পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিমুখতা ও ভোগবাদী অশ্লীল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নারী নির্যাতনের মূল কারণ (৪) ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসা দিবস
, ২১শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ৩০শে মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
(গত ১৮ রজবুল হারাম শরীফের পর)
নারী নির্যাতনের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, বাধহীন উদ্দাম পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতি ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রচলন। ভ্যালেন্টাইনস ডে’র খপ্পরে পড়ে দেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, পুরুষ-মহিলা নারীটিজিং, সম্ভ্রমহরণ, পরকিয়া, খুন ইত্যাদি হাজারো অসামাজিক ও গর্হিত অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারী ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। যেমন আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারী তাদের কথিত দিবস উপলক্ষে মাতামাতি করবে। নাঊযুবিল্লাহ। ভ্যালেন্টাইন ডে মূলত খ্রিষ্টানদের থেকে উদ্ভূত একটি দিবস। ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস খ্রিষ্টান পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স-এর স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করে। খৃস্টানজগতে পাদ্রী ও তাদের সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। ভালবাসা দিবসের প্রচলনে খ্রিষ্টানদের একাধিক মত রয়েছে। এসব মতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, ভালবাসা দিবস খ্রিষ্টান পাদ্রীকে স্মরণের জন্য খ্রিষ্টানদের প্রবর্তিত একটি দিবস। যা মুসলমানদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা সম্পূর্ণ হারাম নিষিদ্ধ।
প্রথমঃ রোমের শাসক দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলে সেন্ট ভ্যালেনটাইন নামে এক খৃষ্টধর্ম প্রচারক ছিলো। আর রোম শাসক ছিলো বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। ঐ শাসকের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। বারবার খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আদেশ প্রত্যাখ্যান করায় ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে শাসক দ্বিতীয় ক্লডিয়াস পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদ- প্রদান করে।
দ্বিতীয়ঃ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় পাদ্রী ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা শাসকের কানে গেলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়।
তৃতীয়ঃ খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, ২৬৯ খৃষ্টাব্দের কথা। সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাষু রোমান শাসক ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। শাসক লক্ষ্য করলো যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে সে যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক পাদ্রীও শাসকের এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেনি। প্রথমে সে সেন্ট মারিয়াসকে ভালবেসে বিয়ের মাধ্যমে শাসকের আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকে। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতো। কিন্তু এ বিষয়টি এক সময়ে শাসক ক্লডিয়াসের কানে গেলে সে পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে শাসকের সামনে হাজির করলে সে তাকে হত্যার আদেশ দেয়।
চতুর্থঃ আরেকটি খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা খ্রিষ্টধর্ম বিরোধী একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে স¤পৃক্ত হয়ে যায়।
পঞ্চমঃ অন্য আরেকটি মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, দেবী জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের সিøপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা সিøপের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হত এবং ভালবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে গড়াতো।
মূলতঃ খ্রিষ্টান পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুকে স্মরণ বা রোমান দেবতাদের রাণী জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রবর্তন হয়। ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস এই ১৪ ফেব্রুয়ারীকে খ্রিষ্টান পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স-এর স্মরণে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করে। এই দিবসের সাথে মুসলমানরা কোনভাবেই জড়িত হতে পারেনা। (চলবে)
-উম্মু সাদিন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসান মুবারক
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)