হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে
বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বা কর্র্তৃক উত্থাপিত সমালোচনাসমুহের দাঁতভাঙ্গা জাওয়াব (১)
, ১৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৯অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরিচয়
ছাহাবা শব্দের অর্থ হলো সাথী। প্রসঙ্গতঃ প্রশ্ন হলো ছাহাবী কারা? এ প্রশ্নের সহজ সরল জাওয়াব হলো যাঁরা ঈমানের সাথে সাইয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছেন, তাঁর মুবারক ছোহবত অর্জন করেছেন এবং ঈমানের সাথে যমীন থেকে বিদায় নিয়েছেন, উনারাই ‘ছাহাবী’।
ছাহাবী উনাদের সংখ্যা
মশহুর বর্ণনা মতে হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ ছিল।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত ও মর্যাদা: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বেমেছাল মর্যাদার অধিকারী। কারণ উনাদের মর্যাদার উৎসই হচ্ছে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছোহবত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উনাদের সততা, বিশ্বস্ততা, শরাফত, আত্মত্যাগ, সদাচার, আল্লাহভীতি, তাক্বওয়া, ইখ্লাছ, ইহসান, আমানত, দিয়ানত, দ্বীনদারী, সহানূভূতি, বীরত্ব, সাহসিকতা, ঈমানদারি ইত্যাদি সবই ছিল নজীরবিহীন। উনারা ছিলেন নিষ্কলুষ ও পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। কথায়, কাজে, নছীহতে, উঠা-বসায়, চলা-ফেরায়, ব্যবহারে, এক কথায় যাবতীয় কাজে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পূণ্যতম আদর্শ উনাদের জীবন মুবারকে প্রতিফলিতও বাস্তবায়িত হয়েছে। উনারা ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বাস্তব অনুকরণ ও অনুসরণকারী ব্যক্তিত্ব।
তাই উনারা সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মানব এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদর্শের বাস্তব নমুনা। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ছাহাবী উনাদের সমমর্যাদা পূর্ববর্তী যূগের কোন উম্মতই লাভ করতে পারবেনা। কেননা ছাহাবীগণ স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট কালামুল্লাহ শরীফ শিক্ষা করেন। উনারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক পরবর্তী উম্মতের জন্য মনোনীত এবং ঘোষিত হয়েছেন আদর্শ পথপ্রদর্শক এবং সত্যের মানদ-রুপে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উম্মতের উনারাই প্রথম সূত্র। পরবর্তী উম্মত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা, ভাষ্য, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম-উনার পরিচয়, শিক্ষা, পবিত্র জীবনাদর্শ দ্বীন ইসলামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উনাদেরই মাধ্যমে লাভ করেছেন । সুতরাং, প্রতিষ্ঠিত ঐক্যমত উপেক্ষা করা বা এর স্বকীয়তা বিনষ্ট করার অর্থই হলো ঈমান ও ইসলাম থেকে খরিজ হওয়া।
আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে ইরশাদ করেন, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-উনার রসূল এবং তাঁর সাথী বা ছাহাবীগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহ পাক-উনার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি উনাদেরকে রুকূ ও সিজদাবনত দেখবেন। উনাদের এরূপ অবস্থা তাওরাত শরীফে বর্ণিত রয়েছে। আর ইনজীল শরীফে উনাদের অবস্থা এরূপ বর্ণিত রয়েছে, যেমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় ডাল-পালা। অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং দৃঢ়ভাবে কা-ের উপর দাঁড়ায়, কৃষককে আনন্দে অভিভূত করে । অর্থাৎ, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সংখ্যা চারা গাছে, অনুরূপ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যেমন উনারা শুরুতে অল্প সংখ্যক হবেন, এরপর উনাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং শক্তি অর্জিত হবে, যাতে উনাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা বা হিংসার সৃস্টি হয়। যারা ঈমান আনয়ন করে এবং নেক আমল করে আল্লাহ পাক উনাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরুস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। অর্থাৎ সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ওয়াদা দেয়া হয়েছে। ” (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-২৯)
উল্লিখিত আয়াত শরীফে “উনার ছাহাবী” থেকে আয়াত শরীফের শেষ পর্যন্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের গুণাবলী, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষ লক্ষণাদি বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও নুযূল খাছ তবে হুকুম হচ্ছে আম অর্থাৎ এতে সকল ছাহাবায়ে কিরামগণই দাখিল রয়েছেন।
অর্থাৎ সমস্ত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ছিলেন পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর। আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই আক্বাইদ, ইবাদত, মুয়ামিলাত, মুয়াশারাত ও তাছাউফ ইত্যাদি সবই করেছেন। তাই হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণ ও অনুকরণ এবং ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত যারা অতীত হয়েছেন, উনাদেরকে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রিয় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণ করা। উনারা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম। আত্মার দিক দিয়ে উনারা অধিক পবিত্র। ইল্মের দিক দিয়ে গভীর। উনারা লোক দেখানো আমল করা হতে মুক্ত। আল্লাহ পাক উনাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথী হিসেবে মনোনীত করেছেন। সুতরাং, উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান,
শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব উনাদের সীরাত-ছূরত তথা মুবারক জীবনাদর্শকে গ্রহণ কর, কারণ উনারা হিদায়েত ও “ছিরাতুল মুস্তাক্বীম”-এর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। ” (মিশকাত শরীফ পৃঃ৩২)
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)