শরীয়তে সব বিদয়াতই গোমরাহীমূলক নয় বরং বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহই দ্বীনের মধ্যে নতুন প্রথা অর্থাৎ হারাম (১)
, ৮ই রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৯ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২২ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِى النَّارِ
অর্থ: “প্রত্যেক বিদ্য়াতই গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহ্ ব্যক্তিই জাহান্নামী। ” (রযীন, বাযযার, তবারানী)
‘বিদ্য়াত কাকে বলে?’ ‘এর ব্যাখ্যা কি?’ এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার কোশেশ করবো। তাহলে কারা বিদ্য়াতী এবং কোন আমলটি বিদ্য়াত তা সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব হবে। বিদ্য়াত-এর অর্থ ‘বিদ্য়াত’ শব্দের লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলো না। আর পারিভাষিক ও শরয়ী অর্থে বিদ্য়াত হচ্ছে-
ما احدث مما لااصل له فى الشريعة يدل عليه واما ماكان له اصل من الشرع يدل عليه فليس ببدعة شرعا وان كان بدعة لغة
অর্থ: “এমন নতুন বিষয় যার ভিত্তি শরীয়তে তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বিদ্য়াত নয়। যদিও আভিধানিক অর্থে তাকে বিদ্য়াত বলা হয়। ” (জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম)
বিদ্য়াত-এর ব্যাখ্যা:
বিদ্য়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফের কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন-
قال الشافعى رحمة الله عليه مالحدث مما يخالف الكتاب اوالسنة اوالاثر اوالاجماع فهو ضلالة وما احدث مما لايخالف شيأ مما ذكر فليس بمذموم.
অর্থ: “হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে নব উদ্ভাবিত কাজ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, আছার (অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল বা ক্বওল) অথবা ইজ্মার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, তাই গোমরাহী বা নিকৃষ্ট। আর যে নব উদ্ভাবিত কাজ উল্লিখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়িয নয়। ”
আজকাল কিছু জাহিল লোক রয়েছে যারা সকল বিদ্য়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসেবে তারা নিমে¥াক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
অর্থ: “প্রত্যেক বিদ্য়াতই গোমরাহী। ” (মিশকাত শরীফ)
অথচ তারা এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ্ ‘মিরকাত শরীফে’ উল্লেখ করা হয়-
قَوْلُهٗ كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ قَالَ فِى الْاَزْهَارِ اَىْ كُلُّ بِدْعَةٍ سَيِّئَةٍ ضَلَالَةٌ
অর্থ: “ছহিবে মিরকাত হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আযহার” নামক কিতাবে كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ (প্রত্যেক বিদ্য়াতই নিকৃষ্ট) হাদীছ শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে-
"اَىْ كُلُّ بِدْعَةٍ سَيِّئَةٍ ضَلَالَةٌ"
অর্থাৎ সকল বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ গোমরাহী। আর তাই হযরত ইবরাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
وعد النقل عن النبى صلى الله عليه وسلم وعن الصحابة والتابعين رضى الله عنهم وكونه بدعة لا ينافى كونه حسنا.
অর্থ: “নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদ্য়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে তা গোমরাহী, এ কথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে। ” (কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুছল্লী ২৫১ পৃষ্ঠা)
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “ইহ্ইয়াউল উলুম” কিতাবের ২য় খ-ের ২৬ পৃষ্ঠায় অনুরূপ মত পেশ করেন।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিদ্য়াত মাত্রই পরিত্যাজ্য নয় এবং সকল বিদ্য়াতই গোমরাহী নয়। যদি তাই হতো, তবে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয হতো না। কেননা একেও বিদ্য়াত বলা হয়েছে, অর্থাৎ উত্তম বিদ্য়াত।
এখন বিদ্য়াত কত প্রকার ও কি কি এবং তার মধ্যে কোনটি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য আর কোনটি শরীয়তে পরিত্যাজ্য তা আলোচনা করা যেতে পারে-
বিদ্য়াত-এর শ্রেণী বিভাগ ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী বিদ্য়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-
১। বিদ্য়াতে ই’তিক্বাদী। অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদ্য়াত।
২। বিদ্য়াতে আ’মালী। অর্থাৎ কর্মগত বিদ্য়াত।
বিদ্য়াতে ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদ্য়াত হলো- যে সমস্ত আক্বীদা পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মূলনীতির বহির্ভূত। মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদ্য়াতের সবই হারামের পর্যায়ভুক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
যেমন- খারিজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরক্বার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
বিদ্য়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদ্য়াত প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত-
(ক) বিদ্য়াতে হাসানাহ্।
(খ) বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
বিদ্য়াতে হাসানাহ্ আবার তিন প্রকার-
(১) বিদ্য়াতে ওয়াজিব।
(২) বিদ্য়াতে মুস্তাহাব
(৩) বিদ্য়াতে মুবাহ্।
আর এ বিদ্য়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ
অর্থ: “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়তসম্মত), তার জন্য সে ছওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার ছওয়াবও সে পাবে। ” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, ফতহুল মুলহিম, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে বিদ্য়াতে হাসানাহ্কে বিদ্য়াত লিদ্ দীন বলা হয়। কেউ কেউ আবার উক্ত হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে বিদ্য়াতে হাসানাহ্কে (بدعت لغوى) বিদ্য়াতে লোগবীও বলে থাকেন। অর্থাৎ যদিও শাব্দিক অর্থে বিদ্য়াত বলা হয়েছে, মূলতঃ এগুলো সুন্নতেরই অন্তর্ভুক্ত। কারণ হাদীছ শরীফে (سُنَّةٌ) সুন্নত শব্দ উল্লেখ রয়েছে। (অসমাপ্ত)
মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












