন। আমার কপালে বুছা দিলেন এবং বললেন এখন আপনি সম্পূর্ণরূপে মহান আল্লাহ পাক উনার জিম্মাদারিতে চলে গেলেন।
পরে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ধ্যানে বিলীন হয়ে গেলেন। আর আমি আমার চোখের পানি মুবারক মুছতে মুছতে পবিত্র খানকা শরীফ হতে বের হলাম। (আনিসুল আরওয়াহ-৩৪, মুছালিকুছ ছালিকীন-২/২৭৫, গরীবে নেওয়াজ উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী-১০৩) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)