পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরাহ করার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক-৫
, ২৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র হজ্জ করার ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার যে শর্ত সমূহ রয়েছে , তা পূর্ণ হলে জীবনে একবার পবিত্র হজ্জ করা ফরয। আর আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবিক উমরাহ করা হচ্ছে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
পবিত্র হজ্জের খুছূছিয়াত ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَىُّ الأَعْمَالِ اَفْضَلُ قَالَ اِيْـمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ جِهَادٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ ثُـمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَجٌّ مَّبْرُوْرٌ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো- কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- উত্তম আমল হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনা এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনা। এরপর তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন এরপর কোনটা ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- এরপর হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেজামন্দী মুবারক হাছিলের জন্য এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দী মুবারক হাছিলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করা। এরপর তিনি পুনরায় আবার জিজ্ঞাসিত হলেন এরপর কোনটা ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কোন আমলটি উত্তম ও আফযল। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- মাকবুল হজ্জ। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হজ্জ জীবনে একবার করা ফরয। একাধিকবার কারো সামর্থ থাকলে সে করতে পারে। তা শর্ত সাপেক্ষে পুরা হয়ে থাকে।
যেমন একটা ওয়াক্বিয়া বলা হয়। এক বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে একটা সংবাদ দেয়া হলো যে, দূরবর্তী কোন স্থানে এক নেককার পরহেযগার লোককে কিছু ডাকাত শ্রেণীর সন্ত্রাসী শ্রেণীর লোকেরা মেরে সারা রাত্র ব্যাপী আগুন দিয়ে জ্বালিয়েছে। কিন্তু যখন সকালে আগুনটা নিভে গেল তখন দেখা গেল সেই ব্যক্তি উনার শরীরের একটা পশমও আগুনে পুড়েনি, সারা রাত্র উনাকে জ্বালানোর পরেও। সুবহানাল্লাহ! তখন সংবাদ দেয়া হলো, নিশ্চয়ই লোকটা তিনবার হজ্জ করেছে। তিনি বললেন, তিনবার হজ্জ করেছেন। যারা প্রশ্নকারী তারা খোজ নিয়ে দেখলো, সত্যিই লোকটা তিনবার হজ্জ করেছেন। তখন প্রশ্নকারী বলল, এই বুযূর্গ ব্যক্তি যে তিনবার হজ্জ করেছেন, কি করে আপনি বুঝতে পারলেন? তিনি বললেন, দেখ, কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। যে একবার পবিত্র হজ্জ করলো সে ফরয আদায় করলো। যে দু’বার পবিত্র হজ্জ করলো সে খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে করজ দিলো। আর যে তিনবার পবিত্র হজ্জ করলো সে নিজের জিসিমটাকে পরকাল ও ইহকালের আগুনের জন্য হারাম করে নিলো। সুবহানাল্লাহ! সে তিনবার পবিত্র হজ্জ করার কারণে সারা রাত্র তাকে জ্বালানোর পরেও তার একটা পশমও পুড়েনি। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই খালিছ নিয়তে কেউ যদি পবিত্র হজ্জ করে, কারো যদি হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে তার জন্য এই ফযীলত মুবারক নছীব হবে।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একাধিক বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, হযরত আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত দাহ্ইয়াতুল কলবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যখন হুদাইবিয়ার সন্ধি হয়ে গেলো তখন কুরাইশ গোত্র হতে অনেকে এসে সম্মানিত ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেছেন। হযরত আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত দাহ্ইয়াতুল কলবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা আলাদাভাবে তাওবাহ করার জন্য আসলেন। এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে তাওবাহ করান, তাওবাহ করে ঈমান দিয়ে মুসলমান করে নিন। উনারা হাত বাড়িয়ে আবার পিছিয়ে নিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কি হলো? আপনারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে পিছিয়ে নিলেন কেন? উনারা আলাদাভাবে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা অতীত জীবনে অনেক গুনাহখতা করেছি। এখন আমরা তাওবা করলে, সম্মানিত ঈমান আনলে কি আমাদের গুনাহখতাগুলো ক্ষমা হবে? যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা মুবারক বলেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে তিনটি কথা দিয়ে পাঠালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উনাদেরকে বলে দিন-
اِنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَه وَأِنَّ الْـهِجْرَةَ تَـهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأِنَّ الْـحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَه.
অর্থ: নিশ্চয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম যখন কেউ গ্রহণ করে, কবুল করে, মুসলমান হয় তখন তার পিছনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং মানুষ যখন হিজরত করে তখন তার জীবনের পিছনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং যখন কেউ পবিত্র হজ্জ করে, অর্থাৎ পবিত্র হজ্জে মাবরূর করবে তখন তার জীবনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! তবে শর্ত হচ্ছে হজ্জে মাবরূর করা। (মুসলিম শরীফ)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার পরিচয় ও প্রকারভেদ (২)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘চাদর’
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)