সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ মহান আল্লাহপাক উনাকে ‘তুমি’ সম্বোধন
, ১৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুওয়াল:
মসজিদের অনেক ইমাম ও খতীবকে দেখা যায়, তারা দুআ করার সময় মহান আল্লাহ পাক উনাকে তুমি বলে সম্বোধন করে থাকে। এটা কতটুকু শুদ্ধ? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুল-মাখলূক্বাতের খালিক্ব, মালিক, রব। সমস্ত প্রশংসা, পবিত্রতা, সম্মান-ইজ্জতের তিনিই মূল মালিক। উনাকে ব্যতিত কারো কোন সম্মান-মর্যাদা হতে পারেনা। কাজেই সবার উর্ধ্বে, সবার আগে এবং সর্বোচ্চ মর্যাদা উনাকেই দিতে হবে।
সুতরাং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করাটা উনার পবিত্রতম শান মুবারককে ইহানত করার শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং এর ফলশ্রুতিতে ঈমানহারা হয়ে জাহান্নামী হওয়া ব্যতিত কোন উপায় থাকবে না।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ: আর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে এবং মু’মিন মুসলমানদের জন্যে। কিন্তু মুনাফিকরা এ সম্পর্কে আদৌ অবগত বা অবহিত নয়। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
এ পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রতিভাত হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার ইজ্জত-সম্মান সম্পর্কে মুনাফিক শ্রেণীর লোকেরাই বেখবর। অর্থাৎ যারা কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ইজ্জত-সম্মান প্রদর্শনে কার্পন্য করে থাকে।
অতএব, প্রত্যেক বান্দা-বান্দীর জন্যে, বিশেষ করে মুসলমান পুরুষ মহিলা, জিন-ইনসানের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সম্মানসূচক শব্দ মুবারক দ্বারা আহ্বান বা সম্বোধন করা এবং উনার পবিত্রতম শান মুবারকে সম্মানিত শব্দ মুবারক ব্যবহার করা।
মহান আল্লাহ পাক উনার ইজ্জত-হুরমত, মর্যাদা-মর্তবা তো বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং যে বিষয় বা বস্তুসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার শিআর বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত সেসমস্ত বস্তু বা বিষয়ের ইহানত করতে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সমূহকে তোমরা অবমাননা বা অসম্মান করো না। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
এছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَنْزِلُوا النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ
অর্থ : তোমরা মানুষদেরকে তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী সম্মান করো। (মিশকাত শরীফ)
এমনিভাবে অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সম্মানিত ব্যক্তি বা বিষয়সমূহকে সম্মান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অসম্মান বা ইহানত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
যদি তাই হয় তাহলে যিনি সমস্ত কিছুর খালিক্ব, মালিক, রব, মা’বুদ মহান আল্লাহ পাক উনাকে সৃষ্টিজীব কি করে অসম্মান প্রদর্শন করতে পারে! বস্তুত উনাকে যারা অস্বীকারকারী, কাফির, মুশরিক, মুনাফিক কেবল তারা ব্যতীত আর কেউই অসম্মান করতে পারে না, ইহানত বা অবজ্ঞা করতে পারে না।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনাকে তুমি বলে সম্বোধন করা একদিকে যেমন কুফরী তেমনি চরম বেয়াদবিরও শামিল। আদব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
حُسْنُ الْاَدَبِ مِنَ الْاِيْمَانِ
অর্থ : উত্তম আদবই হলো ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।
স্মরণীয় যে, যার আদব নেই সে বেআদব। বেআদব সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত বুযুর্গ এবং কবি হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বসমাদৃত ‘মসনবী শরীফ’ কিতাবখানা লেখার শুরুতে লিখেছেন যে-
از خدا جویم توفیق ادب
بے ادب محروم گشت از لطف رب.
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আমি আদব রক্ষার ব্যাপারে তাওফীক চাচ্ছি। কেননা বেআদব মহান রব তায়ালা উনার রহমত থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)