পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার মহাসম্মানিত সুন্নতী আমল মুবারকসমূহ -১
, ০৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১০ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
বছরের বারো মাসের চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। এই চার মাসের অন্যতম হলো পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
﴿ إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ.
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি মাস হারাম অর্থাৎ সম্মানিত বা পবিত্র। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান’। (সম্মানিত পবিত্র সূরা তাওবাহ শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)।
এই চারটি মাস হলো পবিত্র যিলক্বদ শরীফ, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ, পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ এবং পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
উক্ত ১২ মাসের শেষ মাস পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ। এ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফযীলত মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বিশেষভাবে বর্ণিত আছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَٱلۡفَجۡرِ وَلَيَالٍ عَشۡرٖ
অর্থ: ফজরের শপথ এবং ১০ রাতের শপথ। ’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফজর শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১-২)
হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, ১০ রাত বলতে পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে।
পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইঙ্গিতকরে আরো পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘তারা যেন নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্বরণ করে। ’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ - ২৮)
হযরত ইমাম মুজতাহিদ, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, এই দিনগুলো হলো পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম ১০ দিন।
আর এই দিনগুলোতে বা এই মাসে যেকোনো নেক আমল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বেশি পছন্দনীয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের প্রথম ১০ দিন নেক আমল করা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে যত প্রিয়, অন্য কোনো দিনের আমল উনার কাছে তত প্রিয় নয়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করাও কি এর মতো প্রিয় নয়? তিনি বলেন, না, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জিহাদে বেরিয়ে গেছে আর কোনো কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি অর্থাৎ সে তার সমস্ত সম্পদ জিহাদে খরচ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত তার জীবনটাও দিয়ে দিয়েছে অর্থাৎ সে শহীদ হয়ে গেছে। (বুখারী শরীফ ১/৩২৯)
পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حضرت أَبِي بَكْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَي عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ النَّحْرِ قَالَ أَتَدْرُونَ أَيُّ يَوْمٍ هَذَا قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ قَالَ أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ قُلْنَا بَلَى قَالَ أَيُّ شَهْرٍ هَذَا قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ فَقَالَ أَلَيْسَ ذُو الْحَجَّةِ قُلْنَا بَلَى قَالَ أَيُّ بَلَدٍ هَذَا قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ قَالَ أَلَيْسَتْ بِالْبَلْدَةِ الْحَرَامِ قُلْنَا بَلَى قَالَ فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا إِلَى يَوْمِ تَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ قَالُوا نَعَمْ قَالَ اللَّهُمَّ اشْهَدْ فَلْيُبَلِّغْ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى مِنْ سَامِعٍ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ .
অর্থ : হযরত আবূ বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র কুরবানীর দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে খুৎবা মুবারক দিলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা কি জানেন আজ কোন দিন? আমরা বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই ভালো জানেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ রইলেন। আমরা ধারণা করলাম সম্ভবতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এর নাম পাল্টিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার ইরশাদ মুবারক করলেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রাসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই ভালো জানেন। তিনি চুপ থাকলেন। আমরা মনে করতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম পাল্টিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটা কি যিলহজ্জ শরীফ মাস নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই অধিক জানেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম তিনি চুপ থাকলেন। ফলে আমরা ভাবতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম বদলিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটা কি সম্মানিত শহর নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই।
(তোমরা জেনে রাখো,) তোমাদের জান এবং মাল তোমাদের জন্য তোমাদের মহান রব তায়ালা উনার সঙ্গে সাক্ষাত মুবারকের দিন পর্যন্ত যেমন সম্মানিত; তেমনি সম্মান রয়েছে তোমাদের এ দিনের, তোমাদের এ মাসের এবং তোমাদের এ শহরের। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে আরো ইরশাদ মুবারক করলেন, শুনুন! আমি কি আপনাদের নিকট বিষয়টি পৌঁছাতে পেরেছি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, হ্যাঁ ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
অতঃপর তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে (আমার দাওয়াত মুবারক) পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, যাদের কাছে পৌঁছানো হবে তাদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি এমন থাকে, যে শ্রবণকারীর চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী। তোমরা আমার পরে পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না। (বুখারী শরীফ)
সুতরাং, এ মাসের ফযীলত মুবারক সীমাহীন। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ ইমরান হুসাইন শাহী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)