সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২২)
, ২৪ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের মুখেও ঈমানদীপ্ত দৃঢ়চিত্ত হযরত খাব্বাব বিন আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
সম্মানিত দ্বীন ইসলামের প্রারম্ভিকতায় যাঁরা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে নিজেদেরকে ‘আস্ সাবিকুনাল আউওয়ালুন’-এর সৌভাগ্যে গৌরবান্বিত করেন হযরত খাব্বাব বিন আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন সেই সমস্ত সৌভাগ্যশীলদের মধ্যে অন্যতম। অধিকাংশ বর্ণনা মতে, তিনি বনি তামীম গোত্রের লোক ছিলেন। উনার লক্বব মুবারক ছিল ‘সাদিসুল ইসলাম’ অর্থাৎ ইসলামের ৬ষ্ঠ ব্যক্তি। মূলতঃ এই সময়টি ছিল সামান্য কয়েকজন মুসলমানের জন্য ভীষণ সঙ্কটময় আর ছবর ও সহ্য ক্ষমতার কঠিন পরীক্ষাকাল।
হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন এ কথা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই উনার উপর কাফির-মুশরিকদের অত্যাচার, নির্যাতনের ক্রোধের পাহাড় যেন ভেঙ্গে পড়লো। একবার কাফির মুশরিকরা জলন্ত কয়লার উপর হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বেঁধে শুইয়ে দেয়। এমনকি তিনি যেন পাশ ফিরতে না পারেন সেজন্য এক কাট্টা কাফির উনার বুক মুবারকের উপর পা দিয়ে শক্তভাবে চেপে ধরে রাখে। এভাবে পর পর একাধিক বার জ্বলন্ত আগুনে শুইয়ে দেয়ায় উনার পিঠ মুবারক শ্বেত রোগের মত সাদা হয়ে গিয়েছিল।
অনেক দিন পরে প্রসঙ্গক্রমে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিঠ মুবারকের কাপড় তুলে ধরলেন। এই দৃশ্য অবলোকন করে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আজ পর্যন্ত আমি কখনো এরূপ পিঠ দেখি নাই। তখন হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, প্রজ্জ্বলিত অঙ্গারস্তুপে আমাকে ঠেসে ধরা হতো যতক্ষণ না আমার পৃষ্ঠচাপে সেই প্রজ্জ্বলিত আগুন নিভে যেত।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দুয়ার বরকতে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত দৃঢ়তা:
হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন, একবার আমি রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম। তিনি চাদর মুবারকে ঠেস দিয়ে কা’বা শরীফ উনার ছায়ায় বসেছিলেন। আমি আরজ করলাম- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মুনাজাত করুন। আমার কথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উঠে বসলেন। এ সময় উনার মহাসম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক অর্থাৎ চেহারা মুবারক লাল হয়ে উঠলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনাদের পূর্বে এমন সব লোক গত হয়েছেন যাঁদের শরীর থেকে লৌহ চিরুনী দ্বারা গোশ্ত আঁচড়িয়ে ফেলা হয়েছে। শুধু হাড় ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমন জুলুমের পরও উনারা দ্বীনের উপর ইস্তেক্বামত ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই এই দ্বীনকে পূর্ণতা দান করবেনই করবেন। ’ সুবহানাল্লাহ!
সত্যিই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইশ্ক মুহব্বত এবং উনার আনিত দ্বীন ইসলামের উপর হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঈমানদীপ্ত দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন।
উল্লেখ্য, তিনি ইসলাম পূর্ব জীবনে কর্মকারের কাজ করতেন। এ সুবাদে বহু লোকের নিকট উনার টাকা পাওনা ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি যখন তাদের নিকট পাওনা টাকার জন্য তাগাদা করতেন তখন কাফির-মুশরিকরা বলত, দ্বীন ইসলাম ত্যাগ না করলে একটি কানাকড়িও দেয়া হবে না। প্রতি উত্তরে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মরার পর আবার জীবিত হয়ে এ দুনিয়ায় আগমন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক এবং দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করবো না। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
সত্যিই আজ এই ফিৎনা ফাসাদের যুগে হযরত খাব্বাব বিন আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঈমানদীপ্ত দৃঢ়তার অধিকারী মর্দে মু’মিনের বড়ই প্রয়োজন। যারা ইহুদী, মুশরিক, নাছারাদের যাবতীয় অত্যাচার নির্যাতন এবং লোভ লালসার মুখেও দ্বীন ইসলাম তথা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। আর এমন মর্দে মু’মিনী মুজাহিদী জজবা অন্তরে পয়দা করতে হলে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকের কোনই বিকল্প নেই।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)