ঘটনা থেকে শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যতার বেমেছাল দৃষ্টান্ত
, ০৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪, মে, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যারা অনুগত বান্দা, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ বান্দা। অনুগত কাকে বলে? এ প্রসঙ্গে আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার একটা ওয়াকেয়া উল্লেখ করা হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন খলীফা হয়েছেন, উনার মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন- হযরত হোর ইবনে কায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত হোর ইবনে কায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন খুব বড় আলেম। উনার এক চাচা ওয়াইন ইবনে হেসেন, যিনি এসেছেন উনার ভাতিজা হোর ইবনে কায়েসের কাছে। এসে বললেন, হে হোর ইবনে কায়েস! তুমি এক কাজ করো, আমাকে তোমাদের যিনি খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন উনার সাথে সাক্ষাত করিয়ে দাও।
হোর ইবনে কায়েস ফজরের পরে খুব ভোরে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিলেন। যখন ওয়াইন ইবনে হেসেন সাক্ষাত করতে আসলেন, এসে বললেন, হে খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনি ইনসাফ করেন না। আপনি আমাদের হক্ব আদায় করেন না। আমাদের প্রতি সুসম বণ্টন করেন না ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা বলা শুরু করলো। যখন সে এ কথা বলা শুরু করলো, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি খুব গোস্বা করলেন। তুমি বলো কি? এটা আমি ইনসাফ করিনি? আমি সুসম বণ্টন করিনি? তিনি খুব গোস্বা করলেন। গোস্বা হওয়ার সাথে সাথে হোর ইবনে কায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করলেন-
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
অর্থ: “ক্ষমাকে গ্রহণ করুন, সৎ কাজে আদেশ করুন, জাহেল লোকদের থেকে দূরে থাকুন। যখন হোর ইবনে কায়েস এ পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চুপ হয়ে গেলেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ- ক্ষমাকে গ্রহণ করো, সৎ কাজে আদেশ দাও, জাহেল লোকদের থেকে দূরে থাকো। মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ বলার সাথে সাথে তিনি চুপ হয়ে গেলেন। যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এটা মেনে নিলেন, তখন সমস্ত আরব দেশে এ কথাটা রটে গেল-
كَانَ وِفَاقًا عِنْدَ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ.
যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবের প্রতি পূর্ণ অনুগত হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ইমাম যাইনুল আবেদীন আলাইহিস সালাম) উনার সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি কতটুকু قَانِتِيْنَ ছিলেন, অনুগত ছিলেন। সে প্রসঙ্গে বলা হয়, একদিন শীতকালে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার এক বাঁদীকে বা দাসীকে বললেন, গরম পানি নিয়ে আসো, ওযূ করতে হবে। গরম পানি খুব তাড়াহুড়া করে এনে তার পাত্রটা মাটিতে রাখতে গিয়ে বাঁদীর হাত থেকে পিছলিয়ে পড়ে গেল। তার কারণে কিছু গরম পানি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে লাগলো। গরম পানি লাগাতে তিনি একটু কষ্ট পেলেন। আর কষ্টের কারণে তিনি কিছুটা গোস্বাও করলেন। তিনি গোস্বা করার সাথে সাথে উনার সেই বাঁদী, তিনিও কিন্তু আলেমা ছিলেন। তিনি বললেন,
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ “যারা গোস্বাকে হজম করে” সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাথে সাথে গোস্বাকে হজম করে ফেললেন। সুবহানাল্লাহ!
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ
এরপর সেই বাঁদী বললেন, যারা মানুষকে ক্ষমা করে। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
এরপর সেই বাঁদী বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি নেককারদের মুহব্বত করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি তোমাকে আযাদ করে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত বিষয়টি থেকে ফিকিরের বিষয়,
وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ.
উনারা যে মহান আল্লাহ পাক উনার কত অনুগত ছিলেন তা বলারই অপেক্ষা রাখে না। উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হুব্হু নকশা ছিলেন।
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
তিনি গোস্বাকে দমন করলেন, উনাকে ক্ষমা করলেন ও আযাদ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই উক্ত বিষয়টি থেকে যা বুঝা যায়, তা হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যতা করতে হবে। গোস্বাকে দমাতে হবে। কেননা যে গোস্বাকে দমাতে, ক্রোধকে হজম করতে পারবে। তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা সহজ হবে। এবং যে যতবেশী গোস্বা বা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে ততবেশী মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যশীল বান্দা হতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)