পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (৯)
, ২১ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০১, মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ব্রিটিশ বেনিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতবর্ষের সংস্কৃত ভাষার কথিত প-িতসম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় ভাষা ‘সংস্কৃত’ কেন্দ্রীক বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ব্যাকরণ এবং বাংলা পরিভাষা ও শব্দ তৈরি করে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের মধ্যে ডুবিয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছে। তারা বাংলা ভাষাকে বিপরীত লোকদের ভাষা অর্থাৎ মুসলমানদের ভাষা মনে করতো। এজন্য তারা বাংলাকে কখনও ভালো চোখে দেখেনি। বার বার তারা বাংলা ভাষাকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেছে। সেনযুগে বাংলা ভাষা নিষিদ্ধকরণ, ব্রিটিশ আমলে বাংলা ভাষার সংস্কৃতকরণ তথা বিকৃতিকরণসহ বাংলা ভাষার উপর নানান রকম নিপীড়ন তারা চালিয়েছে।
মুসলমানদের হাত ধরে বাংলা ভাষার জন্ম ও বিকশিত হওয়াই ছিল এর অন্যতম কারণ। প্রায় দেড় হাজার বছর যাবৎ আরবী ও ফারসী ভাষার সংস্পর্শে ও পাশাপাশি বেড়ে উঠেছে বাংলা ভাষা। এতে করে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ ও ধীরে ধীরে অনেকটা পূর্ণতায় পৌঁছেছিল। এই কারণে তারা বাংলা ভাষাকে শত্রুর ভাষা তথা মুসলমানের ভাষা আখ্যায়িত করে ব্রিটিশদের যোগসাজসে বাংলার উপর কথিত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস করেছে।
যুগ যুগ ধরে যেসব আরবী-ফারসী শব্দ, পরিভাষা এবং বানানরীতি বাংলা ভাষার প্রাণ হয়ে বাংলার মধ্যে একাকার হয়ে মিশেছিল, বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছিল। কলকাতার বি-রা সেসব আরবী-ফারসী শব্দ, পরিভাষা এবং বানানরীতিকে বেছে বেছে বের করে তার স্থলে সংস্কৃত শব্দ, পরিভাষা ও বানানরীতি প্রবেশ করিয়েছে। এর বিরুদ্ধে একসময় মুসলমান কবি-সাহিত্যিকরা কলম ধরলেও শতভাগ সংস্কৃতের আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। যার ফলে বাংলা ভাষায় এখনও প্রচুর সংস্কৃত শব্দ ও পরিভাষা চলমান রয়েছে, এবং কথিত মান্য বা প্রমিত বানানরীতির ব্যবহারও চলছে যা একদিকে বাংলা ভাষার উপর আগ্রাসন, অন্যদিকে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদার জন্য হুমকীস্বরূপ। বহিরাগত সংস্কৃতের আগ্রাসী ও ঈমানবিধ্বংসী সেসব শব্দ ও পরিভাষাগুলোর মধ্যে এখানে কিছু শব্দ ও পরিভাষা তুলে ধরা হয়েছে, এবং দুই একটা বানানরীতির ব্যবহার দেখানো হয়েছে যেগুলো ব্যবহার করা মানে বাংলা ভাষার বিকৃতিকে মেনে নেয়া।
এছাড়া এই তালিকায় এমন কিছু শব্দ ও পরিভাষা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো ব্যবহার করা সরাসরি শিরক ও কুফরির অন্তর্ভুক্ত। নাঊযুবিল্লাহ! একজন মুসলমান কোনোক্রমেই এসব শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহার করতে পারে না। মুসলমানকে অবশ্যই শরীয়তসম্মত শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহার করতে হবে।
উল্লেখ্য, ভাষার প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই। যে কোনো ভাষার শব্দ ও পরিভাষাই ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা কেবল দুই ধরণের শব্দ ও পরিভাষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি-
১. অন্য ধর্মের ধর্মীয় শব্দ ও পরিভাষা,
২. বাংলার উপর আগ্রাসনমূলক শব্দ ও পরিভাষা।
এই দুটি দৃষ্টিকোণকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহার করবো। সেটা সংস্কৃত ভাষা, ইংরেজি ভাষা কিংবা অন্য যেকোনো ভাষার থেকে আগত শব্দ কিংবা পরিভাষা হোক না কেন।
অশুদ্ধ ও শুদ্ধ পরিভাষা, শব্দ এবং বানানের তালিকা
ক্রম: অশুদ্ধ: (বলা/লেখা যাবে না) শুদ্ধ: (বলতে/লিখতে হবে)
৬২ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া মৃত্যুসজ্জায়, মৃত্যুমুখে পতিত
৬৩ মুখে ফুল চন্দন পড়ুক সম্মান বৃদ্ধি হোক, মুখ উজ্জল হোক
৬৪ মানুষের ভুল আছে শয়তানের নেই মানুষের কমবেশি ভুল আছে, আর শয়তানের পুরোটাই ভুল
৬৫ লক্ষী ছেলে, লক্ষী মেয়ে সোনার ছেলে, আদরের মেয়ে
৬৬ লীলা, লীলা খেলা কুদরত
৬৭ সূর্য সন্তান, সূর্য কন্যা আলোকিত আওলাদ; আলোকিত ছেলে বা মেয়ে বা বুযূর্গ
৬৮ অগ্নিকন্যা, অগ্নিপুরুষ সাহসী মেয়ে, বীর পুরুষ
৬৯ হরিলুট ব্যাপক আকারে লুটপাট
৭০ ‘যজ্ঞ’ সংক্রান্ত শব্দ;
৭১ হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি হত্যাকা-, ধ্বংস, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ধ্বংস হওয়ার উপযুক্ত
৭২ হন্যে; হন্যে হয়ে খোঁজা খোঁজার মত খুজেছি/অনেক খুজেছি/গুরুত্ব সহকারে খোঁজেছি
৭৩ রক্তের হোলি খেলা রক্তের বন্যা
৭৪ রমণী নারী, স্ত্রী, মহিলা ইত্যাদি
৭৫ জননী মা, আম্মু, আম্মা
৭৬ সৎকার গোরস্থ, কবরস্থ
৭৬ উপাসনালয় ইবাদতখানা
৭৭ মাই লর্ড সম্মানিত আদালত
৭৮ ধর্ম দ্বীন (ইসলাম উনার ক্ষেত্রে)
৭৯ অপ্সরা অপ্সরি হূর
৮০ অন্ন (না বলা উত্তম) খাদ্য
৮১ অমৃত সুধা আবে হায়াত
৮২ আশীর্বাদ দোয়া
৮৩ ইমান (ভুল বানান) ঈমান (শুদ্ধ বানান)
৮৪ রসুল (ভুল বানান) রসূল (শুদ্ধ বানান)
(চলবে)
-মুহম্মদ জিয়াউল হক্ব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)