সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার ফাযায়িল ফযীলত মুবারক
, ২৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাওযাতুম মুকাররমাহ হিসেবে দ্বিতীয়া। উনার নাম মুবারক হযরত সাওদা বিনতু যাময়া আলাইহাস সালাম। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত যাম‘আহ ইবনে ক্বইস আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার দিক থেকে মহাসম্মানিত ৯ম পুরুষে যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ سَوْدَةُ بِنْتُ زَمْعَةَ بْنِ قَيْسِ بْنِ عَبْدِ شَمْسِ بْنِ عَبْدِ وُدّ بْنِ نَصْرِ بْنِ مَالِكِ بْنِ حِسْلِ بْنِ عَامِرِ بْنِ لُؤَيّ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন সাওদাহ আলাইহাস সালাম বিনতে যাম‘আহ ইবনে ক্বইস্ ইবনে আব্দু শাম্স ইবনে ‘আবদু উদ্দ ইবনে নছ্র ইবনে মালিক ইবনে হিস্ল ইবনে ‘আমির ইবনে লুআই আলাইহিমুস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা মাতা হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত শুমূস বিনতে ক্বইস আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনী নাজ্জার বংশের। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার দিক থেকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামা মুবারক হচ্ছেন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ سَوْدَةُ بِنْتُ الشُّمُوس بِنْت قَيْسِ بْنِ عَمْرِو بْنِ زَيْدِ بْن عَمْرو بْنِ لَبِيدِ بْنِ خِدَاشِ بْنِ عَامِرِ بْنِ غَنْمِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ النَّجَّارِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
অর্থ: “ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন সাওদাহ আলাইহাস সালাম বিনতে শুমূস বিনতে ক্বইস ইবনে ‘আমর ইবনে যায়েদ ইবনে ‘আমর ইবনে লাবীদ ইবনে খিদাশ ইবনে ‘আমির ইবনে গ¦ন্ম ইবনে ‘আদী ইবনে নাজ্জার আলাইহিমুস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা মাতা ছিলেন জাদ্দু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বলিব আলাইহিস সালাম উনার আপন মামাতো বোন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত হায়াত মুবারক উনার প্রাথমিক অবস্থা:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক হয় হযরত সাক্রান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে। হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অপর চার ভাই সকলেই ছাহাবী ছিলেন, যেমন হযরত সুহায়ল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাহল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সালীত্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হাত্বীব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম ও হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা ছিলেন “আস-সাবিকুনাল আউয়ালুন” উনাদের অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ উনারা ইসলাম উনার প্রথম যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং উনারা উভয়ে একত্রে হাবশায় হিজরত করেন। পরবর্তীতে হাবশায় অবস্থানরত মুহাজিরগণের মধ্যে একটি গুজব শোনা যায় যে, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফিরগণ ঈমান আনয়ন করেছে। এ খবর শুনে অনেকেই হাবশা থেকে পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম ও হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা উভয়ই হাবশা থেকে পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসার পর এখানে হযরত আবদুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে উনাদের এক আওলাদ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন থেকে উনারা পবিত্র মক্কা শরীফেই বসবাস করতে থাকেন। হাবশা থেকে যাঁরা মক্কা শরীফে ফিরে এসেছিলেন, যখন উনারা দেখতে পান যে, কাফিরগণ ঈমান আনয়ন করেনি, ইহা গুজব ছিল, তখন যাঁদের পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান গ্রহণ করার কোন অবস্থা ছিল না, উনারা হাবশায় পুনরায় ফিরে যান। আর যাঁদের অবস্থান গ্রহণ করার কোন না কোন অবস্থা ছিল, উনারা পবিত্র মক্কা শরীফে থেকে যান।
বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিকট এসে উনার কাঁধের উপর উনার একটি কদম মুবারক রাখলেন। এই স্বপ্ন তিনি হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট বর্ণনা করেন, যিনি স্বপ্নের একজন বিশিষ্ট তা’বীর বিশারদ ছিলেন। হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ স্বপ্নের তা’বীর এভাবে করেন, আপনার স্বপ্ন মুবারক যদি সত্য হয়, তবে আমি ইনতিকাল করব এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে আপনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। কিছুদিন পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম পূণরায় আর একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেন যে, তিনি বালিশ মুবারকে হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন, হঠাৎ আসমান থেকে চাঁদ ভেঙ্গে উনার উপর পড়েন। হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই স্বপ্ন মুবারকের তা’বীর এইরূপ করেন, আপনার স্বপ্ন মুবারক যদি সত্য হয়, অল্প দিনের মধ্যেই আমি ইনতিকাল করব এবং আমার পরে শীঘ্রই আপনার দ্বিতীয় নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। অতঃপর হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (শরহে যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ আলাইহিমুস সালাম আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের দেখা-শুনা করার আর কেউ ছিলেন না। আত্মীয়দের মধ্যে হযরত উছমান ইবনে মাজউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত খাওলা বিনতে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট এসে নিবেদন করেন যে, তিনি হযরত বিনতু যাম‘য়া আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ করবেন কিনা। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই প্রস্তাবে সম্মত হন।
হযরত খাওলা বিনতে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, অতঃপর আমি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললাম- যদি মহান আল্লাহ পাক আপনাদের উপর খায়র ও বরকত বর্ষণ করেন, তাহলে কেমন হবে? তিনি উত্তর দিলেন- তা কি? আমি বললাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, আপনার সাথে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব নিয়ে। তিনি উত্তর দিলেন- আমি ইহা পছন্দ করি, কিন্তু আপনি আমার পিতার নিকট গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করুন। আমি উনার নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি একজন অতি বৃদ্ধ লোক, লোহার আসনের উপর বসে আছেন। আমি জাহেলী যুগের নিয়মে উনাকে সম্ভাষণ করলাম- أنعم صباحا (সুপ্রভাত)। তিনি বললেন- আপনি কে? আমি বললাম- খাওলা। তিনি আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে যা ইচ্ছা করলেন বললেন। আমি বললাম- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার মেয়ের সাথে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বললেন- হাঁ, তিনি তো সম্মানিত কুফূ (অর্থাৎ উপযুক্ত সমকক্ষ), তবে আপনার সাথী (অর্থাৎ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম) তিনি কি বলেন, তা উনাকে জিজ্ঞেস করুন? আমি বললাম- আমি উনাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি ইহা পছন্দ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন- তাহলে উনাকে আপনি গিয়ে বলুন, তিনি যেন আমার বাড়ীতে মুবারক তাশরীফ আনেন। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার পিতা হযরত যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ীতে তাশরীফ মুবারক আনয়ন করেন। হযরত যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ পড়িয়ে দেন। হিজরতের তিন বছর পূর্বে পবিত্র ২৬ মাহে রমাদ্বান শরীফ এই পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার ভাই হযরত আবদুল্লাহ বিন যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা যখন বাড়ী এসে দেখেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার বোনের নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, তিনি আফসুস করে উনার নিজ মাথায় ধূলা নিক্ষেপ করেন (কারণ এ সময় পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি)। পরে যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি তখন এতই নির্বোধ ছিলাম যে, আমি আমার মাথায় এ জন্য ধুলা নিক্ষেপ করেছিলাম যে, আমার বোনের নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে হয়েছে। এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার পিতা হযরত যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-ই উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার ব্যবস্থা করেছেন। (শরহে যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব)
অতঃপর হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের লালন-পালন, বাড়ী-ঘরের তত্ত্বাবধান এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মনের প্রশান্তির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে উনাকে পবিত্র আহলু বাইত শরীফে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম এককভাবে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে আহলু বায়ত শরীফ উনাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অবশ্য হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আম্মাজান হযরত ফাতিমা বিনতু আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ও সম্মানিত আহলু বায়ত শরীফ উনাদের দেখা শোনা করতেন।
হিজরত মুবারক:
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছার পর হযরত যায়দ বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু রাফি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে প্রেরণ করেন উনার পবিত্র আহলু বায়ত শরীফ উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। অনন্তর উনারা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রাবিয়া যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাদেরকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে রওয়ানা হন এবং যথাসময় পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে উপস্থিত হন। (শরহে যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)
সংসার জীবন:
অল্প দিনের মধ্যেই সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সংসারকে আত্মস্থ করে নিলেন। নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুই বানাত সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রবিয়া যাহরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে তিনি অত্যন্ত মুহব্বত মুবারক করতেন। নবুয়ত মুবারক প্রকাশের দশম বছর পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ থেকে শুরু করে একাদশ হিজরীর পবিত্র মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ বছর পর্যন্ত সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক লাভ করেন। উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে নবুয়ত মুবারক প্রকাশের দশম বছরের পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ থেকে প্রথম হিজরীর মাহে শাওওয়াল পর্যন্ত তিনি এককভাবে পবিত্র আহলু বাইতি রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তত্ত¦াবধায়ক ছিলেন। অতঃপর ক্রমান্বয়ে অপরাপর উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের তশরীফ আনয়নের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক দায়িত্বও হ্রাস পেতে থাকে।
অন্যান্য উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সাধারণ মহিলাদের থেকে কিছুটা লম্বা ছিলেন এবং স্বাস্থ্যবতীও ছিলেন। দশম হিজরীর বিদায় হজ্জে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সফর সঙ্গী ছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য লোকদের মুযদালেফা থেকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই মীনায় চলে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মুযদালেফার রাতে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট মানুষের ভীড়ের আগে চলে যাওয়ার অনুমতি চান। স্বাস্থ্যের কারণে তিনি দ্রুত চলাফেরা করতেন না। সেজন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে অনুমতি প্রদান করেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় একজন উম্মুল মু’মিনীন প্রশ্ন করলেন- ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যারা এখানে উপস্থিত আছি, আমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কার বিছাল শরীফ হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আপনাদের মধ্যে যাঁর হাত মুবারক সবচেয়ে দীর্ঘ। উপস্থিত সকলে এই ক্বওল শরীফ উনার সরল অর্থ গ্রহণ করেন। উনারা নিজেদের হাত মুবারক মেপে দেখেন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার হাত মুবারক সবার চেয়ে দীর্ঘ। উনারা বিশ্বাস করলেন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফই হবে সবার আগে হবে। কিন্তু যখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান (হযরত যয়নব বিনতু জাহাশ আলাইহাস সালাম) সবার আগে বিছাল শরীফ লাভ করলেন, তখন বুঝা গেল, হাত মুবারক দীর্ঘ হওয়ার অর্থ দানশীলতা। দান করা ছিল উনার সবচেয়ে প্রিয় কাজ, এজন্য উনার লক্বব মুবারক আত্বওয়ালু ইয়াদান। সেখানে উপস্থিত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে উম্মুল মু’মিনীন আস সাবিয়াহ অর্থাৎ হযরত বিনতু জাহাশ আলাইহাস সালাম সর্ব প্রথম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তখনও দুনিয়ার জমীনে ছিলেন। (তাবাকাত, আনসাবুল আশরাফ)
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বর থেকে প্রাপ্ত ভূ-স¤পত্তি হতে উনার খোরপোষের ব্যবস্থা করেছিলেন। ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি সেখান থেকে ৮০ ওয়াসাক খেজুর ও ২০ ওয়াসাক গম অথবা যব পেতেন। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় খলীফা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার প্রদত্ত নির্ধারিত সরকারী ভাতা তিনিও পেতেন।
বিছাল শরীফ:
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ সম্পর্কে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হিজরী ২২ সনের পবিত্র মাহে ২৯ জিলহজ্জ শরীফ, ইয়াওমুল খামীস হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৭১ বছর।
আওলাদ:
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার প্রথম জাওয মুকাররম হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঔরশে উনার এক পুত্র সন্তান হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি পারস্যে জালুলার জিহাদে শাহাদত লাভ করেন। তবে হযরত আবনাউ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত বানাতু রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কেউ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে তাশরীফ মুবারক আনেননি। (শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহিব)।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সংখ্যায় ছিলেন ১৩ জন। তম্মধ্যে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন দ্বিতীয় উম্মুল মু’মিনীন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পরেই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
সার্বিক ভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অতুলনীয় ফাযায়েল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র সুরা আহযাব শরীফ উনার পবিত্র ৬ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন বলে উল্লেখ করেছেন, যেমন-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রেক্ষিতে উনাদের একটি লক্বব মুবারক أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন ছিলেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে থাকবেন উনাদের সকলেরই মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ !
খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পুতঃপবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য উনাদের আরেকটি লক্বব মুবারক হচ্ছে أزواج مطهرات (আযওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ পুতঃপবিত্রা হযরত জাওযাতুল মুকাররমাহ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র সকল প্রকার কলুষ-মুক্ত। সুবহানাল্লাহ !
পবিত্র সুরা আহযাব উনার পবিত্র ৫৩ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
وَلَا أنْ تَنْكِحُوْا أزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أبَدًا
অর্থ: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার হযরত জাওযাতুল মুকররামাহ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমরা বিবাহ করতে পারবে না)।
এই একই সুরার ৩২ নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ
অর্থ: হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিছা অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ! আপনারা অন্যান্য নারীদের মত নন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন অন্য কোন পুরুষ বা সাধারণ মানুষের মত নন, উনারাও অন্য কোন সাধারণ নারীর মত নন। এই সব আয়াত শরীফ থেকে বুঝা যায়, মহান আল্লাহ পাক উনাদের মর্যাদাকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল স্ত্রী জাতীর উপরে স্থান দিয়ে উনাদেরকে পৃথক করে মুবারক সম্মান দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাধারণভাবে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক অসাধারণ মর্যাদা-মর্তবার অধিকারিনী করেছেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণেই। এতদ্ব্যতীত উনার অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলী ছিল।
দানশীলতা ছিল সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার বিশেষ গুণ। একবার খলীফা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে দিরহামপূর্ণ একটি থলি পাঠিয়ে দেন। তিনি বাহককে জিজ্ঞাসা করেন, ইহাতে কি রয়েছে? বাহক বলেন, দিরহাম। তিনি বলেন, খেজুরের মত থলিতে ভরে দিরহামও পাঠান হয় নাকি? তিনি দিরহামগুলি থলি থেকে বের করেও দেখলেন না। অতঃপর তিনি উনার খাদিমাকে উক্ত দিরহামগুলি অভাবগ্রস্থ লোকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। (ইবনে সা‘দ)
তিনি চামড়ায় কারুকার্য করাতেন এবং এভাবে প্রাপ্ত আয় উদারভাবে দান করতেন এবং সৎকর্মে খরচ করতেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মুবারক অবস্থান উনার দিবসটি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছিলেন। এ ব্যাপারে উনার বক্তব্য ছিল তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, উনার একমাত্র কামনা তিনি যেন পরকালে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত জাওযাতুল মুকাররমাহ হিসাবে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। (সীরত গ্রন্থাবলী)
তাকওয়া পরহেজগারীতে তিনি বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্য-মন্ডিতা। তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক উনার পরে তিনি কঠোর পর্দা করতেন। এমনকি পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরাহ উনাদের জন্যও ঘর হতে বের হতেন না, যদিও পর্দা করে বের হওয়া উনাদের জন্য নাজায়েয ছিল না। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বিশেষ তাক্বওয়া পরহেজগারীর ব্যাপারে প্রশংসা করে বলতেন- আমার ইচ্ছা হয় আমার রুহ মুবারক যদি আপনার জিসিম মুবারকে প্রবেশ করত।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম অত্যন্ত সরল প্রকৃতির ছিলেন। উনার কোন কোন কথা মুবারক শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যাধিক খুশি প্রকাশ করতেন। একদিন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, কাল রাতে আমি আপনার সাথে নামায পড়েছি। আপনি এত দীর্ঘ সময় রুকুতে ছিলেন যে, আমার নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু হয়েছে বলে মনে হয়েছিল। এ কারণে আমি দীর্ঘক্ষণ নাক চেপে ধরে রেখেছিলাম। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথায় মৃদু হেসে খুশী মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত, ইছাবা)
একটি হাদীছ শরীফে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন- নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট একজন লোক এসে বললেন- আমার পিতা অতি বৃদ্ধ লোক, তিনি পবিত্র হজ্জ করতে অক্ষম, (এখন কি করতে হবে)? নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- তোমার পিতার যদি ঋণ থাকত, আর তার পক্ষ থেকে যদি তুমি তা আদায় করে দিতে, তবে কি তা তোমার নিকট থেকে কবুল করা হতো না? লোকটি বলল- হ্যাঁ। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইহা অপেক্ষাও অধিক দয়ালু, তোমার পিতার পক্ষ থেকে পবিত্র হজ্জ আদায় কর। (উসুদুল গাবা)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলই পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফ উনার প্রচার প্রসারে এবং বিশেষ ভাবে নারী জাতির তা’লীম তালক্বীনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে উনারা এই হেদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম ১১ হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে হিজরী ২২ সনে উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত প্রায় ১১ বছর তিনি এই হেদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ !
(সূত্র: উসুদুল গাবা, তাবাকাত, যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব, সীরত গ্রন্থাবলী)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত বিবি শা’ওয়ানাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)