বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের নেপথ্যে কী?
, ২২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) দেশের খবর
বাংলাদেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর এই চাহিদা হয় গ্রীষ্মকালে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট। তারপরও বিদ্যুতের সংকট কেন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি নির্ভর জ্বালানির উপর ভিত্তি করে পাওয়ার প্লান্ট তৈরিই এই সংকটের মূল কারণ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকটে পড়ায় জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। আর বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্যই এই আমদানি নির্ভর পরিকল্পনা করা হয়েছে হয়ে বলে দাবি করেছেন এক বিশ্লেষক।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, গত দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় লোডশেডিং কমেছে। জুমুয়াবার দেশে লোডশেডিং ছিলো মাত্র ২৭৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৪ মেগাওয়াট। আর শনিবার ১২ হাজার ১৫০ মেগাাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৭৯৮ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৩৩৬ মেগাওয়াট। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বা ব্যবহার কমেছে।
পিডিবি জানিয়েছে, গরমের সময়ে চাহিদা থাকে ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট। তখন গড়ে দুই থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে। গত ৪ জুন দেশে লোডশেডিং ছিলো দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশে এখন ১৭০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭টি পুরোপুরি উৎপাদনে আছে। পুরোপুরি বন্ধ আছে ৫১টি। আর আংশিক চালু বা বন্ধ আছে ৬২টি। এর কারণ বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। আর ডলার সংকটের জন্য সেই আমদানি করা যাচ্ছে না। ভাড়াভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বসে আছে তাদেরও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তাদের ১৮ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের উৎপাদন ৫১.০৫ ভাগ গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের উপর নির্ভর করে ৩৪ ভাগ, কয়লার ওপর নির্ভর করে ৭.৮৬ ভাগ। এছাড়া সৌর, পানি ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ আছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল পুরোপরিই আমদানি নির্ভর। কয়লাও অনেকটাই আমদানি করা হয়। এলএনজিও বাইরে থেকে আনতে হয়। বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সেটা উৎপাদন হচ্ছে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা দুই হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সক্ষমতা অনুযায়ী গ্যাস উৎপাদন না হওয়ায় কেন্দ্রগুলো চাহিদামত গ্যাস পাচ্ছে না। দেশের বাইরে স্পট মার্কেট থেকে এখন এলএনজি কেনা হচ্ছে। কয়লার অভাবে কয়লা ভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রই বন্ধ আছে। বিপিসি দাম শোধ করতে না পারায় তেল দিচ্ছে না কিছু সরবরাহকারী। বাংলাদেশের যে বিদ্যুৎ পরিকল্পনা তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাতের শতকরা ৯০ ভাগ জ্বালানি আমদানি করতে হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মুখপাত্র শামীম হাসান জানান, ‘‘বৃষ্টির কারণে এখন বিদ্যুতের চাহিদা কম। ১১-১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। তাই পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যদি চাহিদা গরমের কারণে বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়।''
তিনি জানান, ‘‘দেশের জ্বালানি তেল ভিত্তিক সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ আছে তেলের অভাবে। আমরা এই সংকটের সময় ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে অনুরোধ করেছিলাম অন্তত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। আমরা জ্বালানি তেলের কিছু ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শুধু রামপাল আংশিক চালু আছে। রামপালের জন্য শনিবার কয়লা এসেছে। পায়রা বন্ধ আছে। কয়লার জন্য এলসি খোলার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা এখন প্রধানত নির্ভর করছি গ্যাস ভিত্তিকবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর। তাও আমাদের চাহিদার অর্ধেক পাচ্ছি। আমাদের দরকার এক হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি। পাচ্ছি সর্বোচ্চ ৮০০ এমএমসিএফডি। ফলে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকের কিছু বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানের পিছনে আসলে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্য কাজ করেছে। এটা আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি। একই সঙ্গে কিছু মানুষকে আমদানির ব্যবসার সুযোগ দিতে এটার জ্বালানি আমদানি নির্ভর করা হয়েছে। নিজস্ব জ্বালানির উপর নির্ভর না করে আমদানি নির্ভর হওয়ার পরিণতি আমরা এখন ভোগ করছি। এটা যে ভবিষ্যতে আরো কতো জটিল হতে পারে তা ভেবে আমি আতঙ্কিত। সৌরবিদ্যুতের জন্য আমরা যেসব প্যানেল, যন্ত্রপাতি এনেছি তাও কোনো কাজে আসছে না। আসলে বিদ্যুতের জন্য নয়। কাজ হয়েছে এখানে একটা বাজার বানিয়ে ব্যবসা করার জন্য।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা গ্যাস ঠিক মতো অনুসন্ধান করিনি। আর এখনো যে গ্যাস আছে তা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। সেটা না করে আমরা তেল ভিত্তিক ভাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। এখন বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছি। এখন আমাদের ডলার ক্রাইসিস। এই সংকট কবে কাটবে জানি না।'' চুক্তি অনুযায়ী রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারে দিতে হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘‘ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো শর্ট টার্মে ভালো ছিলো। কিন্তু তিন বছরের বেশি নয়। তিন বছরে তো তার বিনিয়োগ উঠে ব্যবসা হয়েছে।তারপরও ১০-১২ বছর বসিয়ে বসিয়ে কেন ভাড়া দিতে হবে। এটা কোনো ওয়াইজ ডিসিশন নয়।''
তার কথায়, ‘‘আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতাই বিদ্যুতের এই বিপদ ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত গ্যাস থাকার পরও আমরা তা উত্তোলন করছি না। তেল গ্যাস আহরণে উদ্যোগ নিচ্ছি না। কয়লার ব্যাপারে পরিবেশবাদীরা বাধা দিয়েছেন। তারপরও ওপেন না করে ক্লোজ পিট করা যেত।''
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ৫০ মিলিয়ন রিজার্ভ নিয়ে বসে আছি। রশিদপুরে আমাদের গ্যাস আছে। সেটা নিয়েও বসে আছি। আসলে এখন আমাদের যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো আছে সেখান থেকে অপটিমাম উৎপাদনের ব্যবস্থা করা উচিত।''
এদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মাণের খরচও অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি বলে জানান শামসুল আলম। তার দাবি, ‘‘এই অতিরিক্ত খরচের পিছনেও আছে গোষ্ঠী ও ব্যক্তি সুবিধা।''
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ফের দুই ট্রলারসহ ৬ মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করেছে ‘আরাকান আর্মি’
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আশ্রয়ণের ঘর ভেঙে দালান, উদ্বোধনে ৩০০ লোকের ভুরিভোজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অভিযোগের পাহাড় দুদকে, সমাধান কীসে?
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাজারে এমন বিশৃঙ্খলা, ট্যাক্স কমিয়েও দাম কমছে না -অর্থ উপদেষ্টা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জনপ্রশাসনে সংস্কার : তদবির বন্ধের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আদানির সঙ্গে ‘অসম’ বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
এজেন্ট হিসেবে ঢুকে কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা সফল হবে না -সারজিস
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা উচিত -মাহফুজ আলম
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে ভারত -ফখরুল
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উপদেষ্টা ‘কথা না বলায়’ ক্ষুব্ধ আহতরা, পঙ্গু হাসপাতালের সামনে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
১০ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি, লক্ষ্য কী?
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)